facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

দেশ জেনারেলের শেয়ার বেচে কেটে পরছে সিন্ডিকেট


৩১ মার্চ ২০২১ বুধবার, ১০:১৯  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


দেশ জেনারেলের শেয়ার বেচে কেটে পরছে সিন্ডিকেট

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে দুর্বল দেশ জেনারেল ইন্সুরেন্সের শেয়ার অতিমূল্যায়িত  দরে ছেড়ে দিয়ে কেটে পরছেন নতুন শেয়ারের সিন্ডিকেট ।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র জানায়, ৩১ মার্চ বুধবার দেশ জেনারেল ইন্সুরেন্সের ২৫ হাজারের উপরে শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে।  সর্বোচ্চ দর বেড়ে এ শেয়ার ২২.৫০ টাকায় লেনদেন হয়।  এর আগে বাজারে যেসব নতুন শেয়ার লেনদেন হয়েছে এর মধ্যে দেশ জেনারেল ইন্সুরেন্সের শেয়ারের মতো দ্বিতীয় দিনে এত বেশি লেনদেন হয়নি। 

নতুন শেয়ারের সিন্ডিকেট এবার কৌশল হিসেবে দেশ জেনারেল ইন্সুরেন্সের শেয়ারের একদিকে দাম বাড়াচ্ছে অন্যদিকে তাদের হাতে থাকা শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে বেরিয়ে যাচ্ছে।

দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের প্রসপেক্টাস সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ২৪ কোটি টাকা। যার অধিকাংশ বোনাস ও রাইট শেয়ারের মাধ্যমে বাড়ানো হয়। পরিশোধিত মূলধনের মাত্র ৬ কোটি টাকা নগদ। আর বাকি ১৮ কোটি টাকা ক্যাপিটাল রেইজ করেছে রাইট ও বোনাস শেয়ার দিয়ে। তাই কোম্পানিটির ক্যাপিটাল রেইজ করার ধরন সন্দেহজনক।২০০০ সালে যাত্রা শুরু করা কোম্পানিটি হঠাৎ করে ২০১৩ সাল থেকে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে থাকে। প্রসপেক্টাসের তথ্য বিশ্লেষন করে দেখা যায়, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৫ বছরে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হয় ৭৫ শতাংশ। শেয়ারবাজার থেকে সাজানো আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে অর্থ উত্তোলনের জন্যই কোম্পানিটি এই কাজ করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া বোনাস শেয়ার ইস্যু ছাড়াও কোম্পানিটি প্লেসমেন্ট শেয়ারের মাধ্যমেও বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতিয়ে নেবে। ৯৫ হাজারের উপরে কোম্পানিটির প্লেসমেন্ট শেয়ার রয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটির সম্পদ হিসেবেও অতিরঞ্জিত মূল্য দেখানো হয়েছে। সম্পদ বিবরণীতে ডেকোরেশন বাবদ ব্যয় দেখানো হয় ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৯ হাজার ৩৮৮ টাকা। যা অবিশ্বাস্য। মোটার সাইকেল প্রায় ৪ কোটি টাকার দেখানো হয়। এরকম বেশ কয়েকটি অতিরঞ্জিত সম্পদের মূল্য দেখা হয়েছে। কোম্পানিটির টার্নওভার ২০১৮ সালে দেখানো হয় ২০.৩৩ বিলিয়ন টাকা যা একলাফে ২০১৯ সালে বেড়ে হয় ৩০.৮১ বিলিয়ন টাকা। অথচ এর আগে ২০১৫ সালে ২৪.১০ বিলিয়ন টাকা ২০১৬ সালে ২৭.৬৩ বিলিয়ন টাকা ছিল। অন্যদিকে শেয়ার প্রতি আয়ের দিক দিয়েও কোম্পানিটি দুর্বল মৌল ভিত্তির।সর্বশেষ ২০১৯ সালে ইপিএস ছিল মাত্র ৮১ পয়সা।

 

এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদনের আগে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ১২ কোটি টাকা অবৈধ ব্যয় করার অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নিয়েছিল আইডিআরএ।

 

ব্যবস্থাপনার নামে ১২ কোটি টাকা অবৈধ ব্যয় করেছিল বেসকারি খাতের বিমা কোম্পানি দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছিল ২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নিয়ম অনুসারে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাপনা ব্যয় ১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা করতে পারবে কোম্পানিটি।

 

সেই হিসাবে ওই সাত বছরে ১২ কোটি টাকা অবৈধ ব্যয় করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যা বিমা আইন-২০১০ এর ৬৩ ধারা ও বিমা বিধিমালা-১৯৫৮ এর লঙ্ঘন।

 

অবৈধ ব্যয়ের মধ্যে ২০০৯ সালে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ১ কোটি ০২ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং ২০১৫ সালে ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বেশি ব্যয় দেখিয়েছে।

 

অবৈধ ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের পাশাপাশি কোম্পানিটির সর্বশেষ তিন বছরের আয়, ব্যয় ও সম্পদের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে বিশেষ অডিট ফার্ম (বিশেষ নিরীক্ষাপ্রতিষ্ঠান) মসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানিকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল আইডিআরএ।

 

সূত্র জানায়, বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দেশ জেনারেলের ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের বিনিয়োগ, ঋণ, অগ্রিম, স্থায়ী সম্পদ ও অন্যান্য সম্পদ, গাড়ি, জমি ও বিল্ডিং, নগদ টাকা, ট্যাক্স ও ভ্যাট, চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা কী পরিমাণ সম্মানি ও অন্যান্য সুবিধা নিয়েছেন তার পর্যালোচনাসহ কোম্পানির এ তিন বছরের আয়, ব্যয় ও সম্পদের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে।

 

 এ বিষয়ে কোম্পানিটির ডেপুটি ম্যানেজার সালাউদ্দিন মোনাব্বের বলেন, আমি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারব না। কোম্পানির ঊর্ধ্বতনরা বক্তব্য জানালে আমি আপনাকে বক্তব্য দিতে পারব।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: