facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪

Walton

তেল বিক্রিতে ১২৬৩ কোটি টাকা মুনাফা বিপিসির


১০ আগস্ট ২০২২ বুধবার, ১০:৫৩  এএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


তেল বিক্রিতে ১২৬৩ কোটি টাকা মুনাফা বিপিসির

সরকারি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মে পর্যন্ত তেল বিক্রি করে লোকসান দেয়নি। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল ৪৮ হাজার ১২২ কোটি ১১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে তেল বিক্রি করে বিপিসি নিট মুনাফা করেছে এক হাজার ২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

গত ৯ জুন অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২’ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বিপিসির লাভ লোকসানের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে বিপিসি তেল বিক্রি করে মুনাফা করা শুরু করে। সে বছর প্রতিষ্ঠানটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১২৬ কোটি আট লাখ। এর পরের অর্থবছর ২০১৫-২০১৬ তে মুনাফা করেছে ৯ হাজার ৪০ কোটি ৭ লাখ টাকা। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মুনাফা হয় ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৭-২০১৮ তে ৫ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৮-২০১৯ এ ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ২০১৯-২০২০ এ ৫ হাজার ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০২০-২০২১ মুনাফা করেছে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মে’২২ পর্যন্ত বিপিসির মুনাফা হয় ১ হাজার ২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে চলতি বছর মে পর্যন্ত সময়ে বিপিসি জ্বালানি তেল বিক্রি করে লাভবান হয়েছে। এ সময় বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সমন্বয় করা হয়নি।

সূত্র জানায়, মুনাফার মূল কারণ ছিল ২০১৩ সালে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের মূল্য ৯৪ ডলার থেকে কমতে কমতে ২০১৬ সালে ৪০ ডলারের নিচে নেমে আসে। কিন্তু বিপিসির পক্ষ থেকে তারপরও দাম কমানো হয়নি। কেবল ২০১৬ সালের এপ্রিলে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৩ টাকা কমানো হয়েছিল। তবুও কম দামে তেল কিনে তা দেশের বাজারে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রির কারণে বিপিসি প্রতি বছরই হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এর ফলে আট বছরে বাজেট থেকে বিপিসিকে তেল কেনা বাবদ কোনো ধরনের ভর্তুকিও দিতে হয়নি। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটেও তেল কেনা বাবদ বিপিসির নামে কোনো ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়নি।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, বিপিসি গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসে ৮ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের ২২ মে পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মুনাফায় ছিল। অর্থাৎ ২০২১-২০২২ অর্থবছরের মে (২০২২) পর্যন্ত বিপিসি মুনাফা করেছে এক হাজার ২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, গত আট বছরে বিপিসির প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা মুনাফার অর্থ কোথায় গেল সেটি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, মুনাফার একটি অংশ (প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা) এক আইনি ক্ষমতাবলে অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়ে গেছে এবং মুনাফার আরও একটি অংশ বিপিসির কিছু ‘বিলাসী’ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু তারপরও মুনাফার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিপিসির হাতে থাকার কথা।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিপিসি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এই সংস্থার কাছে এখনো অনেক টাকা রয়েছে। এই টাকা তারা ব্যাংকে ডিপোজিট করেছে বলে তথ্য আছে। হঠাৎ করে এত বেশি তেলের দাম বাড়ানো হবে সে বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। মতামত নেওয়া হলে অবশ্যই এত বেশি দাম বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হতো না। এই দাম ধাপে ধাপেও বাড়ানো যেত।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করলেও দেশে গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন তেল ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে (বৃদ্ধির হার ৪২.৫ শতাংশ)। একইভাবে অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা (৫১.৬৮ শতাংশ) এবং পেট্রোল লিটারে ৪৪ টাকা বৃদ্ধি করে ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ করা হয়েছে (৫১.১৬ শতাংশ)। সার্বিকভাবে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছর ৪ নভেম্বর ডিজেলের লিটার ৬৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছিল।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: