facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

টানা মন্দায় যেসব কোম্পানির দরপতন বেশি


২৪ অক্টোবর ২০২১ রবিবার, ০২:১৫  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


টানা মন্দায় যেসব কোম্পানির দরপতন বেশি

টানা পাঁচ সপ্তাহ ধরে চলা মন্দায় পুঁজিবাজারে বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ার দরে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। বিপরীতে স্বল্প মূলধনি ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ব্যাপকভাবে। বিমা খাতেরও বেশ কিছু কোম্পানি উল্লেখযোগ্য হারে দর হারিয়েছে।

গত জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে নানা গুজব ও গুঞ্জনে স্বল্প মূলধনি ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কয়েকটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করার পর দু-একটি উৎপাদনে এসেছে, কয়েকটি উৎপাদন শুরুর কাছাকাছি অবস্থানে আছে।

কিন্তু এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যাচাই-বাছাই ছাড়াই লোকসানি প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার দর টানা বাড়তে থাকার মধ্যে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক এমনকি বিএসইসির কমিশনারদের কেউ কেউ সতর্ক করেছেন। কিন্তু কোনো কথাই যেন শুনতে চাইছিলেন না বিনিয়োগকারীরা।

লোকসানি কোম্পানির পাশাপাশি স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর পুরোনো একটি আলোচনা আবার সামনে আসার পর শুরু হয় আরেক হুলুস্থুল। এসব কোম্পানির মূলধন বাড়াতে হলে শেয়ার ইস্যু করতে হবে- এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ার পর হুমড়ি খেয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীদের একাংশ। কোম্পানির আয়, মুনাফা, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী- এসব বিষয় যাচাই-বাছাইয়ের চেয়ে কেবল শেয়ার সংখ্যা কম- এই বিবেচনাতেই ক্রমাগতভাবে বেশি দামে শেয়ার কিনে গেছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারী।

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বাজার সংশোধনে মূলত এই দুই ধরনের কোম্পানির বিনিয়োগকারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপে হাহাকার করছেন মূলত তারাই।

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ সপ্তাহে সূচকের পতন এমন কিছু হয়নি। বরং এবারই দর সংশোধনে সূচক বেড়ে গিয়ে বেশির ভাগ শেয়ারের দরপতনের প্রবণতা দেখা গেছে। এর কারণ, বড় মূলধনি কয়েকটি কোম্পানির উত্থান।

১২ সেপ্টেম্বর লেনদেন শুরুর দিন সূচক ছিল ৭ হাজার ২৫৮ পয়েন্ট। বর্তমানে তা অবস্থান করছে ৭ হাজার ৪৬ পয়েন্টে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবারের আগের ৭ দিনই সূচক পড়েছে ৩৪৭ পয়েন্ট।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান এই বিষয়টি থেকে শিক্ষা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেসব কোম্পানি ভালো রিটার্ন দিচ্ছে, সেগুলোতে আগ্রহী হওয়া উচিত। তাহলে যখন পুঁজিবাজারে সূচকের পতন হবে বা মন্দা দেখা যাবে, তখন লোকসান না-ও হতে পারে। হলেও সেটি দ্রুত উঠে আসবে।’

তবে দরপতন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ারও দরকার নেই বলে মনে করেন তিনি। রকিবুর রহমান বলেন, ‘শেয়ারের দাম বাড়বে-কমবে, এটা স্বাভাবিক বিষয়। খারাপ বা স্বল্প মূলধনি কোম্পানি তো পুঁজিবাজারের বাইরের কোনো কোম্পানি না।’

স্বল্প মূলধনিতে দরপতন যে হারে

দেশ গার্মেন্টসের দর ২৪২ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৬১ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ৩৩.১৪ শতাংশ।

এই সময়ে প্রকৌশল খাতের স্বল্প মূলধনি মুন্নু অ্যাগ্রোর শেয়ার দর ৮৬১ টাকা থেকে নেমেছে ৫৯৯ টাকা ৩০ পয়সায়। কমেছে ৩০.৩৯ শতাংশ।

একই গ্রুপের আরেক কোম্পানি মুন্নু সিরামিকের দর ১৭৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১২৩ টাকা ৭০ পয়সা। কমেছে ৩০.৪৬ শতাংশ।

খাদ্য খাতে অ্যাপেক্স ফুডের শেয়ার দর এই সময়ে ১৮৭ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৩২ টাকা ৬০ পয়সা। কমেছে ২৯.৩১ শতাংশ।

চামড়া খাতে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের দর এই সময়ে ৭৯ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৫৭ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২৮.১৪ শতাংশ।

২০১৯ সালের পর আর হিসাব না দেয়া লিব্রা ইনফিউশনের শেয়ার দর এই সময়ে ১ হাজার ৭৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৭৭৮ টাকা ২০ পয়সায় নেমে এসেছে। কমেছে ২৭.৫২ শতাংশ।

আনলিমা ইয়ার্নের শেয়ারদর গত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাড়তে থাকে। ৩১ টাকা থেকে শেয়ারদর গত ২২ আগস্ট উঠে যায় ৫২ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর থেকে শুরু হয় পতন। এই কোম্পানিটির বর্তমান দর ৩৮ টাকা ৭০ পয়সা। সংশোধন শুরুর পর থেকে কমেছে ২৬.৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কমেছে ১৬.০৫ শতাংশ।

প্রকৌশল খাতে রংপুর ফাউন্ড্রির শেয়ার দর এই সময়ে ১৮৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৪১ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ২৫.৪৩ শতাংশ।

খাদ্য খাতে বঙ্গজের শেয়ার দর এই সময়ে ১৫৯ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১১৯ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২৫.৩১ শতাংশ।

আমান কটনের শেয়ার দর এই সময়ে ৪৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩৫ টাকা ১০ পয়সা। কমেছে ২১.৮২ শতাংশ।

প্রকৌশল খাতে কিউ অ্যান্ড কিউর শেয়ার দর এই সময়ে ৩৭০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৯২ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২১.১৭ শতাংশ।

ফুওয়াং ফুডের শেয়ার দর এই সময়ে ২২ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। কমেছে ২১.১৭ শতাংশ।

চামড়া খাতের অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের শেয়ার দর এই সময়ে ৩৬৬ টাকা থেকে কমে হয়েছে ২৮৯ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ২১.১২ শতাংশ।

অ্যাপেক্স স্পিনিংয়ের শেয়ার দর এই সময়ে ১৫৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১২৪ টাকা ৪০ পয়সা। কমেছে ২০.৪৬ শতাংশ।

রহিম টেক্সটাইলের দর ৩২৭ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৬০ টাকা ৯০ পয়সা। কমেছে ২০.৪০ শতাংশ।

এএমসিএল প্রাণের শেয়ার দর এই সময়ে ৩০৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৪৬ টাকা। কমেছে ১৯.৯৪ শতাংশ।

ফাইন ফুডের শেয়ার দর এই সময়ে ৫৯ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৪৭ টাকা ৭০ পয়সা। কমেছে ১৯.৬৯ শতাংশ।

রহিমা ফুডের শেয়ার দর এই সময়ে ৩৬৪ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৯৪ টাকা ৪০ পয়সা। কমেছে ১৯.১৬ শতাংশ।

পাট খাতের সোনালী আঁশের শেয়ার দর এই সময়ে ৫৩৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৪৪০ টাকা ৭০ পয়সা। কমেছে ১৭.৮৭ শতাংশ।

বস্ত্র খাতের তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের দর ১৮৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৫৩ টাকা ৬০ পয়সা। কমেছে ১৭.২৮ শতাংশ।

মুন্নু ফেব্রিক্সের দর ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৬ টাকা ৪০ পয়সা। কমেছে ১৬.১৯ শতাংশ।

বড় মূলধনি ছয়টিরও দরপতন

ফুওয়াং সিরামিকের দর ২৩ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৭ টাকা ৯০ পয়সা। কমেছে ২৫.১০ শতাংশ।

স্বল্প মূলধনি নয়, লোকসানেও নয়, এমন কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে এমএল ডায়িং। কোম্পানিটির দর এই সময়ে ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৬ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২৪.০৫ শতাংশ।

বড় মূলধনির বসুন্ধরা পেপার মিলসও এই সময়ে বেশ ভালো দর হারিয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ৪৫ টাকা ১০ পয়সায়। কমেছে ১৫.৮৫ শতাংশ।

বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্টও এই সময়ে বেশ ভালো দর হারিয়েছে। শেয়ার দর ৩৭৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে এসেছে ৩১৯ টাকা ৬০ পয়সায়। কমেছে ১৪.৩৩ শতাংশ।

সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দরের পতন হয়েছে অন্য ইস্যুতে। ২০১৯ সালের ঘোষণা করা নগদ লভ্যাংশ বিতরণ না করায় কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

এমনিতে সংশোধনে থাকার মধ্যে এ ঘটনায় কোম্পানিটি দর হারিয়েছে ৩১.৩৯ শতাংশ। শেয়ার দর ২৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৭ টাকা ৭০ পয়সা।

এক বছর পর লভ্যাংশ ঘোষণার পর গত মে মাস থেকে কেয়া কসমেটিকসের শেয়ার দরে উল্লম্ফন দেখা দেয়। ৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে ১১ টাকা ২০ পয়সা হয়ে যায় আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে। এরপর শুরু হয় দরপতন। এর মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সংশোধনে শেয়ার দর কমেছে ২২.৬৮ শতাংশ। শেয়ার দর ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা।

প্রকৌশল খাত

মালিকানা বদলের গুঞ্জনে গত এপ্রিলে ৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে অ্যাপোলো ইস্পাতের শেয়ার দর আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৪ টাকা ৮০ পয়সায় পৌঁছে যায়। কিন্তু সেই গুঞ্জন সত্য নয় বলে একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে শুরু হয় দরপতন। সেই কোম্পানিটির শেয়ার দর এখন কমতে কমতে নেমেছে ৯ টাকা ৮০ পয়সায়। কমেছে ৩৩.৭৮ শতাংশ।

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ২২.২২ শতাংশ।

বন্ধ থাকা কোম্পানির উৎপাদন চালু হবে, এমন ঘোষণায় উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে বিপাকে পড়েছেন আজিজ পাইপের শেয়ারধারীরা।

গত ২৯ জুলাই শেয়ার দর ছিল ১০০ টাকা ১০ পয়সা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর উঠে যায় ১৬৯ টাকায়। সেখান থেকে পড়তে পড়তে এখন দাম দাঁড়িয়েছে ১১৩ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ৩২.৬৬ শতাংশ।

একই চিত্র আরএসআরএম স্টিলের ক্ষেত্রে। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর উৎপাদন চালুর প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে কোম্পানিটির শেয়ার দর গত ২৭ জুলাই ২১ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬ টাকা ৮০ পয়সা হয়ে যায় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ১২ সেপ্টেম্বর দর সংশোধন শুরুর আগের দিন দাম ছিল ৩৫ টাকা। এর মধ্যে উৎপাদন চালুর ঘোষণা আসে। কিন্তু এরপর দাম টানা পড়তে থাকে। এই কয়দিনে শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা ২০ পয়সা বা ২৯.১৪ শতাংশ কমেছে দাম। গত বৃহস্পতিবার দাম দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সা।

করোনার কারণে ব্যবসা প্রায় হারিয়ে ফেলা ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের শেয়ারদর গত মে মাসের শুরু থেকে টানা বাড়ছিল। সে সময় শেয়ারদর ছিল ৮ টাকা ৭০ পয়সা। আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে তা গিয়ে ঠেকে ১৭ টাকা ৫০ পয়সায়। এরপর থেকে শুরু হয় সংশোধন। শেয়ারদর কমতে কমতে এখন নেমেছে ১২ টাকা ৬০ পয়সায়।

সংশোধন শুরু হওয়ার পর থেকে কমেছে ৪ টাকা ৯০ পয়সা বা ২৮ শতাংশ। এর মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বরের দাম থেকে কমেছে ২০.৭৫ শতাংশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রেনউইক যগেশ্বরের শেয়ার দর ১২ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৩৪১ টাকা থেকে নেমে এসেছে ৯৯৮ টাকা ৯০ পয়সায়। কমেছে ২৫.৫২ শতাংশ।

আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ন্যাশনাল টিউবের দর এই সময়ে ১২৭ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৯৬ টাকা। কমেছে ২৪.৮৮ শতাংশ।

আরেক রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ইস্টার্ন কেব্‌লসের শেয়ার দর এই সময়ে ১৭০ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১২৮ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২৪.৭৬ শতাংশ।

লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এটলাস বাংলাদেশের শেয়ার দর এই সময়ে ১৩৫ টাকা ৮০ পয়সা থেকে হয়েছে ১০৯ টাকা। কমেছে ১৯.৭৩ শতাংশ।

খাদ্য খাত

এই খাতের মধ্যে সরকারি দুই চিনিকলের শেয়ারেও ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এর মধ্যে বেশি কমেছে শ্যামপুর সুগারের শেয়ার দর, যেটির দাম সংশোধন শুরুর আগে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল।

শ্যামপুর সুগারের শেয়ার দর গত ৫ আগস্টও ছিল ৬২ টাকা ২০ পয়সা। আকাশচুম্বী লোকসানে জর্জর কোম্পানিটির এই দরই ছিল অস্বাভাবিক। তারপরেও সেখান থেকে এক লাফে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উঠে যায় ১৪১ টাকা ২০ পয়সায়। এই কোম্পানির দর সংশোধন পুঁজিবাজারে দর সংশোধন শুরুর এক সপ্তাহ আগেই শুরু হয়। এই কয়দিনে শেয়ার দর কমেছে ৪০.৭২ শতাংশ। শেয়ার দর ১৪১ টাকা ২০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ৮৩ টাকা ৭০ পয়সায়।

এর মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ সপ্তাহে কমেছে ৩১.৯৫ শতাংশ।

একই চিত্র জিলবাংলা সুগারের ক্ষেত্রে। গত ১৭ জুন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৮৬ টাকা ১০ পয়সা। এই দরই অস্বাভাবিক হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে দর বেড়ে হয়ে যায় ২০৯ টাকা। সর্বোচ্চ এই অবস্থান থেকে কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত দর হারিয়েছে ৩৮.২৭ শতাংশ।

এর মধ্যে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর হারিয়েছে ২১.৫৮ শতাংশ।

বিচ হ্যাচারির দর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেমে কমেছে ২৭.৩০ শতাংশ। এক বছরের বেশি উৎপাদন বন্ধ রাখার পর সম্প্রতি আবার চালু হওয়াকে কেন্দ্র করে এই কোম্পানির শেয়ার দরে উত্থান হয়েছিল। এই সময়ে দাম কমেছে ৭ টাকা ৪০ পয়সা বা ২৭.৩০ শতাংশ। বর্তমান দাম ১৯ টাকা ৭০ পয়সা।

বছরের পর বছর লভ্যাংশ না দিলেও প্রায় প্রতিবছর উত্থান হওয়া মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও মেঘনা পেটও দর হারিয়েছে এই সময়ে।

এর মধ্যে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের শেয়ার দর ২৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ১৬ টাকা ৭০ পয়সায়। কমেছে ২৭.৭০ শতাংশ।

মেঘনা পেটের দর ২৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৩ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২১.৩৫ শতাংশ।

জেমিনি সি ফুডের শেয়ার দর এই সময়ে ২৩৩ টাকা ৭০ পয়সা থেমে নেমে এসেছে ১৮৬ টাকায়। কমেছে ২০.৪১ শতাংশ।

গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রোর শেয়ার দর এই সমেয় ২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৭ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ১৭.৯৭ শতাংশ।

চামড়া ও সিরামিক

লোকসানি স্বল্প মূলধনি কোম্পানি সমতা লেদার ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ২৭ জুন নেমে আসে ৬৯ টাকা ৭০ পয়সা। কিন্তু এরপর থেকে টানা উত্থান শুরু হয়। দর সংশোধন শুরুর আগে ৯ সেপ্টেম্বর দর উঠে যায় ১২৮ টাকায়। দাম কমতে কমতে এখন নেমে এসেছে ৭৭ টাকা ২০ পয়সায়। কমেছে ৩৯.৬৮ শতাংশ।

স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ার দর এই সময়ে ২৬২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে হয়েছে ১৮১ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ৩০.৯৭ শতাংশ।

বিবিধ খাত

এই খাতের তিন লোকসানি কোম্পানি ব্যাপকভাবে দর হারিয়েছে। এর মধ্যে সাভার রিফ্র্যাকটরিজের শেয়ার দর এই সময়ে ২৯৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২০৭ টাকা ৭০ পয়সা। কমেছে ৩০.৭৪ শতাংশ।

মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর এই সময়ে ৪২ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩১ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ২৪.৬৪ শতাংশ।

জি কিউ বলপেনের শেয়ার দর এই সময়ে ১৪১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। কমেছে ২৩.৩২ শতাংশ।

আর্থিক খাত

এই খাতের লোকসানি যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ক্রমাগত বেড়ে চলেছিল নানা গুঞ্জনে, তার সবগুলোর ব্যাপক দরপতন হয়েছে এই সময়ে।

ফারইস্ট ফাইন্যান্সের শেয়ার দর এই সময়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬ টাকা ১০ পয়সা। কমেছে ৩৭.৭৫ শতাংশ।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ফাইন্যান্সের শেয়ার দর এই সময়ে ১০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা। কমেছে ২৭.১৮ শতাংশ।

ফাস ফাইন্যান্সের শেয়ার দর এই সময়ে ১০ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ৯০ পয়সা। কমেছে ২৬.৮৫ শতাংশ।

বিআইএফসির শেয়ার দর এই সময়ে ৮ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ২৫ শতাংশ।

ফার্স্ট ফাইন্যান্সের শেয়ার দর এই সময়ে ৮ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ১০ পয়সা। কমেছে ২০.২২ শতাংশ।

বস্ত্র খাত

এই খাতের বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর গত মে মাস থেকেই অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলছিল। সেপ্টেম্বর থেকে টানা সংশোধনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এই খাতের অন্তত ১২টি কোম্পানির শেয়ারধারীরা।

মিথুন নিটিংয়ের শেয়ার দর এই সময়ে ২২ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৪ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ৩৫.৪৫ শতাংশ।

রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার দর এই সময়ে ১৬ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১১ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ২৯.৩৭ শতাংশ।

বন্ধ থাকা তুংহাই স্পিনিংয়ের শেয়ার দর গত এপ্রিলের শেষেও ছিল ৩ টাকার নিচে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে তা উঠে যায় ৯ টাকায়। ১৬ আগস্ট থেকেই এর দরপতন শুরু। এই সময়ে কমেছে ২৬.৬৬ শতাংশ। বর্তমান দাম ৬ টাকা ৬০ পয়সা।

বন্ধ থাকা স্টাইলক্রাফটে উৎপাদন চালু হবে, এমন ঘোষণায় লাফ দেয়ার পর উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে লোকসানে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। বাজার সংশোধনের এই সময়ে শেয়ার মূল্য ১৯৭ টাকা থেকে নেমে এসেছে ১৪৬ টাকা ৬০ পয়সায়। কমেছে ২৫.৫৮ শতাংশ।

নুরানী টেক্সটাইলের শেয়ার দর এই সময়ে ১০ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ৯০ পয়সা। কমেছে ২৩.৩০ শতাংশ।

জাহিন টেক্সটাইলের শেয়ার দর এই সময়ে ১০ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭ টাকা ৮০ পয়সা। কমেছে ২২.৭৭ শতাংশ।

রিংসাইন টেক্সটাইল মিলসের শেয়ার দর এই সময়ে ১৪ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১১ টাকা পয়সা। কমেছে ২১.৯৮ শতাংশ।

আরএন স্পিনিংয়ের শেয়ার দর এই সময়ে ৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সা। কমেছে ২১.৫১ শতাংশ।

জাহিন স্পিনিংয়ের শেয়ার দর এই সময়ে ১১ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৮ টাকা ৯০ পয়সা। কমেছে ১৯.৮১ শতাংশ।

তাল্লু স্পিনিংয়ের শেয়ার দর এই সময়ে ১৪ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১১ টাকা ৪০ পয়সা। কমেছে ১৯.৭১ শতাংশ।

সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ার দর এই সময়ে ২৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২১ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ১৯.০১ শতাংশ।

পাট খাত

এই খাতের তিনটি কোম্পানিই ব্যাপকভাবে দর হারিয়েছে। এর মধ্যে লোকসানি দুটির মধ্যে নর্দার্ন জুটের শেয়ার দর ৪০৬ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৮৬ টাকা। কমেছে ২৯.৫৭ শতাংশ।

জুট স্পিনার্সের দর ১৮০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ১২৮ টাকায়। কমেছে ২৯.১৬ শতাংশ।

কাগজ খাত

এই খাতের দুই লোকসানি কোম্পানি হাক্কানি পাল্পের শেয়ার দর ৯১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬৪ টাকা ৫০ পয়সা। কমেছে ২৯.৪৩ শতাংশ।

কেপিপিএলের দর ১৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা। কমেছে ১৭.৯০ শতাংশ।

বিমায় দরপতন কেমন

গত জুনের মাঝামাঝি থেকে সংশোধনে থাকা বিমা খাত সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আরও দর হারিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, ১৯.২৪ শতাংশ। ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ১৯.০৯ শতাংশ।

রূপালী লাইফ ১৭.৭৩ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স ১৭.২৮, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ১৫.৯৯, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের দর ১৫.৮৬, প্রোগ্রেসিভ লাইফের দর ১৫.৬৯, পদ্মা লাইফ ১৫.৮৪ শতাংশ দর হারিয়েছে।

এ ছাড়া পূরবী জেনারেল, সোনার বাংলা, প্রগতি লাইফ, সিটি জেনারেল, পাইওনিয়ার, নর্দার্ন, পিপলস, সানলাইফের দর কমেছে ১৪ শতাংশের বেশি।

ইসলামী, রিপাবলিক, ফিনিক্স, রিলায়েন্স ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ১৩ শতাংশের বেশি।

মেঘনা লাইফের দর এই সময়ে ২৪.৭১ শতাংশ কমলেও এটির লভ্যাংশের ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয় হয়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: