facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

কোমল পানীয়র বাজারে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যাম্পা কোলা


২৪ মার্চ ২০২৩ শুক্রবার, ০৭:০২  পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

শেয়ার বিজনেস24.কম


কোমল পানীয়র বাজারে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যাম্পা কোলা

কোমল পানীয় কে না পছন্দ করে। এই তীব্র গরমে ফ্রিজের ঠান্ডা কোমল পানীয় প্রাণ জুড়ায়। তা ছাড়া খাবারের পর একটু কোমল পানীয় হলে মন্দ হয় না, এটিও একটি স্বাভাবিক প্রবণতা। কোমল পানীয় হিসেবে কোকাকোলা ও পেপসির জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এবারে কোমল পানীয়র বাজারে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এসেছে ক্যাম্পা কোলা। তাই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য কোকাকোলা ও পেপসি তাদের পণ্যের দাম কমিয়েছে।

ভারতে একসময় জনপ্রিয় কোমল পানীয় ছিল ক্যাম্পা কোলা। অনেক ভারতীয়র শৈশবের আবেগ জড়িয়ে আছে ক্যাম্পা কোলার সঙ্গে। গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে ভারতীয় বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল এই পানীয়র। কিন্তু পরে অন্যান্য বিদেশি পানীয়র সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ক্যাম্পা কোলা।

ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স শিল্প গ্রুপ নতুনভাবে বাজারজাত করছে ৫০ বছরের পুরোনো এই ক্যাম্পা কোলা। আগে এটির মালিকানায় ছিল পিউর ড্রিংকস নামের একটি কোম্পানি। গত বছরের আগস্ট মাসে ২২ কোটি রুপিতে ব্র্যান্ডটি কিনে নেয় রিলায়েন্স গ্রুপ।

নতুনভাবে বাজারে এসেই দামে ব্যাপক ছাড় দিচ্ছে ক্যাম্পা কোলা। তারা কোমল পানীয়টির লেবেল মূল্যের ওপর প্রায় ৫০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে। যেমন একটি দুই লিটারের ক্যাম্পা কোলা বোতলের দাম দোকানে ৪৯ রুপি, যা ২ দশমিক ২৫ লিটার কোক ও পেপসির তুলনায় প্রায় এক–তৃতীয়াংশ কম। একটি ক্যাম্পা কোলার ছোট বোতলের দাম ১০ রুপি। কোকাকোলার ছোট বোতলের দামও ১০ রুপি এবং পেপসির ১২ রুপি।

এ ছাড়া রিলায়েন্স আসন্ন আইপিএল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সময় একটি বিজ্ঞাপন প্রচারের পরিকল্পনা করছে। সেউ সঙ্গে ক্যাম্পা কোলাকে রিফ্রেশমেন্ট পার্টনার করার জন্য কমপক্ষে তিনটি আইপিএল দলের সঙ্গে আলোচনা করছে তারা৷

সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মুম্বাই, দক্ষিণের চেন্নাই ও উত্তরের লক্ষ্ণৌতে পাঁচটি রিলায়েন্স আউটলেট পরিদর্শন করেছে। তারা দেখেছে যে ক্যাম্পা কোলার বোতলগুলো একদম দোকানের প্রবেশের শুরুতেই রাখা হয়েছে। তা ছাড়া দোকানগুলো অন্য পানীয়র বোতল যে তাকে রাখা হয়েছে, ক্যাম্পা কোলার বোতলও তার পাশের তাকেই রেখেছে।

চেন্নাইয়ের একটি আউটলেটে রিলায়েন্স স্টোরের একজন ব্যবস্থাপক জানান যে তাঁরা প্রচারের জন্যই ক্যাম্পা কোলার বোতল দোকানের প্রবেশদ্বারে রাখছেন। এ কারণে প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাদের পণ্যের দাম কমিয়েছে। শহরের আরেক দোকানের এক কর্মচারী জানান, বর্তমানে পেপসি ও কোকাকোলার প্রতি ১০০টি বোতলের বিপরীতে ক্যাম্পা কোলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ বোতল।

কোকাকোলা জানায়, তারা কোকের ছোট বোতলের দাম অপরিবর্তিত রেখেছে এবং বাজার সম্প্রসারণের দিকে মনোনিবেশ করেছে। তারা আরও বলেছে, ‘নতুন প্রতিযোগী থাকায় বাজারের আরও বিকাশে বিনিয়োগের একটি দুর্দান্ত সুযোগ তৈরি হবে।’

পেপসির একজন সাবেক নির্বাহী জানান যে তাঁরা ভারতের স্থানীয় পণ্যগুলো নিয়ে সর্বদা চিন্তিত ছিলেন। ইতিমধ্যে বাজারে নতুন প্রতিদ্বন্দ্বিতাও শুরু হয়ে গেছে।

রিলায়েন্স হলো ভারতের শীর্ষ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। সে জন্য তারা ২ হাজার ৫০০টি মুদি আউটলেট ও হাজার হাজার ছোট নন-নেটওয়ার্ক স্টোরে ক্যাম্পা সরবরাহ করবে। নতুন ভোগ্যপণ্য হিসেবে ৫ বছরের মধ্যে ক্যাম্পা কোলার বার্ষিক রাজস্ব, মানে আয় ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৬৫০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কোম্পানির একটি মুদি শপিং অ্যাপ রয়েছে, যার অধীনে এটি পাঁচ লাখ মম-অ্যান্ড-পপ স্টোরে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করা হয়। একইভাবে এখন এই স্টোরে ক্যাম্পা কোলাও বিক্রি করা হবে।

ভারতের অ্যাম্বিট ক্যাপিটালের ভোক্তা বিশ্লেষক অলোক শাহ বলেন, ‘পেপসি ও কোকাকোলা পানীয় ভারতজুড়ে কমপক্ষে ৩০ লাখ আউটলেটে পাওয়া যায় এবং সারা দেশে দুই কোম্পানির নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। ভারতে তাদের অনেকগুলো কারখানা রয়েছে। যা–ই হোক, ভোক্তারা এখন ক্যাম্পা কোলা পছন্দ করেন কি না, তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’

১৯৫০-এর দশকে ভারতের বাজারে কোমল পানীয়র ব্র্যান্ড হিসেবে কোকাকোলা প্রবেশ করে। ১৯৭০–এর দশক পর্যন্ত এটিই ছিল দেশটিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় কোমল পানীয় ব্র্যান্ড। কিন্তু ১৯৭৭ সালে সরকারের নীতিগত পরিবর্তনের ধাক্কায় ভারত থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয় কোকাকোলা। আর তখন কোকাকোলার এ শূন্যস্থান খুব ভালোভাবে দখল করে নেয় ক্যাম্পা কোলা। অল্প সময়েই ভারতজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়ও হয়ে উঠে কোম্পানিটি। ১৯৮৩ সালে ওই সময়ের তরুণ তারকা হিসেবে সালমান খানকে ক্যাম্পা কোলার বিজ্ঞাপন করতে দেখা যায়।

তবে ক্যাম্পা কোলার উত্থান বেশি দিন টেকেনি। ব্র্যান্ডটি ১৯৯০-এর দশকে বড়সড় ধাক্কা খায়। দেশটির তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিং মুক্তবাজার অর্থনীতির অধীনে বৈদেশিক কোম্পানিগুলোকে ভারতে অবাধে ব্যবসা করার অনুমতি দেন। যার ফলে কোকাকোলা ভারতের বাজারে আবার প্রবেশের সুযোগ লাভ করে। একই সঙ্গে যোগ দেয় পেপসির মতো বহুজাতিক আরও কিছু কোমল পানীয় ব্র্যান্ড। শেষ পর্যন্ত এসব বিখ্যাত ব্র্যান্ডের বিপণন কৌশলের কাছে টিকতে পারেনি ক্যাম্পা কোলা। ফলে ব্র্যান্ডটি ২০০০ সালের দিকে এসে ধীরে ধীরে কোমল পানীয় উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।

সম্প্রতি ক্যাম্পা কোলা পুনরায় বাজারজাত করার খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বয়স্ক ভারতীয়রা নিজেদের শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের স্মৃতিচারণা করতে শুরু করেন। কিন্তু কোকাকোলাসহ অন্যান্য বিদেশি কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিটি নতুন করে আবার ভোক্তাদের কাছে কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে, সেটি এখন দেখার বিষয়।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: