facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা


২৯ নভেম্বর ২০২১ সোমবার, ০৬:০৩  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট গণনার যে সূত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা পাল্টানোর সম্ভাবনা কম। তবে বন্ডে বিনিয়োগ এই সীমার বাইরে রাখার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজি করানোর নানা চেষ্টা করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। দুই সংস্থার মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগেই যে আলোচনা হয়েছে, তাতে বিএসইসি ধারণা করছে, তাদের এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হতে যাচ্ছে।

পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতনের মধ্যে মঙ্গলবার দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকের দুই দিন আগে বিএসইসির কর্মকর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়েও তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। বন্ডে বিনিয়োগ সারা বিশ্বেই ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিটের বাইরে থাকে- এই বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে এসেছে বিএসইসি।

এ ছাড়া এক্সপোজার লিমিট গণনা ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজি করাতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে এসেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদসহ আরও কয়েকজন।

বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ চৌধুরী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহ।

বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেয়া হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

প্রায় এক যুগের মন্দাভাব কাটিয়ে গত বছরের মে মাস থেকে পুঁজিবাজারে উত্থান শুরু হয়। গত সেপ্টেম্বরে সূচক ৭ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে যাওয়ার পর তৈরি হয় নতুন আশাবাদ।

কিন্তু এই পর্যায়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু পদক্ষেপ পুঁজিবাজারে অর্থপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। আইন অনুযায়ী, একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। আর শেয়ারের ধারণকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয় বাজারমূল্যের ভিত্তিতে। আর এখানেই বিপত্তি।

ব্যাংক তার বিনিয়োগসীমার মধ্যেই শেয়ার কিনলেও তার দাম বেড়ে গেলে বাজারমূল্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগ গণনার কারণে বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে আগেভাগেই। এতে পুঁজিবাজারে বিক্রয় চাপ তৈরি হচ্ছে। এর ফলে বাজারে হচ্ছে দরপতন।

এর মধ্যে আবার বন্ডের বিনিয়োগও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিনিয়োগসীমার মধ্যে ধরছে। অথচ বিএসইসি এই বিনিয়োগকে ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমার বাইরে রাখার পক্ষে। তারা বলছে, সারা বিশ্বেই এই বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বাইরে থাকে।

সরকার পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেটকে জনপ্রিয় করতে চাইছে। এর অংশ হিসেবে সুকুক বন্ড ছেড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা তুলতে অনুমতি দিয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডকে। আকর্ষণীয় মুনাফার এই বন্ডে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে। আর বিনিয়োগসীমা অতিক্রম করে যায় বলে ব্যাংকগুলো হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে।

এই দুটি বিষয় ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে আরও বেশ কিছু বিষয়ে মতভিন্নতা আছে। এর মধ্যে সম্প্রতি মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনা করা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কাছে প্রতিদিনের শেয়ার কেনাবেচার তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিএসইসি মনে করছে, এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ।

এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বৈঠক ডাকার পর রোববার পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার যে আশা করা হচ্ছিল, সেটি হয়নি। আগের পাঁচ কর্মদিবসের মতোই পতন হয়েছে সূচকের। লেনদেন নেমে এসেছে সাত মাসের আগের অবস্থানে। সূচক নেমেছে তিন মাসের আগের অবস্থানে।

বাজারে দরপতনের পর বিকেলে বিএসইসির প্রতিনিধিদল যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সরকারের কাছে তুলে ধরে তাদের বক্তব্য।

বিএসইসি কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের খুবই ভালো মিটিং হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কিছু জিজ্ঞাসা ছিল, আমরা সেগুলোর উত্তর দিয়েছি। একইভাবে আমাদের কিছু বিষয় জানার ছিল, সেগুলোও আমরা জানার চেষ্টা করেছি।’

বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বন্ডের বিনিয়োগ যাতে ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিটের বাইরে থাকে, সে বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসি এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে।’

জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করব। আশা করি, তারা পুঁজিবাজারের স্বার্থে বিষয়টি বিবেচনা করবে।’

তিনি জানান, আগামী মঙ্গলবার বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠকটি হবে বেলা ৩টায়।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘এক্সপোজার লিমিটের কারণেই পুঁজিবাজারে ব্যাংকের মতো বড় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগে আসতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির আলোচনায় এ বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।’

তবে তিনি কিছু বিধিনিষেধের পক্ষেও। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যেহেতু প্রচুর বিনিয়োগ সক্ষমতা আছে, তাই তাদের ইচ্ছামতো বিনিয়োগ করতে দেয়া উচিত হবে না। তারা বিনিয়োগ করবে মুনাফার জন্য। বড় বিনিয়োগে বড় মুনাফা হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারী যাতে এমন বিনিয়োগে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: