facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

কে কোন দল দেখার দরকার নেই: ডিসিদের প্রধানমন্ত্রী


২৪ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার, ১১:২০  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


কে কোন দল দেখার দরকার নেই: ডিসিদের প্রধানমন্ত্রী

দলমত নির্বিশেষে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশীশক্তি, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূল করার জন্য জেলা প্রশাসকদের কঠোর নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখানে কে কোন দল করে, কে কি করে সেগুলো দেখার কোনো দরকার নেই।

তিনি বলেন, যদি কেউ বাধা দেয়, আপনারা সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমি সরকারপ্রধান হতে পারি- কিন্তু আমি জাতির পিতার কন্যা, আপনাদের সেটা মনে রাখতে হবে। আমরা সমাজ থেকে এসব অশুভ তৎপরতা নির্মূল করে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই।

মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁও কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকদের তিনদিন ব্যাপী সম্মেলন উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন। এ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে থাকবো, ভোট না দিলে থাকবো না- এ নিয়ে আক্ষেপ নেই। যতদিন আছি, দেশের ও জনগণের স্বার্থে উন্নয়নের কাজ করে যাব। উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এই পরিকল্পনায় ডিসিদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

ডিসিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা তৃণমূলে থাকেন। যে এলাকার জন্য যেটা প্রয়োজন তাৎক্ষণিক সেটা নজরে আনবেন, সরকার সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। আমি বিশ্বাস করি যে, আপনাদের মাঝে অনেক উদ্ভাবনী শক্তি আছে। আপনারা এই উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের উদ্দ্যেশে দিক নির্শেনামূলক বক্তব্য দেন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস নির্মূলের বাইরেও তাদের ২৩ দফা নির্দেশনা দেন।

মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান যেটা চলমান, অব্যাহত থাকবে।

সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হয়, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। আর জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সর্বক্ষেত্রে শান্তি-শৃপখলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জেলা প্রশাসকদের তিনি `আরও নিষ্ঠার সঙ্গে ` দায়িত্ব পালন করতে বলেন।

গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে উদ্যোগী হওয়ার পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটাতেও জেলা প্রশাসকদের উদ্যোগী হতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতি ইঞ্চি জায়গা যেন আমরা উৎপাদনমুখী করতে পারি। কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সার, বীজ, বিদ্যুৎ, জ্বালানির সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং এ ধরনের `অনৈতিক কর্মকাণ্ড` কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দেন।

দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরও জোরদার করতে বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। জনগনকে বিষয়টা জানাতে হবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রশমনে `দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২` এবং এ সংক্রান্ত স্থায়ী নির্দেশনা অনুসারে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

সাধারণ মানুষ যাতে সহজে সুবিচার পায় এবং আদালতে যাতে মামলার জট কমে আসে, সেজন্য গ্রাম আদালতগুলোকে আরও কার্যকর করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকরা জেলাপর্যায়ে বিভিন্ন কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব কমিটিকে সক্রিয়, গতিশীল ও ফলপ্রসূ করতে হবে। সরকারি দপ্তরগুলোর বিদ্যমান সেবা তৃণমূলে পৌঁছানোর জন্য তথ্য মেলা, সেবা সপ্তাহ পালনের মত কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বাজার-ব্যবস্থার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির যে কোনো অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন, পাচার, যৌতুক, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে নজরদারি বাড়ানোর কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন। তিনি এ বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন।

জেলা প্রশাসকদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজ নিজ জেলায় ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ বাড়াতে হবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংস্কৃতিবোধ ও বিজ্ঞানমনস্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।

প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ পদক্ষেপ নিতে বলেন। পার্বত্য জেলার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, বনাঞ্চল, নদী-জলাশয়, প্রাণিসম্পদ এবং গিরিশৃঙ্গগুলোর সৌন্দর্য সংরক্ষণ করার বিষয়ে জোর দেন। এছাড়া, পর্যটনশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কল্যাণে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম জেলা প্রশাসকরাই মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করেন। আমরা যতই পরিকল্পনা করি, কিন্তু বাস্তবায়নের দায়িত্ব জেলা প্রশাসকদেরই।

এবার প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এর সঠিক বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকদের মনোযোগী হতে বলেন।

পাশাপাশি ২০২১ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নে জেলা প্রশাসকদের মতামত দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ভিক্ষুক পুনর্বাসন এবং স্কুলে মিড মে মিল চালুর ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকদের উদ্যোগের প্রশংসা করেন সরকারপ্রধান। সেইসঙ্গে যেসব স্কুলে এখনো মিড মে মিল চালু হয়নি তা বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।

শেখ হাসিনা তার সরকারের নানা খাতের উন্নয়নের চিত্র অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন এবং ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেন।

তিনি বলেন, সরকার রাজধানী ও দেশের বড় শহরগুলোর মধ্যে বুলেট ও দ্রুতগতির ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করেছে। প্রতিটি গ্রামের মানুষ যাতে সব নাগরিক সুবিধা পায়, সে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।

জেলা, উপজেলা ও পৌর শহরগুলো যাতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে; বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যাতে বজায় থাকে- সেসব বিষয়েও জেলা প্রশাসকদের দৃষ্টি দিতে বলেন শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। অন্যদের মধ্যে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

এছাড়া সম্মেলনে আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

তিন দিনের এ সম্মেলন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

রাজনীতি -এর সর্বশেষ