facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

এবার এসএস স্টিল দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা


১৯ অক্টোবর ২০২০ সোমবার, ১১:৩৭  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


এবার এসএস স্টিল দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা

জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনের পরে এবার এসএস স্টিল দিয়ে শেয়ারবাজার  থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন জাভেদ অপগেনহ্যাপেন। যিনি এর আগে জেনারেশন নেক্সটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কোম্পানিটি থেকে বেরিয়ে গেছেন। জেনারেশন নেক্সটের বিনিয়োগকারীদের নিঃশ্ব করার পর এবার এসএস স্টিল দিয়ে বিনিয়োগকারীদের পকেট খালি করতে নতুন ফন্দি করছেন তিনি।

শেয়ারবাজারে নানা ঘটনায় সমালোচিত ও কারসাজিকারক হয়েও তিনি থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।শেয়ারবাজারে যিনি নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে দুই কোম্পানির প্রসপেক্টাসে দুইরকম তথ্য প্রকাশ করেন। জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনের প্রসপেক্টাসের ৩৩ পৃষ্ঠায় জাভেদের বয়স ২৬ বছর ও অভিজ্ঞতা ৪ বছর উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ তিনি ২২ বছরের পরে অভিজ্ঞতা অর্জন শুরু করেন। তবে এসএস স্টিলের প্রসপেক্টাসে বয়স ৩২ এবং অভিজ্ঞতা ১২ বছর দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০ বছরের পরে অভিজ্ঞতা অর্জন শুরু হয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় তিনি কাগজে কারসাজিতে কতটা চতুর।

জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ছিলেন জাভেদ অপগেনহ্যাপেন। আইপিওকালীন কোম্পানিটিতে তার ৯৩ লাখ ১০ হাজার বা ১০.৬৮ শতাংশ শেয়ার ছিল। যিনি এই শেয়ারের উপর ২০১১ ও ১২ সালে ২০ শতাংশ করে ৪০ শতাংশ বোনাস শেয়ার নেন। যা ২০১৩ সালে রাইট শেয়ারের আবেদনের আগেই বিক্রয় করে দেন। এছাড়া পরবর্তীতে প্রাপ্ত বোনাস শেয়ারসহ সব বিক্রয় করে দিয়েছেন। জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনের আইপিওকালীন পরিশোধিত মূলধন ছিল ৮৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। যে কোম্পানিটি ২০১২ সালে আইপিওতে ৩০ কোটি টাকা ও ২০১৪ সালে রাইট শেয়ারে ১১২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে। এছাড়া তালিকাভুক্তির পরে ৬ বারই বোনাস শেয়ার দিয়েছে। যাতে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন এখন ৪৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অথচ কোম্পানিটির ব্যবসায় এখন তলানিতে। শেয়ারবাজারে আসার সময় ২০১১ সালে জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনের ইপিএস ছিল ২.০৯ টাকা। যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হয়েছে ০.৫৯ টাকা। কোম্পানিটির এই পতনে শেয়ার দর নেমে এসেছে অভিহিত মূল্যের নিচে।  চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ৪ টাকা ৫০ পয়সায়। জাভেদ অপগেনহ্যাপেনের এসএস স্টিল শেয়ারবাজার থেকে ২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। ২২০ কোটি টাকার কোম্পানিটিতে বর্তমানে তার ৬৯ কোটি ২০ লাখ টাকার বা ৩২.৩৩ শতাংশ মালিকানা রয়েছে।

জেনারেশন নেক্সটের পর এসএস স্টিলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে। অর্থাৎ জেনারেশন নেক্সটের মতো এসএস স্টিল দিয়েও একই চাল খেলার একটা প্রাথমিক প্রমাণ।

চট্টগ্রামের সালেহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিদ্যমান মূলধনী শেয়ারের ৯৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নিতে সম্প্রতি ২৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় এসএস স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এছাড়া সালেহ স্টিলের আরো ১৩৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা জানায় এসএস স্টিল। যার বিপরীতে তাদের নামে নতুন শেয়ার ইস্যু করবে সালেহ স্টিল। এখন একই কায়দায় ফের বিনিয়োগকারীদের বোনাস দেবে। পরে রাইট শেয়ারের মূলা ঝুলিয়ে বোনাস শেয়ার বেচে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেবেন এসএস স্টিলের চেয়ারম্যান অপগেনহ্যাপেন। চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর এসএস স্টিলের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, এসএস স্টিলের পর্ষদে মাত্র দুইজন পরিচালক রয়েছেন। এর মধ্যে একজন স্বতন্ত্র পরিচালক। এর একজন সাইদ রেজারাজ আহমেদ ও অপরজন স্বতন্ত্র পরিচালক সাদাদ রহমান। জানা গেছে জাভেদ অপগেনহ্যাপেনের কথা না শুনলে ওই কোম্পানির পরিচালক থেকে শুরু করে কেউই টিকতে পারেন না। সম্প্রতি একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকতা ও পরিচালক তিনি কোম্পানি থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।

শেয়ারবাজার থেকে একই কৌশলে বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতিয়ে নিতে বছর না ঘুরতেই এসএস স্টিল  অনুমোদিত মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি কোম্পানিটি অনুমোদিত মূলধন বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। ঘোষণা অনুযায়ী কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২৫০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ কোটি করা হয়। পরবর্তীতে গত ১০ আগস্ট কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ তা আরও বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়।তার মানে বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ না দিয়ে বছরের পর বছর বোনাস শেয়ার দিয়ে নিজের আখের গোচাচ্ছেন জাভেদ অপগেনহ্যাপেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সালেহ স্টিল নিয়ে বিএসইসিতে যে তথ্য জমা দিয়েছে তার অধিকাংশই মনগড়া। সালেহ স্টিলের যে উৎপাদন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তার অর্ধেক সক্ষমতাও নেই। সালেহ স্টিলের কারখানা পরিদর্শন করলে তার সত্যতা বেরিয়ে আসবে।

জানা গেছে, ভাইদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় চরম সংকটে থাকা সালেহ স্টিলের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন এনাম ইকবাল। আর সেই সুযোগটিও কাজে লাগাচ্ছেন জাভেদ অপগেনহ্যাপেন। একইভাবে এসএস স্টিলও ফুটবলার সালাহউদ্দিন থেকে কিনেছিলেন।

এর আগে ২০১৭ সালের শুরুতে ইস্পাত শিল্পের কোম্পানি এসএস স্টিল মিলসের সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফু-ওয়াং সিরামিকের একীভূতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে ওই আবেদন নাকচ করে দেয় শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিকউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ অবস্থায় শেয়ারবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের জন্য আবেদন জানায় এসএস স্টিল লিমিটেড।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের শুরুতে এসএস স্টিলের উদ্যোক্তারা তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফু-ওয়াং সিরামিকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেয়। কোম্পানির ২০ শতাংশ শেয়ার কিনে এ নিয়ন্ত্রণ নিলেও মালিকানা পরিবর্তন সংক্রান্ত কোন ঘোষণা দেয়নি ফু-ওয়াং সিরামিকস। পরবর্তিতে পর্ষদ পুনর্গঠন করে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন এসএস স্টিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাবেদ অপগেনহ্যাপেন। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে হাসনা অপজেনহাপেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ফু-ওয়াং সিরামকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর কোম্পানিটির সঙ্গে এসএস স্টিলকে একীভূতকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে তা নাকচ করে দেয় বিএসইসি। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে একীভূতকরণ ব্যর্থ হওয়ায় বিএসইসিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন জানায় এসএস স্টিল। আইপিওতে ফিক্সট প্রাইস পদ্ধতির মাধ্যমে এসএস স্টিল শেয়ারবাজার থেকে ২৫ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব দেয়। পরে নানা তদবিরে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পায় কোম্পানিটি । অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় ২ কোটি ৫০ লাখ শেয়ার ছেড়ে এ অর্থ সংগ্রহ করে কোম্পানিটি।

একীভূতকরণ পরিকল্পার অংশ হিসেবে এসএস স্টিলের বিদ্যমান একটি শেয়ারের বিপরীতে ফু-ওয়াং সিরামিকের একটি শেয়ার দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। এ উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্ত ফু-ওয়াং সিরামিকের অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করারও প্রস্তাব করেছিল পর্ষদ। যা বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) পর্ষদের এসব প্রস্তাবে সায়ও দিয়েছিলেন শেয়ারহোল্ডাররা। তবে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পায়নি। বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ বিষয়ে বিএসইসি সুনির্দিষ্ট নীতি ও বিধিমালা করতে যাচ্ছে। এর আগে কোনো কোম্পানির এ ধরনের প্রস্তাব অনুমোদন না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।

এসএস স্টিলের আইপিওর খসড়া প্রসপেক্টাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ২২০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২১০ কোটি টাকার মূলধন প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে দুই বছরে সংগ্রহ করা হয়েছে।

আইপিও প্রসপেক্টাস বিশ্লেষনে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় এসএস স্টিলের পণ্য বিক্রির পরিমান হঠাৎ করেই প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। যদিও ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে কোম্পানির পণ্য বিক্রি ২১০ থেকে ২১৪ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে কোম্পানির নিট মুনাফা বেড়েছে ১০৮ শতাংশ। আইপিও আবেদনকালীন সময়ে কোম্পানির পণ্য বিক্রি ও নিট মুনাফায় উল্লম্ফন কিছুটা অস্বাভাবিক বলে মনে করেন সংশ্লিস্টরা। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এসএস স্টিল লিমিটেডের ২০১৩ সালে কোম্পানির পণ্য বিক্রি ছিল ২১০ কোটি টাকা। এ সময় কোম্পানির নিট মুনাফা হয় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে ২১৪ কোটি টাকা বিক্রির বিপরীতে নিট মুনাফা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তবে ২০১৬ সাল থেকে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ শুরু করে। আর এ সময় থেকেই কোম্পানির বিক্রি ও নিট মুনাফা বাড়তে থাকে।

হিসাব বছর পরিবর্তনের পর ২০১৬ সালের নয় মাসে এসএস স্টিলের পণ্য বিক্রি দাঁড়ায় ১৮১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। যা বার্ষিক হিসাবে ২৪১ কোটি টাকা দাঁড়ায়। ২০১৩ থেকে ১৫ সালে কোম্পানির বিক্রিতে তেমন কোন প্রবৃদ্ধি না থাকলেও ২০১৬ সালে কোম্পানির বিক্রয় প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ২০১৬ সালে পণ্য বিক্রির প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়। ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে এসএস স্টিলের পণ্য বিক্রি দাঁড়ায় ৩০০ কোটি টাকায়। এ সময় কোম্পানির কর পরবর্তি নিট মুনাফা দাঁড়ায় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের ১০৮ শতাংশ বেশি। এর ফলে ২০১৭ সালে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়ায় ১ টাকা ২০ পয়সায়।

এদিকে মাত্র দুই বছরে কোম্পানির নিট সম্পদ মূল্য বেড়েছে ১০৪ শতাংশ। ২০১৫ সালে কোম্পানির নিট সম্পদ মূল্য ছিল ২৯৮ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ৬০৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। মূলত পূনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে কোম্পানির সম্পদ বাড়ানো হয়েছে। পূনর্মূল্যায়নের ফলে কোম্পানির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ৩৫ পয়সায়।

এসব বিষয়ে এসএস স্টিলের কোম্পানি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জেনারেশন নেক্সটের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কই নেই। আমরা তাদের চিনি না। এসএস স্টিলের কর্মকাণ্ড নিয়ে রহস্যজনকভাবে অনেক প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি।

 আরো পড়ুন :

এসএস স্টিলের মূল্যসংবেদনশীল তথ্যে গোজামিল

 

  

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: