২৩ জানুয়ারি ২০২২ রবিবার, ০৫:৩৩ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার বিজনেস24.কম
সিকদার রিয়েল এস্টেট নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের মধূপুর গ্রামে একটি পরিবারকে উচ্ছেদ করে বাগান বাড়ি তৈরি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী একটি মহল তাদের শখের বাগানবাড়ি বানাতে গিয়েই তাদেরকে উচ্ছেদ করেছে।
এদিকে বসতভিটা থাকতেও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই পরিবারটি।
তবে উচ্ছেদের বিষয়টি অস্বীকার করছে সিকদার রিয়েল এস্টেট নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে অন্তত ৩০ একর জমির ওপর একটি বাগানবাড়ি গড়ে তুলেছেন প্রয়াত ব্যবসায়ী জয়নুল হক সিকদার।
পুকুরের মধ্যে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন চারতলা ভবন, হরিণের খামার, দুটি পুকুরের সংযোগস্থলে সেতু আর নানা প্রজাতির গাছপালা দিয়ে সাজিয়েছেন বাগান বাড়িটি।
অভিযোগ উঠেছে, এই বাগানবাড়িটি বানাতে গিয়েই একটি হিন্দু পরিবারকে জোর করে উচ্ছেদ করেছেন সিকদার রিয়েল এস্টেট।
হিন্দু পরিবারের সদস্য সুমিত্রা রানীর দাবী, ওই বাগানবাড়ির মধ্যেই তাদের ৪১ শতাংশ বাড়িসহ জমি রয়েছে। ২০১৮ সালে ওই বাড়ি থেকে জোর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে সুমিত্রা ও তার স্বজনদের। আর সেখানেই নির্মাণ করা হয় সীমানা প্রাচীর।
প্রকৃতপক্ষে সুমিত্রা রানীর বাবা অমূল্য চরন দে ছিলেন ওই জমির মালিক। তার মৃত্যুর পর বিআরএস জরিপে সুমিত্রা দেবীর ভাই রতন কুমার দে ও জগদীস চন্দ্র দে’র নামে ওই জমির মালিকানা হয়।
২০০৯ সালে রতন কুমার দে এবং ২০১৩ সালে তার স্ত্রী ঝর্না রানী দে তিন শিশুকন্যা রেখে মারা যান। এরপর সুমিত্রা ও তার ভাই জগদীশ দে ওই শিশুদের লালন পালনের দায়িত্ব নেন।
ভিটেমাটি হারানোর পর ২০২০সালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে জগদীশও মারা যান।
সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় এবং বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়ায় ভাইয়ের তিন কিশোরী কন্যা নিয়ে বিপাকে পরেন সুমিত্রা রানী। আশ্রয় নেন পাশের ডিঙ্গামানিক গ্রামের কাদির শেখের পরিত্যক্ত রান্না ঘরে।
সেই দিনের স্মৃতি মনে করে সুমিত্রা রানী বলেন, ‘আমি পাট লইতাছিলাম। পাট লওয়া শেষ কইরা ৩টা সাড়ে ৩টার দিকে বাড়ি গেলে বাড়িতে ঢুকতে দেয় নাই। সিকদারের ছেলেরা দাঁড়াইয়া থাইক্যা বাউন্ডারি দিসে। কইছিলাম, ঘরে খাওন দাওন, কাপড় চোপড় আছে, এগুলো আনতে দেন। কিন্তু দেয় নাই। পরনের ময়লা কাপড় লইয়া, তিনডা মাইয়ারে লইয়া মাথা গোঁজার লিগ্যা মানুষের দ্বারে দ্বারে যাই। কিন্তু সিকদারগো ভয়ে কেউই আমাগো রাখতে সাহস পায় নাই। পরে এই বাড়ির রান্দোন ঘরে থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই শোকে আমার ভাইডাও মইরা গেল। একটা মাইয়া যেই বেতন পায় হেইয়া দিয়াই কোনোরকম চলি।’
সুমিত্রা রানী জানান, নিজের বাড়ির ভিটায় ফিরে যাওয়া তাদের এখন স্বপ্ন।
রতন দে’র মেয়ে রুপা রানী দে বলেন, ‘সিকদারের ছেলেরা বাড়ি এলেই গোলাগুলি করত, আরও অনেক কাজ করত। ভয়ে আমরা বাড়ি থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে থাকতাম। মা-বাবা নাই, কাকাও মারা গেছে, এখন শুধু পিসিই বেঁচে আছেন। জমি আর আমাদের জন্য চিন্তা করতে করতে তার শরীরও ভালো নেই।’
রুপা জানান, মহিলা অধিদপ্তরের একটা প্রজেক্টে কাজ করে তিনি ৮ হাজার টাকা বেতন পান। তা দিয়ে ঘর ভাড়া, তিন বোনের পড়ার খরচ, পোশাক, খাওয়া কোনোটাই পুরোপুরি করা সম্ভব হয় না। সব সময়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তারা।
তিনি আরও জানান, মন্ত্রী এনামুল হক শামীম তাদের একবার দেখতে গিয়েছিলেন। ভিটেমাটি ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন।
এদিকে সিকদার রিয়েল এস্টেটের প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপক সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘সুমিত্রারা এখানে বসবাস করতেন। এখনও তাদের দুটি ঘর আছে। আমাদের নিরাপত্তার জন্যই বাউন্ডারি দেয়া হয়েছে। তাদের উচ্ছেদ করা হয়নি। তারা চলে গেছেন। তাদের যদি কোনো কাগজপত্র থাকে এবং সেটা যদি তারা দেখাতে পারেন তাহলে যেভাবে মীমাংসা করতে চান, সেভাবেই মীমাংসা করা হবে।’
জমির মালিকানা জানতে ঘড়িসার ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে ভূমি কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন মোল্লা নথিপত্র দেখে জানান, দাবি করা জমিটির মালিক হচ্ছেন অমূল্য চন্দ্র দের দুই ছেলে রতন কুমার দে ও জগদীস চন্দ্র দে। ভাইদের এই জমির খাজনা বাংলা ১৪২৫ সন পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন সুমিত্রা রানী দে।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।