facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

উৎসে কর আদায়ে বড় সংস্কার


১২ আগস্ট ২০২১ বৃহস্পতিবার, ০৬:২৩  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


উৎসে কর আদায়ে বড় সংস্কার

প্রত্যক্ষ বা আয়কর খাতে বড় একটি অংশ আদায় হয় ‘উৎসে কর’ থেকে। পরিসংখ্যানে বলে, বর্তমানে মোট আয়করের ৬০ শতাংশ আসে উৎসে কর থেকে।

ঠিকাদার ব্যবসায়ী, মেয়াদি আমানত, সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে অর্জিত মুনাফা, সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন, ট্রাভেল এজেন্টসহ বর্তমানে ৫৮টি খাত থেকে প্রযোজ্য হারে উৎসে কর আদায় হয়।

উৎসে কর আদায় প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং সেখানে অনিয়মের সুযোগ থাকায় প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি হয়। এই ফাঁকি বন্ধ এবং আদায় প্রক্রিয়া সহজ করতে এটির ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলেট্রনিক বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে উৎসে করা আদায় হবে।

এ পদ্ধতি সম্পন্ন হলে করের টাকা জমা দেয়ার জন্য ব্যাংকে গিয়ে লাইন ধরতে হবে না। ঘরে বা অফিসে বসেই মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার ব্যবহার করে উৎসে করের টাকা জমা দিতে পারবেন করদাতারা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলেছে, এ প্রক্রিয়ার আওতায় প্রাথমিকভাবে রাজধানীর কর অঞ্চল-১, কর অঞ্চল-২, কর অঞ্চল-৬ এবং কর অঞ্চল-৮ এ পরীক্ষামূল স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

একজন কর কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, পর্যায়ক্রমে আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের সকল কর অফিসে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু করার মাধ্যমে উৎস কর আদায় করা হবে।

এনবিআরের অধীনে বর্তমানে সারা দেশে ছয় শতাধিক কর অফিস আছে। প্রত্যেক কর অফিসকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির আওতায় এনে উৎসে কর আদায় করা হবে।

এনবিআর বলেছে, সব কর অফিসকে এ পদ্ধতির আওতায় আনা গেলে উৎসে কর আদায় বর্তমানের চেয়ে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বাড়বে।

সমাপ্ত অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে মোট আয়কর আদায় হয় ৮৫ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে উৎসে করের অবদান ৬০ শতাংশ।

উৎসে কর এক ধরনের অগ্রিম কর। আয় অর্জন পর্যায়েই অগ্রিম হিসেবে এই কর আদায় করা হয়। অগ্রিম কর বছরের শেষে আয়কর রিটার্নের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। তবে অগ্রিম কর বেশি দিলে ফেরত (রিফান্ড) পাওয়া যায়। আর কম দিলে পাওনা অংশ রিটার্ন্ জমার সঙ্গে পরিশোধ করতে হয়। শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক দেশেই উৎসে কর পদ্ধতি চালু রয়েছে।

তবে বাংলাদেশে উৎসে কর পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল এবং আদায় প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ। এ পরিপ্রেক্ষিতে, প্রক্রিয়া সহজ এবং ফাঁক-ফোকর বন্ধে উৎসে কর ব্যবস্থায় সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।

এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে এনবিআরের অধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার ইকবাল হোসেন এবং কর অঞ্চল-৬ এর কমিশনার জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক কর্মকর্তা বলেন, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কর আদায়ের জন্য কর বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেরাই সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। এর সঙ্গে উৎসে কর কর্তনকারীদের সংযুক্ত (ইন্ট্রিগ্রেশন) করা হবে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে তদারকি করার জন্য রাজস্ব বোর্ডকেও সম্পৃক্ত করা হবে।

উৎসে কর সরাসরি এনবিআর আদায় করে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এই কর আদায়ের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তারা সরকারের পক্ষ হয়ে কর্তনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কর আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়।

বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে পরিস্কার করা যায়। কেউ ব্যাংকে মেয়াদি আমানত বা এফডিআর রাখলে তার বিপরীতে নির্ধারিত হারে সুদ বা মুনাফা দেয়া হয়। এই মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর আরোপ রয়েছে।

এনবিআর কিংবা কর বিভাগ সরাসরি এই কর আদায় করে না। আইনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকেই উৎসে কর আহরণ করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ব্যাংক। এ রকম প্রায় ৩ হাজার কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ আছে, যারা এনবিআরের পক্ষ হয়ে বিভিন্ন হারে উৎসে কর আদায় করে দেয় সরকারকে।

বর্তমানে উৎস করের সর্বনিম্ম হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ।

উৎসে কর ব্যবস্থাপনায় যে সংস্কার করা হচ্ছে, তাতে উল্লিখিত ৩ হাজার প্রতিষ্ঠানকে কর বিভাগের কর্মকর্তাদের তৈরি করা সফটওয়্যারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। সেই সঙ্গে প্রত্যেক কর অফিসের সঙ্গে এই সফটওয়্যার যুক্ত থাকবে। এর ফলে উৎসে কর আদায় প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সহজ হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

২০১৬ সালে উৎসে কর বিষয়ে একটি সমীক্ষা করেছিল এনবিআর। এতে বলা হয়, উৎসে কর আদায়ে বড় ধরনের গলদ আছে। এ খাতে যে পরিমাণ কর আদায়ের কথা, তা হচ্ছে না। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি হয়। এ ফাঁকি রোধ করতে পারলে আদায় বর্তমানের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়বে।

উৎসে কর ফাঁকির পেছনে বিভিন্ন কারণ শনাক্ত করেছে এনবিআর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: ঠিকমতো কর কর্তন না করা, কর্তন করা হলেও সময়মতো সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়া, যে হারে কর্তন করা হয়, তার চেয়ে কম জমা দেয়া, ভুয়া সনদ ইস্যু করা ইত্যাদি।

এনবিআর বলেছে, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালু হলে এসব অনিয়ম ও অসঙ্গতি দূর হবে। একই সঙ্গে আদায় প্রক্রিয়া সহজ হবে। ফলে কর ফাঁকি কমবে এবং আদায় বাড়বে।

বাংলাদেশের মতো অনেক দেশে কর আহরণের বড় অংশ উৎসে কর থেকে আসে। ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ায় মোট রাজস্ব আয়ের ৬০ শতাংশ আসে উৎসে কর থেকে।

প্রতিবেশি দেশ ভারতে মোট রাজস্বে উৎসে করের অবদান ৪০ শতাংশ। আর বাংলাদেশে এর অবদান ৬০ শতাংশ।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: