facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৭ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪

Walton

অদাবীকৃত লভ্যাংশ নিয়ে কোম্পানি আইনে নতুন ধারা সংযোজনের সুপারিশ


১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার, ১১:৫৩  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ার বিজনেস24.কম


অদাবীকৃত লভ্যাংশ নিয়ে কোম্পানি আইনে নতুন ধারা সংযোজনের সুপারিশ

 

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো অদাবীকৃত লভ্যাংশ বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সম্প্রতি একটি নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ নির্দেশনা অনুযায়ী, নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা কিংবা অনুমোদনের পর থেকে তিন বছর পর্যন্ত যদি অদাবীকৃত কিংবা অপরিশোধিত থাকে, তাহলে সেটি কমিশনের বিশেষ তহবিলে পাঠাতে হবে। তবে এ বিষয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) ভিন্নমত পোষণ করেছে। কোম্পানি আইনে এ-সংক্রান্ত নতুন ধারা সংযোজন ছাড়া এ পরিবর্তন করা সমীচীন হবে না বলে সুপারিশ করেছে সংগঠনটি।

সম্প্রতি এ বিষয়ে বিএপিএলসির প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে নির্দেশনার চারটি ধারা উদ্ধৃত করে এ বিষয়ে সংগঠনটি তাদের সুপারিশ তুলে ধরেছে। বিএসইসির নির্দেশনার ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ অথবা মিউচুয়াল ফান্ডের ট্রাস্টি কমিটির সভায় এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে মোট লভ্যাংশের সমপরিমাণ টাকা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা ফান্ডের আলাদা ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

বিএপিএলসি এ ধারার বিধানের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লভ্যাংশের অর্থ স্থানান্তরের সুপারিশ করেছে। এক্ষেত্রে সংগঠনটির যুক্তি হচ্ছে ঘোষিত লভ্যাংশ এজিএমে শেয়ারহোল্ডার কর্তৃক অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত নয়। এজিএমে অনেক সময় ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ পরিবর্তন হওয়ার নজির রয়েছে। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদের মিটিংয়ের পর এজিএম আয়োজন করা পর্যন্ত ৯০ দিনের ব্যবধান থাকে। যদি পর্ষদ সভায় লভ্যাংশ ঘোষণার ১০ দিনের মধ্যে এর সমপরিমাণ অর্থ আলাদা হিসাবে রাখতে হয়, তাহলে এই সময় এ অর্থ অব্যবহূত থাকবে এবং এতে কোম্পানির চলতি মূলধন সংকুচিত হয়ে পড়বে। এতে কোম্পানির মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয়ের (ইপিএস) ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কমিশনের নির্দেশনার ৪ ধারায় বলা হয়েছে, স্টক লভ্যাংশের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ ঘোষণা কিংবা রেকর্ড ডেট অথবা এজিএমে তা অনুমোদনের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শেয়ারহোল্ডারের বিও হিসাবে তা জমা করতে হবে। এক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে।

বিএপিএলসি এক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএলের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেয়ার শর্ত বাদ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। সংগঠনটির মতে, এটি পীড়াদায়ক ও অপ্রয়োজনীয়।

বিএসইসির নির্দেশনার ৮ ধারায় বলা হয়েছে, নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে যদি তা পরিশোধ করা না হয়ে থাকে, তাহলে সেটি কমিশনের নির্দেশিত তহবিলে স্থানান্তর করতে হবে। কোম্পানিকে এ অর্থ স্থানান্তরের সময় তহবিলের ব্যবস্থাপকের কাছে লভ্যাংশসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। আর স্থানান্তরের পর যদি কোনো শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিটহোল্ডার ওই লভ্যাংশ দাবি করেন, তাহলে ওই দাবির ১৫ দিনের মধ্যে তা যাচাই করে তহবিলের ব্যবস্থাপকের কাছে পাঠাতে হবে এবং কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে তহবিল ব্যবস্থাপক লভ্যাংশের অর্থ পরিশোধ করবেন।

এ বিষয়ে বিএপিএলসি বলছে, এ ধারাটি কার্যকর করার পর এর আরো পরিবর্তন ও স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। ভারতের কোম্পানি আইনের উদাহরণ দিয়ে সংগঠনটি বলছে যে সেখানে অপরিশোধিত লভ্যাংশ সাত বছর পর্যন্ত অপরিশোধিত থাকলে সেটি সরকারের তহবিলে স্থানান্তরের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের কোম্পানি আইনে এ-সংক্রান্ত কোনো বিধান বা নির্দেশনা নেই। তাই এটি কার্যকর করতে হলে কোম্পানি আইনে পরিবর্তন করে নতুন ধারা সংযোজন করতে হবে।

কমিশনের নির্দেশনার ১০ ধারা অনুসারে, ইস্যুয়ার প্রতিষ্ঠান নিজে কিংবা একজন এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে নগদ বা স্টক লভ্যাংশের যথাযথ বিতরণ নিশ্চিত করার জন্য বিও হিসাব, ব্যাংক হিসাব, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল ও ঠিকানাসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ইস্যুয়ার বা এজেন্ট বা সিডিবিএল বা ডিপিকে তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।

এ বিষয়ে বিএপিএলসির মতামত হচ্ছে, এ ধরনের তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব ব্রোকারেজ বা সিকিউরিটিজ হাউজের। তারা এ ধরনের তথ্য আপডেট করে সিডিবিএলের কাছে জমা রাখবে। আর যখন প্রয়োজন হবে, তখন সিডিবিএলের কাছ থেকে ইস্যুয়ার কোম্পানি এ তথ্য সংগ্রহ করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএপিএলসির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ন্যাশনাল পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ মাহমুদ বলেন, অপরিশোধিত লভ্যাংশ ব্যবস্থাপনা ও বিতরণ নিয়ে কমিশনের উদ্যোগ নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এজিএমে শেয়ারহোল্ডার কর্তৃক লভ্যাংশ অনুমোদন না করা পর্যন্ত সেটি চূড়ান্ত বলে গণ্য করার সুযোগ নেই, তাই এর আগে আলাদা হিসাবে অর্থ সংরক্ষণ করাও সম্ভব নয়। তাছাড়া পর্ষদ সভা ও এজিএমের মধ্যে ৯০ দিনের ব্যবধান থাকে এবং এ সময়ে ঘোষিত লভ্যাংশ আলাদা হিসাবে সংরক্ষণ করে রাখা হলে সেটি কোম্পানি কিংবা শেয়ারহোল্ডার কারোরই কোনো কাজে আসবে না। বরং এতে কোম্পানির চলতি মূলধনের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। আর কোম্পানি আইনে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকলে আইনগতভাবে আলাদা তহবিলে অপরিশোধিত লভ্যাংশ স্থানান্তরের সুযোগ নেই। মূলত এসব কারণেই আমরা কমিশনকে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি তারা আমাদের সুপারিশগুলো বিবেচনা করবেন।

অপরিশোধিত লভ্যাংশ কীভাবে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়, বর্তমানে সেটি নিয়ে কাজ করছে বিএসইসি। এজন্য একটি আলাদা বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। অপরিশোধিত লভ্যাংশ বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য যে বিশেষ তহবিল গঠন করা হবে, সেটির কাস্টডিয়ানের দায়িত্ব পালন করবে বিএসইসি। আর তহবিলটির ট্রাস্টির দায়িত্বে থাকবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

বিএপিএলসির চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, কমিশন পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে মহৎ উদ্দেশ্যে অপরিশোধিত লভ্যাংশ বিতরণ ও ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত নির্দেশনাটি জারি করেছে। বিএপিএলসির প্রস্তাবগুলো আমরা পেয়েছি। যদি তাদের প্রস্তাব যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে অবশ্যই আমরা সেটি স্বাগত জানাব। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এ মহৎ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে চাইছি। তাছাড়া পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এ ধরনের নির্দেশনা জারি করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত অধিকার কমিশনের রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: