২৬ জানুয়ারি ২০১৯ শনিবার, ০৮:৩৪ পিএম
এম এ ওয়াদুদ মিয়া, শরীয়তপুর
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই সংরক্ষিত মহিলা আসন নিয়ে সারাদেশে চলছে ব্যাপক আলোচনা। ইতিমধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়-ঝাপ শুরু করেছেন। সেক্ষেত্রে শরীয়তপুরবাসীরও পিছিয়ে নেই।
যদিও রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বের আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। তারপরেও সম্ভব্য প্রার্থীরা মনোনয়নের আশায় কেন্দ্রে জোরালো লবিং শুরু করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় শরীয়তপুরেও চলছে সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং হিসাব-নিকাশ।
শরীয়তপুর জেলায় অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এদের অনেকেই ইতোমধ্যে ফরম জমাও দিয়েছেন। যারা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের তৎকালীন ফরিদপুর-১৭ (বর্তমান শরীয়তপুর-২) আসনের সদস্য এ.এফ.এম নুরুল হক হাওলাদারের মেয়ে জোবায়দা হক অজন্তার নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে।
এ.এফ.এম নুরুল হক হাওলাদার শরীয়তপুরের মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি নাম। তিনি ছিলেন জাতির পিতার অত্যন্ত স্নেহভাজন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র একটি অধিবেশনেই তিনি অংশ নিতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয় অধিবেশনের একদিন আগে তিনি নিজ বাড়ির বৈঠকখানায় আঁততায়ীর গুলিতে শহীদ হন। তিনি ছিলেন একজন সৎ, নির্লোভ, নিরহঙ্কারী, কর্মপাগল ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ কর্মী। এলাকার মানুষের জন্য তার ছিল অগাদ ভালবাসা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে তিনি যখন এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছিলেন তখনই খুনিচক্র তাকে হত্যা করে।
শরীয়তপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খা নুরুল হকের সন্তানরা তার বাবার মতো সংসদ সদস্য হয়ে এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। এবার তার মেয়ে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ এর কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জোবায়দা হক অজন্তা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করায় এলাকার মানুষ আশায় বুক বাঁধছে।
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক ভূইয়া, আবদুস সামাদ ভূইয়া, বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে আমাদের দাবি শহীদ সংসদ সদস্য নুরুল হক হাওলাদারের মেয়ে জোবায়দা হককে সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন দেয়া হোক। তাহলেই নুরুল হককে হারিয়ে এলাকার মানুষ দীর্ঘ ৪৬ বছর যাবৎ হৃদয়ে যে শোক বয়ে বেড়াচ্ছে তা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
এ ব্যাপারে জোবায়দা হক অজন্তা’র সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমার পিতার পিচ্ছিল রক্ত পেরিয়ে আজ আমাকে এই অবস্থানে আসতে হয়েছে। বাবা যখন নিহত হন তখন আমরা ৩ ভাই-বোন ছিলাম ছোট্ট শিশু। মা আমাদের অনেক কষ্টে মানুষ করেছেন। পিতার দর্শন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে লালন করে এলাকার মানুষের জন্য তিল তিল করে নিজেকে তৈরি করেছি।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেখে আমি হৃদয়ে শক্তি সঞ্চয় করেছি। কারণ স্বজন হারানোর ব্যাথা তাঁর চেয়ে আর কেউ বেশী বুঝবেন না। তিনি এক রাতে বাবা-মা, ভাই-ভাবিসহ পরিবারের সদস্যদের হারিয়েও শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাকে যদি সুযোগ দেয়া হয় আমিও বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে কাজ করতে চাই।
জোবায়দা হক জানান বৃহস্পতিবার তিনি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমন্ডির ৩/এ-তে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সারা জীবন আমার পরিবার আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি আনুগত্যশীল, এটা আমাদের পারিবারিক শিক্ষা। আমি শরীয়তপুর-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা সেখানে এ.কে.এম এনামুল শামীম ভাইকে মনোনয়ন দিয়েছেন। নেত্রী আমাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী পুরো নির্বাচনে এলাকায় থেকে নৌকার পক্ষে জনমত গঠন করে শামীম ভাইকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হতে কাজ করেছি। আমার বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।