লোকসানের চাপ কাটিয়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর পথে রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুমুখী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এসিআই লিমিটেড। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি কর-পূর্ব লোকসান কমিয়ে এনেছে ১৪৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ কম। কোম্পানির সবচেয়ে বড় লোকসানের উৎস ছিল রিটেইল চেইন ‘স্বপ্নো’, পাশাপাশি খাদ্য, কনজিউমার প্লাস্টিকস ও হেলথকেয়ার খাতও লোকসান বাড়িয়েছে।
তবে আশার খবর—ফার্মাসিউটিক্যালস, অ্যানিম্যাল হেলথ, কনজিউমার ব্র্যান্ডস, ক্রপ কেয়ার, মোটরস, পিওর ফ্লাওয়ার, লবণ এবং ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং—এই বিভাগগুলো মিলে এসিআই অর্জন করেছে ৫১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার কর-পূর্ব মুনাফা। গত বছরের একই প্রান্তিকে যেখানে ছিল ২৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকার লোকসান। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি সমন্বিতভাবে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার নিট মুনাফা ঘোষণা করেছে—যা গত বছরের ৪২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতির বিপরীতে বড় রকমের ঘুরে দাঁড়ানো। সেপ্টেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৯ পয়সা।
গ্রুপটির রাজস্বও বড় ধরনের বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রান্তিকে এসিআইয়ের মোট রাজস্ব দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা, যা গত বছরের ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকার তুলনায় ২৪.৪০% বেশি। এটি কোম্পানির বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির প্রমাণ।
এসিআইয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ রাজস্ব এনেছে মোটরস বিভাগ। ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এটি অর্জন করেছে ৯৫০ কোটি টাকা আয়। কর-পূর্ব মুনাফাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি টাকা, যা ২৮ শতাংশ বেশি। এসিআই মোটরস লিমিটেডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি কৃষি ও অ-কৃষি কাজে ব্যবহৃত যানবাহন আমদানি, অ্যাসেম্বলিং ও বিক্রি করে। পাশাপাশি বাংলাদেশে ইয়ামাহা মোটরসাইকেল বিতরণের একক দায়িত্বও পালন করে।
রিটেইল চেইন ‘স্বপ্নো’ এ সময় রাজস্ব ৭১৭ কোটি টাকা হলেও লোকসান হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা—যা গ্রুপের সর্বোচ্চ ক্ষতির অন্যতম কারণ। অন্যদিকে, ফার্মাসিউটিক্যালস বিভাগ ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ৫৭০ কোটি টাকা রাজস্ব করেছে এবং কর-পূর্ব মুনাফা ১১৪% বৃদ্ধি পেয়ে ৮৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
এ ছাড়াও অন্যান্য বিভাগগুলোর রাজস্ব দাঁড়িয়েছে—অ্যানিম্যাল হেলথ ১৬৫ কোটি, কনজিউমার ব্র্যান্ডস ৩০০ কোটি, ক্রপ কেয়ার ও পাবলিক হেলথ ১০১ কোটি, পিওর ফ্লাওয়ার ১৬৭ কোটি, লবণ ৯২ কোটি, ফুডস ২৫৪ কোটি, ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং ১৬৮ কোটি, কনজিউমার প্লাস্টিকস ৭০ কোটি এবং হেলথকেয়ার ২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে হেলথকেয়ার বিভাগ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, যেখানে প্রাক-কর লোকসান ৭২ কোটি টাকা।
সামগ্রিকভাবে, লোকসান কাটিয়ে এসিআইয়ের ব্যবসায়িক বহুমুখিতা এবার তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে—বিশেষ করে ওষুধ, মোটরস এবং ভোগ্যপণ্য খাতের প্রবৃদ্ধি কোম্পানিকে একটি ইতিবাচক পথে এগিয়ে নিচ্ছে।
























