শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), যার মাধ্যমে সংগৃহীত শেয়ার বা ইউনিটগুলো কোটার ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বরাদ্দ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতি এবং বুক বিল্ডিং উভয় পদ্ধতির আইপিও-তেই ৭০ শতাংশ হারে কোটা সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন। তবে এবার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এই কোটার পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি বিএসইসি প্রকাশিত ‘Public Offer of Equity Securities Rules, 2025’-এর খসড়ায় আইপিওর বিদ্যমান কোটা হার পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। জনমত যাচাই শেষে এই বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে।
বিএসইসির এই খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কোটা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। বিদ্যমান ‘Public Issue Rules, 2015’ (২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৭০ শতাংশ কোটা ছিল। প্রস্তাবিত খসড়ায় অন্যান্য কোটাগুলো হলো: যোগ্য বিনিয়োগকারীদের (ইআই) জন্য ৩০ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য ২০ শতাংশ, আইপিওতে আসা প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কর্মীদের জন্য ৫ শতাংশ, অনিবাসী বাংলাদেশি ও অন্যান্য অনিবাসীর জন্য ৫ শতাংশ, এবং উচ্চসম্পদশালী ব্যক্তিদের জন্য ৫ শতাংশ। বিদ্যমান নিয়মে ইআইদের জন্য ২০ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য ৫ শতাংশ এবং অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা ছিল।
অন্যদিকে, বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর ক্ষেত্রেও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কোটা ৭০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। এই পদ্ধতির খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী ইআইদের জন্য ৪০ শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য ২০ শতাংশ, স্থায়ী কর্মীদের জন্য ৫ শতাংশ, অনিবাসী বাংলাদেশি ও অন্যান্য অনিবাসীর জন্য ৫ শতাংশ এবং উচ্চসম্পদশালী বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। বিদ্যমান বিধিমালায় ইআই ও মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য ২৫ শতাংশ এবং অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা ছিল।
কোটা পরিবর্তনের পাশাপাশি নতুন খসড়ায় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ার বরাদ্দ পাওয়া ইআইদের জন্য ১৮০ দিনের লকইন আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিদ্যমান বিধিমালায় ছিল না। আইপিও-পরবর্তী লকইন মেয়াদেও পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে উদ্যোক্তা, পরিচালক ও ১০ শতাংশ-এর বেশি শেয়ারধারী এবং এদের কাছ থেকে শেয়ার প্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য তিন বছরের লকইন রয়েছে। এছাড়া আইপিও অনুমোদনের চার বছর বা তারও আগে ইস্যুকৃত শেয়ারগুলোর জন্য এক বছরের লকইন রয়েছে। নতুন খসড়ায় এ সময়সীমা চার বছর থেকে কমিয়ে তিন বছর করা হয়েছে, তবে লকইন মেয়াদ অপরিবর্তিত থাকছে এক বছর।
খসড়া বিধিমালা অনুসারে, আইপিওর আবেদন পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ তালিকাভুক্তির সুপারিশ বা আবেদন বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। কোনো আইপিও আবেদন সম্পর্কে নেতিবাচক সুপারিশ করা হলে, সেক্ষেত্রে সেটি বিডিংয়ের জন্য বিবেচিত হবে বলেও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। আইপিওর আকারের ক্ষেত্রেও বিদ্যমান শর্ত বহাল রাখা হয়েছে—ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকা এবং বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ন্যূনতম ৭৫ কোটি টাকা উত্তোলনের বাধ্যবাধকতা থাকবে। এছাড়া, ইস্যু ব্যবস্থাপককে আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ প্রসপেক্টাস অনুযায়ী ব্যয় করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে প্রতি মাসে বিএসইসিতে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে বলেও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
























