ঢাকা   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের জোয়ার

সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের জোয়ার

বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগ অনিশ্চয়তা ও বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতার ফলে দেশের বেসরকারি খাত কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে, যা অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকিপূর্ণ।

নতুন প্রকল্পে ঋণের আবেদন নেই বললেই চলে। বড় শিল্পগ্রুপগুলো নতুন বিনিয়োগ থেকে বিরত রয়েছে এবং অনেক ছোট-মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেবল ব্যয় সংকোচন করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। ফলে ব্যাংকগুলো বাধ্য হচ্ছে নিরাপদ আয় নিশ্চিত করতে সরকারি বন্ডে অর্থ ঢালতে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এক বছরে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বেড়েছে ৩২% এবং আয় বেড়েছে প্রায় ৪৫%। একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারল্য থাকলেও প্রকল্প ঋণের চাহিদা না থাকায় ছোট আকারের ভোক্তা ঋণ বা সরকারি বন্ডেই মূলত বিনিয়োগ হচ্ছে।

সরকারি বন্ডে সুদের হার প্রায় ১১%, খেলাপির ঝুঁকি নেই—এই সুবিধাগুলোর কারণেই ব্যাংকগুলো দিন দিন এদিকে ঝুঁকছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ বাড়ছে কারণ বেসরকারি খাত ঋণ নিচ্ছে না। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে আস্থাহীনতায় বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানির এলসি কমেছে প্রায় ২৭%।


২০২৪-২৫ অর্থবছরে এলসি খোলা হয়েছে ১৪১ কোটি ৯১ লাখ ডলারের


যা আগের বছরের ১৯৫ কোটি ৬২ লাখ ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম

এছাড়া এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭.৫০%, যা মার্চের তুলনায়ও কম (৭.৫৭%)।

বেসরকারি খাতের অনীহা, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি হ্রাস, এবং বড় প্রকল্প স্থবিরতা—সব মিলিয়ে অর্থনীতির গতি থমকে দাঁড়িয়েছে। রড-সিমেন্টসহ বহু খাতে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে কেবল টিকে থাকার কৌশল নেওয়া হচ্ছে।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের ভাষায়, “সামগ্রিক আমদানি কিছুটা বাড়লেও মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি খোলা ও নিশ্চিতকরণে নেতিবাচক ধারা প্রমাণ করে—বিনিয়োগ পরিবেশ নেই।”

ব্যাংকগুলো এখন ক্ষুদ্রঋণ ও বন্ড নির্ভর মডেলে চলে যাচ্ছে। এটি স্থায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নয়, বরং তাৎক্ষণিক ঝুঁকি এড়ানোর একটি কৌশল। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশের উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং প্রবৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে।