ঢাকা   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

চার্টার্ড লাইফে জালিয়াতির অভিযোগ, বিএসইসির দ্বারে বিনিয়োগকারীরা

চার্টার্ড লাইফে জালিয়াতির অভিযোগ, বিএসইসির দ্বারে বিনিয়োগকারীরা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসির বিরুদ্ধে ঠকানোর অভিযোগ তুলেছে প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। চার্টার্ড লাইফ গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৪ সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গোঁজামিল দিয়ে লোকসান দেখিয়ে ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছে এমন অভিযোগ তুলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির দ্বারস্থ হয়েছে জালিয়াতির শিকার সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন ও বিনিয়োগকারীদের জন্য যৌক্তিক লভ্যাংশ প্রদানে বিএসইসির হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিয়েছে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগকারীরা।

গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। চিঠির অনুলিপি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বরাবর পাঠানো হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে চিঠিতে সই করেন কোম্পানির একজন বিনিয়োগকারী লুৎফুর রহমান।

চিঠিতে বলা হয়, সমাপ্ত ২০২৪ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকেই বিমা কোম্পানিটির আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় লাইফ ফান্ড বা জীবনবিমা তহবিলের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বছর শেষে শেয়ারপ্রতি লোকসান ও নতুন বছরের প্রথম প্রান্তিকে আবারও মুনাফা বিনিয়োগকারীদের মনে সন্দেহ ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এটি লভ্যাংশ না দেওয়ার জন্য জালিয়াতি ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঠকানো হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন ও যৌক্তিক লভ্যাংশের দাবি জানিয়েছে অভিযোগকারীরা।

সূত্র জানায়, বীমা খাতের কোম্পানি চার্টার্ড লাইফের সমাপ্ত ২০২৪ হিসাববছরের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে লাইফ ফান্ডের আকার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আবার চলতি ২০২৫ হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকেও কোম্পানিটির আয় বেড়েছে। অথচ এরমধ্যে ২০২৪ হিসাববছরের শেষ প্রান্তিক বা বছর শেষে শেয়ারপ্রতি ১১ পয়সা লোকসান দেখানো হয়েছে। যার ফলে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এটিকে লভ্যাংশ না দেওয়ার জন্য জালিয়াতি ও বিনিয়োগকারীদের ঠকানো হয়েছে বলে দাবি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছে, তাদের ঠকানো হয়েছে। বছরের প্রথম ৯ মাসে ব্যয়ের তুলনায় অধিক আয় হয়েছে। জীবনবিমা তহবিলের আকার বেড়েছে। কিন্তু বছর শেষে ইপিএস লোকসান দেখানো হয়েছে লভ্যাংশ না দেওয়ার জন্য। এমন জালিয়াতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য হতাশার। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিৎ বিষয়টি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

এবিষয়ে জানতে চাইলে চার্টার্ড লাইফের কোম্পানি সচিব জিএম রাশেদ এসিএস গণমাধ্যম কে  বলেন, এমন কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। তবে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে কোনো ভুল নেই, স্বচ্ছ। আর লভ্যাংশ দেওয়া-না-দেওয়া সেটা কোম্পানি ঠিক করে না, একচুয়াল ভ্যালুয়েশনের মাধ্যমে ঠিক হয়। হিসাববছরের একচুয়াল ভ্যালুয়েশনে ৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লায়াবিলিটি বা দেনা বেশি দেখানো হয়েছে। সেই অনুযায়ী গত বছরের সাথে তুলনা করে এ বছরে লোকসান হয়েছে। যেকারণে লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ নেই।

এবিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার (২০ জুলাই) নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম অর্থসংবাদকে বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখে কোনো ধরনের জালিয়াতির প্রমাণ মিললে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বিএসইসি।

কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন সূত্রে, সমাপ্ত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৪ হিসাববছরে শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১১ পয়সা। যা গত বছরের একই সময়ে আয় ছিলো ১৬ পয়সা। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৯৪ পয়সায়। মোট প্রিমিয়াম আয় ৮৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। নিট প্রিমিয়াম আয় ৮৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এসময় জীবন বীমা তহবিল ৬৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় পৌঁছায়। আর মোট সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে ১১ কোটি ৪২ লাখ টাকা পৌঁছেছে।

হিসাববছরের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ জুলাই। এরআগে বছরে (২০২৩) কোম্পানিটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাত্র ২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিলো।

এরআগে, হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি’২৪-মার্চ’২৪) শেষে কোম্পানিটির জীবন বীমা তহবিল ছিলো ৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা, আগের হিসাববছরের একই সময় শেষে যা ছিল ৫০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির জীবন বীমা তহবিলের আকার বেড়েছে ৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির জীবন বীমা তহবিলের আকার বাড়ে ৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। এছাড়া, তৃতীয় প্রান্তিক শেষে জীবন বীমা তহবিলের আকার বাড়ে ১১ কোটি ০৪ লাখ টাকা। সব প্রান্তিকে আয় বাড়লেও বছর শেষে শেয়ারপ্রতি ১১ পয়সা লোকসানে কোম্পানিটি।

এদিকে, সব প্রান্তিকে আয় বাড়লেও বছর শেষে লোকসান দেখানো প্রতিষ্ঠানটির নতুন বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি’২৫’-মার্চ’২৫) আবারও আয় বেড়েছে। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির জীবন বীমা তহবিলের আকার দাড়িয়েছে ৬৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, আগের হিসাববছরের একই সময় শেষে যা ছিল ৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির জীবন বীমা তহবিলের আকার বেড়েছে ৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৭ কোটি ৫০ লাখ। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালক, ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ২৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।