ঢাকা   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

শরিতুল্যাহ মাস্টারের নামে তিস্তা সেতুর নামকরণ চায় গাইবান্ধাবাসী

শরিতুল্যাহ মাস্টারের নামে তিস্তা সেতুর নামকরণ চায় গাইবান্ধাবাসী

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা শরিতুল্যাহ মাস্টারের নামে হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুর নামকরণ করার দাবি তুলেছে গাইবান্ধাবাসী। রোববার (২০ জুলাই) দুপুরে গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডে গানাসাস মার্কেটের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এই দাবি তোলা হয়। 

মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, হরিপুর-চিলমারী সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি শরিতুল্যাহ মাস্টারের ৩০ বছরের স্বপ্ন ও আত্মত্যাগের প্রতীক। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি এককভাবে এই সেতুর জন্য আন্দোলন শুরু করেন, জনগণকে সংগঠিত করে 'তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটি' গঠন করেন এবং সরকারের কাছে বারবার তুলে ধরেন সেতুর প্রয়োজনীয়তা।

বক্তারা দাবি করেন, এই সেতু বাস্তবায়নে শরিতুল্যাহ মাস্টার ছিলেন মূল চালিকাশক্তি। তার নিরলস প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বে এই বৃহৎ প্রকল্প আলোর মুখ দেখে। তাই তার স্মৃতি অম্লান রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে তার দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত করতে সেতুটির নাম 'শরিতুল্যাহ মাস্টার তিস্তা সেতু' রাখা হোক।

এ সময় বক্তৃতা দেন কমিটির আহ্বায়ক শামীম মন্ডল, সদস্য সচিব শাহীন মিয়া, শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, ব্যবসায়ী জিল্লু হাকিম, ডা. ফুয়াদ ইসলাম ও শিক্ষার্থী রত্ম প্রমুখ। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি নির্মিত হয়েছে সৌদি সরকারের অর্থায়নে, চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে। ৮৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১,৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতুটি বাস্তবায়নে সরাসরি তদারক করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। দেশের ইতিহাসে এটিই এলজিইডির সর্ববৃহৎ প্রকল্প।

সেতুটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক্সেস সড়ক, যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু। বেলকা বাজার, পাঁচপীর, ধর্মপুর, হাট লক্ষ্মীপুর, সাদুল্যাপুর ও ধাপেরহাটসহ অন্তত ১০টি বাজার ও মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে পুরো সুন্দরগঞ্জ ও চিলমারী অঞ্চল।

দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সেতুটি চালু হলে শুধু দুই উপজেলার মানুষ নয়, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। নানা জটিলতায় কয়েকবার সময় পরিবর্তনের পর অবশেষে বাস্তবে রূপ নিয়েছে তিস্তা নদীর বুকে দৃঢ় এই সংযোগ। এরআগে গেল বছরের ৩০ নভেম্বর একই সেতু পরিদর্শনে আসেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ। সে সময়ে তিনি চলতি বছরের মার্চে সেতুটি উদ্ধোধনের কথা জানিয়েছিলেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ জুলাই সেতু পরিদর্শন আসেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। পরিদর্শন শেষে   তিনি চলতি মাসেই সেতু উদ্বোধনের কথা জানান।

সব ঠিক থাকলে আগামী ২ আগস্ট সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। দেশে এর আগে আর কখনো এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়নি এলজিইডি। সে হিসেবে এটি চালু হলে যেমন দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে দুই জেলার লাখো মানুষের। সেই সঙ্গে ব্যতক্রমী এক মাইলফলকে পা রাখবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।