ঢাকা   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

একাই চার দপ্তরের দায়িত্বে ইউএনও নাহিদুর, প্রশাসন থেকে সমাজ—সর্বত্র ছাপ

গ্রামবাংলা

মইনুল হক মৃধা, রাজবাড়ী:

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ১৯ জুলাই ২০২৫

একাই চার দপ্তরের দায়িত্বে ইউএনও নাহিদুর, প্রশাসন থেকে সমাজ—সর্বত্র ছাপ

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে একাই চারটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান। ৩৫তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা ইউএনও কার্যালয়ের পাশাপাশি গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের প্রশাসক, গোয়ালন্দ পৌরসভার প্রশাসক এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর গোয়ালন্দ উপজেলার ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন তিনি। যোগদানের পর থেকেই প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে দক্ষতা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। দাপ্তরিক কাজের বাইরেও তিনি উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন সফলভাবে।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর উপজেলা চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়। এরপর উপজেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন ইউএনও নাহিদুর রহমান। একইভাবে, পৌর মেয়র অপসারিত হলে তিনিই পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন। এছাড়া, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান গত ১ মে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচ মাসের ‘সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট’ প্রশিক্ষণে যান। ফলে তার দপ্তরের দায়িত্বও বর্তায় ইউএনও নাহিদুর রহমানের উপর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইউএনও অফিস ও উপজেলা পরিষদ একই ভবনে অবস্থিত হওয়ায় তিনি সহজেই দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করছেন। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন তিনি পৌরসভা ও উপজেলা ভূমি অফিসে বসেন, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারেন। প্রতিদিন নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সামলে তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসে থাকেন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।

উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কেবল প্রশাসনিক নয়, সামাজিক উদ্যোগেও সক্রিয় ইউএনও নাহিদুর রহমান। তিনি এক ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক পরিবারের বাক প্রতিবন্ধী মেয়ের বিয়েতে সহায়তা, খেলাধুলার মাঠ রক্ষায় ভূমিকা, বাঁশের সাঁকো সংস্কার, "তারুণ্য ২৪" নামে গণগ্রন্থাগার উদ্বোধন, পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ, কৃষকদের মাঝে গামবুট বিতরণ, অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং উপজেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নৃত্য প্রশিক্ষণ চালু করার মতো ব্যতিক্রমী কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে ইউএনও নাহিদুর রহমান বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী আমার ওপর চারটি দপ্তরের দায়িত্ব পড়েছে। আমি চেষ্টা করছি প্রতিটি দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে। যদিও চাপ অনেক, তবে সরকারি বিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতেই হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশিক্ষণ শেষে ফিরলে চাপ কিছুটা কমবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই আমি জনগণের জন্য আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি। আমার কাছে দায়িত্ব বড় বা ছোট নয়, আন্তরিকভাবে কাজ করাটাই গুরুত্বপূর্ণ। যতদিন এখানে আছি, ততদিন জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাব। কেউ যেন কোনো হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করাই আমার অঙ্গীকার।”

ইউএনও নাহিদুর রহমানের এই বহুমুখী দায়িত্ব পালন, কর্মদক্ষতা ও জনবান্ধব মনোভাব স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। প্রশাসনকে গতিশীল ও মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তার কার্যক্রম উপজেলাবাসীর মাঝে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়েছে।