
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনার পর জারি করা কারফিউ ১৪ ঘন্টার জন্য শিথিলের পর পুনরায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। আজ শনিবার রাত ৮ টা থেকে আগামীকাল সকাল ৬ টা পর্যন্ত সমগ্র গোপালগঞ্জ জেলা জুড়ে কারফিউ জারী করা হযেছে।
শনিবার বিকালে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান সাক্ষরিত এক পত্রে কারফিউ জারির আদেশ প্রদান করেন।
আদেশে বলা হয় গোপালগঞ্জ জনশৃঙ্খলা, শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগনের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে অদ্য ১৯ জুলাই ২০২৫ তারিখ রাত ৮ ঘটিকা থেকে আগামীকাল সকাল ৬ ঘটিকা পর্যন্ত সমগ্র গোপালগঞ্জ জেলায় সান্ধ্য আইন বা কারফিউ বলবৎ থাকবে। আদেশে আরো বলা হয় জরুরি পরিষেবা যেমন-এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা এবং কারফিউ পাশধারী গণমাধ্যম কর্মী কারফিউ এর আওতামুক্ত থাকবে।
তবে দুইদিন ধরে চলা কারফিউ আজ ১৪ ঘন্টা শিথিল হলেও কোটালীপাড়া উপজেলায় জনমনে বিরাজ করছে গ্রেফতার আতঙ্ক। রাতে গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকেই ঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে পুলিশ বলছে, নিরাপদ কেউ যেন আটক না হয় সে দিকে খেয়াল রেখেই অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে নতুন করে শনিবার রাত ৮ থেকে কারফিউ জারি হওয়ায় সন্ধ্যার পরই বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ করে ব্যবসায়ীদের বাসায় চলে যেতে দেখা যায়। ঘাঘর বাজারের ব্যবসায়ী রনজিত সাহা বলেন, এলাকার বর্তমান পরিস্থিতে ঝামেলা এড়াতে সন্ধ্যায়ই দোকান বন্ধ করে দেই।
মহুয়া মোড় এলাকায় কথা হয় রাইসুলে নামে এক যুবকের সাথে তিনি বলেন, জরুরি কাজে ঘাঘর বাজারে এসেছিলাম। গোপালগঞ্জে ঘটনার পর এখনো জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কখন জানি গ্রেপ্তার হই। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় রাতে অভিযান পরিচালনা করায় সাধারণ মানুষ অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়া।
তারাশী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হায়দার আলী নামে এক ভ্যানচালক বলেন, গত তিনদিন ধরেই ভ্যান চালাচ্ছি। তবে সেই পরিমান ইনকাম হচ্ছে। যাত্রীরা সবাই ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের উপস্থিতি ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বরিশাল থেকে গোপালগঞ্জ প্রবেশের গৌরনদী-গোপালগঞ্জ সড়কের বিভিন্নস্থানে গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করে। এদিন কোটালীপাড়া উপজেলার ওয়াবদারহাটে জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। এই বিক্ষোভ মিছিলের কারনে শুক্রবার কোটালীপাড়া থানার এস আই উত্তম কুমার সেন বাদী হয়ে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র অহিদুল ইসলাম হাজরা, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমান হাজরা, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাজরা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি স্বপন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক শামীম দাড়িয়াসহ ১শত ৫৫ জনকে জ্ঞাত ও ১ হাজার ৫ শত জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুলিশ উপজেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে আজ দুপুরে ১০ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও গতকাল শুক্রবার ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।