১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার, ০৯:২৭ এএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পর্ষদ গেল সপ্তাহে চার কোম্পানিকে মূল মার্কেট থেকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসিতে পাঠানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে পাঠিয়েছে। একইভাবে আরো তিন স্বল্প মূলধনি কোম্পানি তালিকাচ্যুতির প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে বস্ত্র খাতের দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেড, পাট খাতের জুট স্পিনার্স লিমিটেড ও চামড়া খাতের সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড। এ মাসের মধ্যেই কোম্পানি তিনটিকে তালিকাচ্যুত করার বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তাই এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট শেয়ার বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব এ তিন কোম্পানির শুনানি শেষ করতে চাই। যদি শুনানি শেষে তালিকাচ্যুত করার যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে আমরা এ তিন কোম্পানিকে মূল মার্কেট থেকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসিতে পাঠাতে বিএসইসির অনুমোদন চাইব। একইভাবে ডিএসইর শর্টলিস্টে থাকা ৩০ কোম্পানির ক্ষেত্রেও পর্যায়ক্রমে অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মূল মার্কেটে আমরা এমন কোনো নন-পারফর্মিং কোম্পানি রাখতে চাই না, যাদের কারণে ভালো ও মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগে মানুষ নিরুৎসাহিত হয়। কোম্পানিগুলোকে সরাসরি তালিকাচ্যুত করার বদলে মূল মার্কেট থেকে ওটিসিতে পাঠানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তালিকাচ্যুত হওয়ার পরও যেন এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের সুযোগ থাকে, সেজন্য ওটিসিতে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আলোচ্য তিন কোম্পানির মধ্যে আবদুল আউয়াল মিন্টুর মালিকানাধীন মাল্টিমোড গ্রুপের কোম্পানি দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরেই লোকসানে রয়েছে। পাশাপাশি এর শেয়ারহোল্ডাররাও বছরের পর বছর লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। ডিএসইতে সর্বশেষ গতকাল কোম্পানিটির শেয়ার ৩৯ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়।
শামস গ্রুপের কোম্পানি জুট স্পিনার্স লিমিটেড পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই লোকসান গুনছে। কোম্পানিটির উদ্যোক্তারা এর অবস্থা পরিবর্তনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। শেয়ারহোল্ডাররাও বঞ্চিত হচ্ছেন লভ্যাংশ থেকে। ডিএসইতে সর্বশেষ গতকাল কোম্পানিটির শেয়ার ১০৩ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়।
চামড়া খাতের কোম্পানি সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেডও দীর্ঘদিন ধরে লোকসানের কবলে রয়েছে। এর শেয়ারহোল্ডাররাও লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। ডিএসইতে সর্বশেষ গতকাল কোম্পানিটির শেয়ার ৫৬ টাকায় লেনদেন হয়।
উল্লেখ্য, ডিএসইর লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫-এর ৫১(১)(এ) ধারা অনুসারে বিনিয়োগকারীদের পাঁচ বছর ধরে লভ্যাংশ না দেয়া, টানা তিন বছর ধরে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা, ঐচ্ছিকভাবে কোম্পানির অবসায়ন কিংবা টানা তিন বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকা, টানা তিন বছর ধরে লিস্টিং ফি’সহ অন্যান্য ফি প্রদান না করা এবং লিস্টিং রেগুলেশন কিংবা অন্য যেকোনো সিকিউরিটিজ আইন পরিপালনে ব্যত্যয়ের কারণে কমিশন ও স্টক এক্সচেঞ্জ যেকোনো কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত করতে পারবে। এসব বিষয় বিবেচনা করে জেড ক্যাটাগরির ৩০ কোম্পানির একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে ডিএসই। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন খাতের ১৫ কোম্পানির ব্যবসায়িক পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। এসব কোম্পানির মধ্যে উপরের তিন কোম্পানিও ছিল। গত বছরের জুলাইয়ের ১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকায় রহিমা ফুড ও মডার্ন ডায়িংকে তালিকাচ্যুতির সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসইর পর্ষদ। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক লিমিটেড, মেঘনা পিইটি লিমিটেড ও সাভার রিফ্রাক্টরিজ লিমিটেডকে মূল মার্কেট থেকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসিতে পাঠানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করে বিএসইসির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেলে এ চার কোম্পানিকে মূল মার্কেট থেকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসিতে পাঠিয়ে দেবে ডিএসই।
ডিএসই কর্তৃপক্ষ বলছে, দীর্ঘদিন ধরে এসব কোম্পানির পারফরম্যান্স অত্যন্ত হতাশাজনক। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ার পাশাপাশি এগুলোর উৎপাদনও বন্ধ আছে। অথচ প্রায়ই এসব কোম্পানির শেয়ারদর কোনো কারণ ছাড়াই লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে। কারসাজি চক্রও এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সাধারণ মানুষ না বুঝে এসব শেয়ার কিনে বড় লোকসানের ঝুঁকিতে পড়ে। জেড ক্যাটাগরির এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারের জন্য জঞ্জাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারের স্থিতিশীলতা নষ্টের জন্যও এসব কোম্পানি অনেকাংশে দায়ী। এ ধরনের কোম্পানি পুঁজিবাজারে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।