১২ ডিসেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার, ০১:২২ পিএম
শেয়ার বিজনেস24.কম
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানি সমাপ্ত গত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে হিসাব মান লঙ্ঘন করে সম্পদ ও মুনাফা বাড়িয়ে দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে নিরীক্ষকরা।
এগুলো হলো- পাট খাতের কোম্পানি সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ,তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক (আইএসএনএল) এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের বিডি ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডস।
সবগুলো কোম্পানির হিসাবেই আরও বেশকিছু অনিয়ম ও গরমিল পাওয়া গেছে বলে সোমবার নিরীক্ষক কোম্পানিগুলোর বরাত দিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।
২০১৭ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া হিসাব বছরের ত্রুটিপূর্ণ এসব আর্থিক প্রতিবেদন দেখে প্রভাবিত হয়ে কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন বিনিয়োগকারীরা।
এসব অনিয়ম ও গরমিলের বিষয়গুলো এখন খতিয়ে দেখবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে আইন লঙ্ঘন প্রমাণিত হলে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ
নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান বলেছে, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির সঠিক আর্থিক অবস্থা দেখানো হয়নি। কোম্পানিটি কিছু সম্পদের দাম নতুন করে বাড়ালেও বাড়তি মূল্যের উপর কোনো অবচয় দেখায়নি, যার ফলে তাদের মোট সম্পদ যা থাকার কথা তার চেয়ে বেশি দেখানো হয়েছে।
আবার অবচয় না ধরায় খরচ কম দেখানোর ফলে মুনাফার পরিমাণও বেড়েছে। কোম্পানিটি প্রায় ৫৬ লাখ টাকার মতো অদৃশ্য সম্পদ যোগ করার ফলেও মুনাফা বেড়েছে।
এছাড়া সোনালী আঁশ কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ অবৈধভাবে ব্যবহার করেছে; উপরন্তু কোনো সুদ দেয়নি। কোম্পানিটি কর দায়ের তথ্য সঠিকভাবে রাখেনি; আইন অনুয়ায়ী সব সম্পদের হিসাব খাতায় নিবন্ধিত রাখার কথা থাকলেও তা পালন করেনি।
ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক
হিসাব বছর শেষে ১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা পাওনা দেখিয়েছে ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক (আইএসএনএল)। তবে এই পাওনা কতদিন ধরে রয়েছে তা প্রকাশ না করে কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।
বিভিন্ন জনের কাছে ৪৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পাওনা হিসাবে কয়েক বছর ধরে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে দেখানো হচ্ছে। হিসাব মান অনুযায়ী, অবচয় ধরে প্রতিবেদন তৈরির বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করা হয়নি।
দেনাদারদের কাছ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নামমাত্র পাওনা আদায়ের পরেও অবচয় না ধরায় মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হয়েছে।
এছাড়া হিসাব মান অনুসরণ না করে কোম্পানিটি থেকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা বা লোকসান দেখানো হয়নি।
বিডি ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডস
আর্থিক প্রতিবেদনে মজুদ পণ্য হিসাবে ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার উল্লেখ থাকলেও তার পক্ষে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি বিডি ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোডস কর্তৃপক্ষ। নিরীক্ষক স্বশরীরে গিয়েও মজুদ পণ্যের অস্তিত্ব পায়নি।
এর ফলে বাস্তবে অস্তিত্বহীন পণ্যকে হিসাবে ধরে প্রকৃত পরিমাণের চেয়ে সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখানো হয়েছে।
কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদের অবচয় না ধরেও মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হয়েছে।
শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বাবদ ৩৩ লাখ টাকা পাওনা থাকলেও কোম্পানিতে এ জাতীয় কোনো তহবিলের অস্তিত্ব পায়নি নিরীক্ষক।
এই তিন কোম্পানির বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, “যেহেতু তারা সাধারণ মানুষের টাকা ব্যবহার করেছে, তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের কাছে কারণ জানতে চাইবে। যদি কোনো আইন ভঙ্গ প্রমাণিত হয়, তবে তাদের শাস্তি হবে।”
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।