facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিক সেবা দেওয়া কে এই লাকি


৩০ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার, ১১:২২  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিক সেবা দেওয়া কে এই লাকি

মানিকগঞ্জ শহরের খালপাড় ব্রিজ এলাকায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে ট্রাফিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন লাকি আক্তার। বিনিমিয়ে তিনি কোনো সহায়তা নেন না।

স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও প্রতিদিন তাদের সঙ্গেই পাল্লা দিয়েই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করেন লাকি। তাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি রোদ-বৃষ্টিও। এর জন্য তিনি হাত পাতেন না। কেউ টাকা-পয়সা অথবা খাবার দিতে চাইলেও তিনি তা নেন না।

ওই এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল মনির হোসেন বলেন, তাকে কখনও বিশ্রাম এবং খাওয়া-দাওয়া করতেও দেখি না। সারাক্ষণ হাতের ইশারায় ছোট লাঠি দিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি কথাও বলেন কম।

সব সময় ট্রাফিক পুলিশ না থাকলেও মাঠে ঠিকই লাকিকে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে দেখা যায় নিয়মিত-জানালেন স্থানীয় দোকানদাররা।

হ্যালোবাইক চালকরা জানান, তার সিগন্যালে খালপাড় ব্রিজ এলাকায় ছোটখাটো অনেক দুর্ঘটনা ও যানজট কমে গেছে।

মানিকগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) ফারুক হোসেন বলেন, প্রশিক্ষিত লোকের মতোই ট্রাফিক সেবা দিচ্ছেন লাকি। বিনিমিয়ে কখনও তিনি কিছু চান না। মাঝে মধ্যে কর্তব্যরত ট্রাফিক সদস্যরা তাকে খাবার দেন। স্বেচ্ছাশ্রমের বিষয়টি জেলার পুলিশ সুপারও জানেন। লাকি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানান তিনি। তা না হলে কোনো বেতন-ভাতা ছাড়া এভাবে কাজ করতেন না।

লাকি আক্তার কাজ বাদ দিয়ে কোনো কথাই বলতে রাজী হচ্ছিল না। এক পর্যায়ে দুটি-একটি কথা বলেন। তার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন।

তিনি জানান, তিনি এ কাজ নিজের ইচ্ছেতেই করেন। চাকরির মতো এ কাজ করতে তার ভালো লাগে।

তার বাবাও পুলিশে চাকরি করতেন জানিয়ে লাকি বলেন, নদীতে ভেঙে গেছে বাড়ি ঘর। বাবার চাকরির জমানো টাকা আছে। যা দিয়ে নিজে একটি বাড়ি করবেন।

লাকি জানান, আগে সারাদিন পানি খেয়ে কাজ করতেন। এর ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। গত রোজার ঈদের পর থেকে চিড়া নয়তো মুড়ি নিয়ে আসেন, তাই খান। বাড়ি গিয়ে সন্ধ্যাং রান্না করে খান।

লাকি আক্তারের বাড়ি মানিকগঞ্জ শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে ঘিওর উপজেলার কুস্তা গ্রামে। বাবা তফিজ উদ্দিন শিকদার পুলিশ সদস্য ছিলেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট লাকি। ছোট বেলাতেই লাকির বাবা-মা মারা যান। বিয়ের ৯ মাসেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান লাকির স্বামী। নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে তাদের বসতভিটা। এরপর মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন তিনি। তবে তিনি পুরোপুরি অসুস্থ নয়।

বাবার পেশাকে ভালোবেসে ও দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর কথা ভেবে সড়কে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন লাকি জানান স্থানীয়রা।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: