facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

সুইস ব্যাংকে কমেছে বাংলাদেশের অর্থ


২৯ জুন ২০১৮ শুক্রবার, ১১:৪০  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


সুইস ব্যাংকে কমেছে বাংলাদেশের অর্থ

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের পরিমাণ কমেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের নামে পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফঁদ্ধা। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফঁদ্ধা, যার পরিমাণ বর্তমানের বিনিময় হার অনুযায়ী ৫ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগের বছরের তুলনায় ২০১৭ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে থাকা টাকার পরিমাণ কমেছে ২৭ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর কাছে দেনা এবং গ্রাহক আমানত- উভয় ক্ষেত্রে অর্থ থাকার পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে কম। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থ আগের বছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি ছিল।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) গতকাল বৃহস্পতিবার সে দেশের ব্যাংকগুলোর সার্বিক পরিসংখ্যান নিয়ে `ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৭` নামে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে সে দেশের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পাওনা অর্থের হিসাব রয়েছে। এতে দেখা যায়, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বিদেশিদের আমানত সামগ্রিকভাবে কমেছে। ২০১৭ সালে বিদেশি গ্রাহকদের আমানত ৪০ বিলিয়ন ফঁদ্ধা কমে ৫৯৫ বিলিয়ন হয়েছে। কয়েক বছর বৃদ্ধির পর ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকে ভারতের নামে অর্থের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৬৬ কোটি ৪৮ লাখ ফ্রাঁ। তবে ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ফঁদ্ধা।

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে থাকা অর্থের মধ্যে একটি অংশ পাচার হয়ে থাকে বলে সন্দেহ করা হয়। সাধারণত ধারণা করা হয়, নির্বাচনের বছরে অর্থ পাচার বাড়ে। সে বিবেচনায় এবার সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ বেশি হবে বলে অনেকের ধারণা ছিল। অবশ্য ২০১৮ সালের হিসাব পাওয়া যাবে আগামী বছরের মাঝামাঝি।

একসময় সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো অবৈধ অর্থ রাখার নিরাপদ স্থান মনে করা হলেও পাচারকারীদের গন্তব্য এখন নানা দেশ। এ বিবেচনায় সুইস ব্যাংকের পরিসংখ্যান দিয়ে বাংলাদেশের অর্থ পাচারের প্রবণতাকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যাবে না। একসময় গ্রাহকের তথ্য গোপন রাখার বিবেচনায় সুইজারল্যান্ড অর্থ পাচারের খুব আকর্ষণীয় গন্তব্য হলেও কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক নানা চাপের মুখে দেশটি কিছুটা নমনীয় হয়েছে। উপযুক্ত প্রমাণসহ কোনো দেশ তথ্য চাইলে ক্ষেত্রবিশেষ দেশটি সহায়তা করছে। তবে বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত কোনো তথ্য পায়নি।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে ২০১৭ সাল শেষে ৩ কোটি ৩৯ লাখ ফ্রাঁ বাংলাদেশিদের নামে আমানত হিসেবে রয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৮৮ কোটি টাকা। আগের বছর ব্যক্তি আমানত ছিল ৪০০ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। এর আগের কয়েক বছর এর চেয়ে বেশি ছিল।

মতামত জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (বিএফআইইউ) প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে থাকা অর্থের বেশিরভাগই বাণিজ্যকেন্দ্রিক। এ দেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা হিসাবে যা উল্লেখ করা হয়। গ্রাহকের আমানত হিসাবে যে অর্থ থাকে তার মধ্যে বিদেশে চাকরি করেন এমন বাংলাদেশিদের অর্থও রয়েছে। গ্রাহক আমানতের একটি অংশ পাচার হতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়।

এসএনবির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের নামে সুইস ব্যাংকগুলোতে `দায়` হিসাবে সরাসরি থাকা অর্থের পরিমাণ ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফঁদ্ধা। এর বাইরে বিভিন্ন সম্পদ ব্যবস্থাপক অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রয়েছে আরও ১৯ লাখ ফঁদ্ধা। পরিসংখ্যান সারণিতে গত ১০ বছরের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালের অঙ্ক সর্বোচ্চ। টাকার অঙ্কে ২০১৫ সাল শেষে সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। এর পর ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ছিল যথাক্রমে ৩ হাজার ১৬০ কোটি ও ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

কয়েক বছর ধরে সুইস ব্যাংকে টাকার পরিমাণ নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। গত বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদকে `অতিশয়োক্তি` বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে যে লেনদেন হয়, তা উলেল্গখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বাস্তবে এটি মোটেই অর্থ পাচার নয়। তবে কিছু অর্থ পাচার হয়। সেটি অতি যৎসামান্য। ব্যক্তি খাতে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক যারা বিদেশে কাজ করছেন অথবা স্থায়ীভাবে অবস্থান করছেন, তাদের হিসাবও অন্তর্ভুক্ত আছে।

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় বিভিন্ন দেশের বিপরীতে `দায়` অথবা `গ্রাহকের কাছে দেনা` খাতে থাকা অর্থকে এসএনবি সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে রাখা গচ্ছিত অর্থ হিসেবে বিবেচনা করে। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের বদলে অন্যের নামে অর্থ গচ্ছিত রেখে থাকে, তাহলে তা এই হিসাবের মধ্যে আসেনি। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক দেশের নাগরিকই মূল্যবান শিল্পকর্ম বা দুর্লভ সামগ্রী সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে রেখে থাকেন।

গত বছর মে মাসে প্রকাশিত ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) রিপোর্টে বাংলাদেশের টাকা পাচারের তথ্য রয়েছে। জিএফআইর তথ্যমতে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে ৯১০ কোটি ডলার বা প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেশি মূল্য ও পরিমাণ দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) ও রফতানির ক্ষেত্রে কম মূল্য ও পরিমাণ দেখানোর (আন্ডার ইনভয়েসিং) মাধ্যমেই প্রায় ৮০ ভাগ অর্থ পাচার হয়। জিএফআইর হিসাবে ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: