facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

সীতাকুণ্ডে যেভাবে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান


১৫ মার্চ ২০১৭ বুধবার, ১০:৫৪  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


সীতাকুণ্ডে যেভাবে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান

কাপড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেওয়া এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে বাড়িওয়ালার সন্দেহ থেকে পাশাপাশি দুই ওয়ার্ডে দুটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।

বুধবার বিকেলে সীতাকুণ্ড পৌর এলাকার ৬ নম্বর নামার বাজার ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকায় ‘সাধন কুটির’ নামের এক দোতলা বাড়িতে প্রথম জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে।

সেখান থেকে গ্রেপ্তার জঙ্গি দম্পতি জসিম ও আর্জিনার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাশের ৫ নম্বর প্রেমতলা ওয়ার্ডের ‘ছায়ানীড়’ ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। দ্বিতীয় আস্তানা থেকে জঙ্গিদের ছোড়া গ্রেনেডে এক পুলিশ কর্মকর্তা আহত হওয়ার পর অভিযানে যোগ দিয়েছেন সোয়াট সদস্যরা।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাং শফিকুল ইসলাম বলেন, নামার বাজারের বাসায় গ্রেপ্তার দুজন জেএমবি সদস্য। সেখান থেকে সুইসাইড ভেস্ট, পিস্তল ও বিস্ফোরক তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

‘সাধন কুটির’ নামের দুই তলা ওই ভবনের মালিক সুভাষ চন্দ্র দাশ জানান, তার বাড়িতে প্রতি তলায় তিনটি করে মোট ছয়টি ইউনিট। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি টেলিফোনে যোগাযোগ করে জসিম নিজেকে কাপড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন এবং নিচ তলার একটি ইউনিট ভাড়া নিতে চান।

সাড়ে ছয় হাজার টাকা ভাড়া ঠিক হওয়ার পর বাড়ির মালিক সুভাষ তার নতুন ভাড়াটিয়ার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি চান। পরে জসিম ২ মার্চ এসে একটি এনআইডির কপি দিয়ে যান।

ওইদিন সে অনুরোধ করে, তার পরিবারের সদস্যরা ১২ মার্চ আসবে। এর আগে তার দুজন ছোট ভাই বাসায় থাকবে। আমি রাজি না হয়ে তাকে বলি, পরিবারের সদস্যরা যখন আসবে, তখনই যেন সবাই আসে।

সুভাষ জানান, জসিম যে এনআইডি দেন, তাতে তার বাড়ির ঠিকানা লেখা ছিল কক্সবাজারের রামু। সেখান থেকেই মালামাল আসবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু ৪ মার্চ মালামাল আনার সময় রিকশা চালককে জিজ্ঞেস করে সুভাষ জানতে পারেন, মালামাল আনা হয়েছে পাশের ওয়ার্ড প্রেমতলা থেকে। তখনই প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হয়। তাই আমার স্ত্রীকে নজর রাখতে বলি।

এর মধ্যে জসিম পরিবার নিয়ে ১২ মার্চ বাসায় ওঠেন। তার বাসার দরজা-জানালা দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকত এবং রাতের বেলায় লোকজন আসা-যাওয়া করত বলে বাড়িওয়ালার স্ত্রী ছবি রানি দাশ সাংবাদিকদের জানান।

বাড়িওয়ালা সুভাষ বলেন, গত রোববার ওই বাসায় গিয়ে দেখি বেডরুমে দুই ছেলে, তারা নামি জসিমের ছোট ভাই। এক জায়গায় কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা দেখে সরাই। ভেতরে দেখি অনেক সার্কিট আর গোলাকার ধাতব বস্তু।

সুভাষের প্রশ্নের জবাবে জসিম দাবি করেন, কাপড়ের পাশাপাশি তার লাইটিংয়েরও ব্যবসা রয়েছে। সেখানেই এসব সার্কিট কাজে লাগে।

পরে আমি তার কাছ থেকে সার্কিটের নমুনা নিয়ে পরিচিত এক মেকানিককে দেখাই। সে জানায়, এগুলো টাইম কার্ড; ফ্রিজে ব্যবহার করা হয়, আবার দূর নিয়ন্ত্রণের কাজেও লাগে।

এসব দেখে সুভাষের সন্দেহ আরও বাড়ে। বুধবার জসিমের দেওয়া সেই এনআইডির কপি নিয়ে শহরের একটি কম্পিউটারের দোকানে যান তিনি।

“ওই দোকানদার ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাই করে জানায়, ওই আইডি নম্বর অন্য নামের এক লোকের। জসিম বলে কারও নয়।”

‘ভুয়া’ এনআইডির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর দুই বন্ধু ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জসিমের বাসায় গিয়ে তাদের তখুনি বাসা ছেড়ে দিতে বলেন সুভাষ।

“তারা বাসা ছাড়তে রাজি হচ্ছিল না। তখন সামনের ঘরের খাটের নিচে একটি সুটকেস দেখে সেটা টেনে বাইরে আনার সময় এক জোড়া গামবুট পাই। ওই বুটের ভেতরে পিস্তল দেখে আমি চিৎকার দিলে এলাকার লোকজন ছুটে আসে।”

ঘরের ভেতরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে।

সুভাষ বলেন, বাড়িতে পুলিশ দেখে আর্জিনা ‘কোমরে হাত দেন’। পরে দেখা যায় তার কোমরে ‘বিশেষ ধরনের বেল্ট’ বাঁধা। পুলিশ সেটি খুলে নেয়।

সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মাহবুব মিল্কি বলেন, “ওই নারীর কোমরে সুইসাইড বেল্ট ছিল। সেটি আমরা খুলে নিয়েছি।”

জসিম ও আর্জিনাকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের তিন মাস বয়সী শিশুকেও সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (উত্তর) মসিউদ্দোল্লাহ রেজা বলেন, বাড়িওয়ালা জসিমের দুই ছোট ভাইয়ের কথা বললেও তাদের ওই সময় বাসায় পাওয়া যায়নি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: