facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ মার্চ মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে রবি


০৬ নভেম্বর ২০১৭ সোমবার, ০২:২১  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে রবি

বেসরকারি মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ফাঁকি প্রতিষ্ঠানটির এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় রাজস্ব ফাঁকি।

প্রতিষ্ঠানটির ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)-মূল্য সংযোজন কর শাখা।

প্রতিষ্ঠানটি পৃথকভাবে এসব রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। ফাঁকিকৃত রাজস্ব পরিশোধে রবি আজিয়াটাকে দাবিনামা জারি (ডিমান্ড নোট) করেছে এলটিইউ।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এলটিইউ-এর জারি করা একটি দাবিনামায় দেখা যায়, রবি আজিয়াটা লিমিটেড ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে ৭১১ কোটি ৮২ লাখ ১১ হাজার ৯১৭ টাকা ৪ পয়সা ফাঁকি দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, রবি আজিয়াটা লিমিটেড এলটিইউ এর আওতাভুক্ত একটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। রবির মূসক নিরীক্ষার জন্য এলটিইউ চলতি বছর ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।

কমিটি রবি আজিয়াটার ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ বছরের দাখিলপত্র নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে ২৯ অক্টোবর প্রতিবেদন দাখিল করেন।

নিরীক্ষায় উঠে আসে, প্রতিষ্ঠানটি এসএপি সফটওয়্যার খাতে ৫৫৩ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৫২৮ টাকা ২০ পয়সার মূসক ও ১৫৮ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৮ টাকা ৮৪ পয়সার উৎসে মূসক কম পরিশোধ করে ফাঁকি দিয়েছে। এ ফাঁকি উৎঘাটনে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবছরের ডাটাবেজ ও লেজার থেকে নেয়া তথ্য পর্যালোচনা করা হয়।

রবি আজিয়াটা লিমিটেডকে দেওয়া অপর একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিধি বর্হিভূতভাবে ১১৬ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৬২ টাকা ২৫ পয়সা রেয়াত নেওয়ার মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

দাখিলপত্র নিরীক্ষা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি নিরীক্ষাকালীন সময়ে ব্যাটারি, ক্যাবল, প্রিন্টেড বোর্ড, রাউটার, সুইচ ইত্যাদি আমদানির সময় বিধি বর্হিভূতভাবে রেয়াত গ্রহণ করে ৪ বছরে এ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এসব পণ্য আমদানি করলেও সঠিকভাবে ক্রয় পুস্তকে এন্ট্রি করেনি। যা মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৯(১)(ঙ) অনুযায়ী যা বাতিলযোগ্য।

অপর চিঠিতে বলা হয়, মোবাইল অপারেটরটি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৩৪৮ টাকা ৬৭ পয়সার মূসক ফাঁকি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এ সময়ের মধ্যে ইন্টারকানেকশন চার্জের ওপর এ বিপুল পরিমাণ মূসক ফাঁকি দিয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা-৫ এর উপ-ধারা (৪) অনুযায়ী সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মূসক প্রযোজ্য হয় সর্বমোট প্রাপ্তির ওপর। মূসক আইন অনুযায়ী, কোন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ব্যবসা সম্প্রসারণ বা পরিচালনার সময় মূসক প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে এনবিআরের একটি আদেশও রয়েছে। সে অনুযায়ী রবি এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) মধ্যে ইন্টারকানেকশন চার্জ এর ওপর ১৫ শতাংশ মূসক প্রযোজ্য। ইন্টারকানেশন চার্জের ওপর রবি এ বিপুল পরিমাণ মূসক পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে।

 

অপর চিঠিতে বলা হয়, রবি আজিয়াটা লিমিটেড ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ইন্টারকানেকশন চার্জ এর ওপর ১ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার ৮০২ টাকা ৩ পয়সা মূসক পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে।

অপর চিঠিতে বলা হয়, রবি আজিয়াটা লিমিটেড ও এয়ারটেল বাংলাদেশ লিমিটেড এর মার্জ ফি এবং স্প্যাক্ট্রাম চার্জের ওপর ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকার রাজস্ব পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দাখিলপত্র নিরীক্ষা করে এ ফাঁকি উদঘাটন করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, রবি ও এয়ারটেল এর একীভূতকরণের ক্ষেত্রে মার্জ ফি ১০০ কোটি টাকা এবং এয়ারটেল লিমিটেডের অনুকূলে বরাদদ্দকৃত ২জি স্প্যাক্ট্রাম চার্জের ক্ষেত্রে ২০১১ সর্বশেষ ২জি লাইন্সেস এর আওতায় তরঙ্গ নবায়ন মূল্য সমন্বয়ে ৫০৭ কোটি টাকাসহ ৬০৭ কোটি টাকার ওপর মূসক প্রযোজ্য। ১৫ শতাংশ হারে ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকা মূসক পরিশোধ করেনি। এর মধ্যে রবি ১৫ কোটি আর এয়ারটেল ৭৬ কোটি ৫ লাখ টাকা। এনবিআরের আদেশ অনুযায়ী একীভূত হবার পর রবি আজিয়াটা লিমিটেডকে এ মূসক পরিশোধ করতে হবে।

এসব চিঠিতে দেখা যায়, রবি আজিয়াটা লিমিটেড সর্বমোট (৭১১,৮২,১১,৯১৭.০৪+১১৬,৪০,৫১,০৬২.২৫+ ৩,৫৭,০৬,৩৪৮.৬৭+ ১,৬৫,১৫,৮০২.০৩+৯১,০৫,০০,০০০) বা ৯২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯ টাকা ৯৯ পয়সা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

চারটি চিঠিতে প্রাথমিক দাবি নামা (ডিমান্ড নোট) অনুযায়ী আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রবি আজিয়াটা লিমিটেডকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

অপরদিকে; রবি আজিয়াটা লিমিটেডের বিরুদ্ধে স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর প্রায় ৮ কোটি টাকার ভ্যাট (মূসক) ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ৬ মাসে এ মূসক ফাঁকি দিয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর এলটিইউ-মূল্য সংযোজন কর শাখা পাওনা আদায়ে রবিকে চিঠি দেয়। এর আগে রবি ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ জুন পর্যন্ত স্থান ও স্থাপনা ভাড়া হিসেবে ১৫ কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছে। এছাড়া সিম রিপ্লেসমেন্টের নামে ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে ৪১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ফাঁকি খুঁজে পায় এনবিআর।

 

সূত্র আরও জানায়, দুটি মোবাইল অপারেটের নিকট স্থানীয় ও রাজস্ব নিরীক্ষা আপত্তি, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা আপত্তি, আইন ও বিধি বর্হিভূত রেয়াত, স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার ওপর মূসকসহ ৩১টি মামলা আপীলাত ট্রাইব্যুনাল ও উচ্চ আদালতে বিচারধীন। এসব মামলায় অনিষ্পন্ন জড়িত বকেয়া রাজস্ব ১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে এয়ারটেলের বিরুদ্ধে ১৪টি, যার অনিষ্পন্ন জড়িত বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ ৪৬০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। রবি আজিয়াটা লিমিটেডের অনিষ্পন্ন ১৭ মামলায় জড়িত বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ ১ হাজার ৪২৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশনস অ্যান্ড কর্পোরেট রেস্পন্সিবিলিটি) ইকরাম কবীর বলেন, আমরা চিঠি পেয়েছি। এনবিআর যে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ তুলেছে আমরা তা আইনগতভাবে মোকাবেলা করবো।

তিনি বলেন, সম্পূর্ণ আইন মেনেই রেয়াত নেওয়া হয়েছে। ফাঁকি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিটিসিএল এর ভ্যাট নিবন্ধন না থাকায় আমরা ইন্টারকানেকশন চার্জ এর ওপর ভ্যাট দেই না। বিষয়টি এনবিআরের আইনগতভাবে বিটিসিএল এর সাথে সমাধা করা উচিত। এটা আমাদের নয়, বিটিসিএল এর দায়।

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: