facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

সরগরম শেয়ারবাজারে বিশ্লেষকদের পরামর্শ


১৭ জানুয়ারি ২০১৭ মঙ্গলবার, ১০:০৩  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


সরগরম শেয়ারবাজারে বিশ্লেষকদের পরামর্শ

ধসের ছয় বছর পর শেয়ারবাজার আবার সরগরম হয়ে ওঠায় বিনিয়োগকারীদের দেখে-শুনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

বছরের শুরু থেকেই চড়ছে পুঁজিবাজার। লেনদেন প্রতিদিনই বাড়ছে, সঙ্গে সূচকও। ২০১০ সালের পর সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৬৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা লেনদেনের রেকর্ড হয়েছে মঙ্গলবার, এদিন ডিএসইতে সূচকও সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়েছে।

এই উল্লম্ফন দেখে অনেকে পুঁজিবাজার নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠায় আবারও ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ভিড় বাড়ছে, যা দেখে ছয় বছর আগের কথা মনে পড়ছে এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের।

“আমার কাছে খবর আছে আবারও জমি-জমা বিক্রি, ধার-দেনা করে অনেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে, এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়,” বলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম‌্যান।

তিনি মঙ্গলবার বলেন, “সবাই যেভাবে আবার হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, তাতে ভয় হচ্ছে সাধারণ মানুষ ফের সব হারিয়ে পথে বসে কি না।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

“যার সঞ্চয় নেই। তার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা উচিৎ নয়। সঞ্চয়ের পুরো অংশও শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা ঠিক নয়। মোট সঞ্চয়ের অর্ধেক দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বা ফিক্সড ডিপোজিট করে বাকিটা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা যেতে পারে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে অন্তত আসল টাকাটা পাওয়া যায়।”

বিএসইসির সাবেক আরেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “যারা পুঁজিবাজার বোঝেন না, তাদের কোনো অবস্থাতেই এই বাজারে বিনিয়োগ করা ঠিক নয়।”

পুঁজিবাজারে দেখেশুনে বিনিয়োগ করতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এক অনুষ্ঠানে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।  

তিনি বলেছিলেন, “ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক বিবরণী এবং অন্যান্য তথ্য নিয়ে যেন বিনিয়োগ করেন; আমি চাইব।

“কোনো তথ্য নেবেন না, যেখানে সেখানে একটা বিনিয়োগ করে তারপর হারিয়ে.. তারপর আসে কী, সব দোষ সরকারের, সব দোষ অর্থমন্ত্রীর। এটা যেন না হয়।”

প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবাণী স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেখে-শুনে, জেনে-বুঝে, ভালো কোম্পানি দেখে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমানও।

১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর ২০১০ সালে আবারও বিনিয়োগ করে সর্বস্ব হারিয়েছিলেন অনেকে। তখন প্রায় প্রতিদিনই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভে দিনের একটি সময় অচল থাকত রাজধানীর বাণিজ‌্যিক প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল।

মতিঝিলের একটি ব্রোকারেস হাউসের এই চিত্র কয়েক বছর আগের, এখন চেয়ারগুলো এমন ফাঁকা নেই মতিঝিলের একটি ব্রোকারেস হাউসের এই চিত্র কয়েক বছর আগের, এখন চেয়ারগুলো এমন ফাঁকা নেই

ওই ধসের পর সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক অবস্থা না আসায় ক্ষোভ ছিল ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। তবে নিস্তরঙ্গ বাজারের বিপরীত চিত্রের দেখা মিলছে মাসখানেকের লেনদেনে।

মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৭৫ পয়েন্টে উঠেছে। সোমবার সূচক বেড়েছিল ৫৫ পয়েন্ট।

এদিন লেনদেন ছয় বছর পর ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। আগের দিন ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছিল, সেটাও ছিল সাড়ে পাঁচ বছরের মধ‌্যে সর্বোচ্চ।

গত এক বছরে ডিএসইতে সূচক বেড়েছে ১ হাজার পয়েন্টের মতো। চলতি জানুয়ারি মাসেই বেড়েছে ৫০০ পয়েন্টের কাছাকাছি।

অন‌্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও একই গতিতে লেনদেন ও সূচক বেড়েছে।

এত দিন ধরে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সমালোচনার মুখে থাকা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পুঁজিবাজার পরিস্থিতি ‘আরও ভালো’ হবে বলে আশা করছেন।

তিনি বলেন, “পুঁজিবাজার ভালো যাচ্ছে, আরও ভালো হবে আশা করছি।”

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজ বলেন, “২০১০ সালের পর থেকেই বাজার খারাপ যাচ্ছিল। অনেক শেয়ারের দাম একেবারে তলানিতে নেমে এসেছিল। কিছু দিন ধরে ভালো যাচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক।”

ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। পদ্মা সেতুসহ অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। উন্নয়নে একটা গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সে কারণেই বাজার ভালো হচ্ছে।”

অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, “আমাদের সরকারের অন্যতম প্রধান পুঁজিবাজার উন্নয়ন করা। আমরা সেটা করেছি। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।

“বাজারে আস্থা ফিরে এসেছে। গত কয়েক মাস ধরে বাজারে ভালো অবস্থা বিরাজ করছে। এটা যাতে আরও বেগবান হয়, সেই প্রচেষ্টা নেওয়া হবে।”

২০১০ সালে বড় ধসের আগে ডিএসইতে সূচক প্রায় ৯ হাজার পয়েন্টে উঠেছিল। লেনদেন বাড়তে বাড়তে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল।

এরপর ছয় বছরে বাজার অনেক বড় হয়েছে, কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে বাজার মূলধন।

মঙ্গলবার দুপুরে মতিঝিলে চারটি ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে দেখা যায়, সব ক’টিতেই উপচেপড়া ভিড়। কেউ বিক্রির অর্ডার দিচ্ছেন; কেউ কিনছেন; সবার মনেই খুশির ভাব।

দুপুর আড়াইটায় দিনের লেনদেন শেষ হওয়ায় পর একটি ব্রোকারেস হাউস থেকে নেমে আসা একজন পারভেজ আহমেদ বলেন, “ভালোই যাচ্ছে বাজার। ২০১০ সালের ধস অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি। মাস খানেক হল ভালোই লাভ হচ্ছে।” সূত্র : বিডিনিউজ

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: