১৮ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার, ০৩:০৬ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবির ধারণ করা শেয়ারকে সরকারি শেয়ার হিসেবে দেখাচ্ছে বেসরকারি বীমা খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানি সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স। তালিকাভুক্ত প্রায় সব কোম্পানিতে আইসিবির শেয়ার থাকলে অন্য অনেকে তা প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার হিসেবে দেখাচ্ছে। আবার সাধারণ বীমার ধারণ করা শেয়ারকে ন্যাশনাল হাউজিং সরকারি শেয়ার হিসেবে দেখায়। কিন্তু একই প্রতিষ্ঠানের ধারণ করা শেয়ারকে উদ্যোক্তা শেয়ার হিসেবে দেখাচ্ছে ন্যাশনাল টি।
এভাবে তালিকাভুক্ত একেক কোম্পানি নিজেদের মতো করে সরকারি শেয়ার ধারণ বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। এ বিভ্রান্তি দূর করতে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যত কোনো উদ্যোগ নেই। কয়েকটি কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অভিযোগ, স্টক এক্সচেঞ্জই এ বিভ্রান্ত তৈরি করছে।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কর্মকর্তারা জানান, আইসিবি বা সাধারণ বীমার ধারণ করা শেয়ার সরকারি শেয়ার নয়। প্রকৃতপক্ষে সরকারের পক্ষে কোনো মন্ত্রণালয় বা তার মনোনীত ব্যক্তি বা কোনো প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকেই শুধু সরকারি শেয়ার হিসেবে দেখানোর নিয়ম।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কর্মকর্তারা জানান, কোন শেয়ারকে সরকারি শেয়ার হিসেবে দেখাতে হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। এ কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যে তথ্য দেয়, তাই তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে।
শেয়ারবাজার বিশ্নেষকরা জানান, তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিতে আইসিবির শেয়ার রয়েছে। এখন একটি কোম্পানি আইসিবির শেয়ারকে সরকারি শেয়ার হিসেবে ঘোষণা করলে, অন্য কোম্পানিগুলো তা অনুসরণ করতে থাকলে চরম বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে।
শেয়ারবাজার বিশ্নেষক ও বেসরকারি ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোহাম্মদ মূসা বলেন, কোনো কোম্পানিতে সরকারের বিনিয়োগ থাকলে ধরে নেওয়া হয়, ওই শেয়ার সহসা বিক্রি হবে না। অর্থাৎ শেয়ারের বড় চাহিদা তৈরি হলেও ওই শেয়ার থেকে সরবরাহ আসবে না। যা বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ বীমা বা জীবন বীমা যে ধরনের কোম্পানি; সোনালী, জনতা বা রূপালী ব্যাংকও একই ধরনের কোম্পানি। এখন সাধারণ বীমার শেয়ারকে সরকারি শেয়ার ধরা হলে সোনালী, জনতা বা রূপালী বা তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের শেয়ারকেও সরকারি শেয়ার ধরতে হয়। এ বিভ্রান্তি দূর করতে অবিলম্বে নীতিমালা করার পরামর্শ তার।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ৩০৪ কোম্পানির মধ্যে বর্তমানে ৩০টিতে সরকারের শেয়ার আছে। এর মধ্যে শেয়ার ধারণ হারের দিক থেকে সর্বাধিক ৯৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ শেয়ার আছে বিডি সার্ভিসেসে।
অন্য যেসব কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার আছে, সেগুলো হলো- রূপালী ব্যাংক, তিতাস গ্যাস, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, ডেসকো, যমুনা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ন্যাশনাল টিউবস, উসমানিয়া গ্লাস, এটলাস বাংলাদেশ, শ্যামপুর সুগার, রেনউয়িক যজ্ঞেশ্বর, জিলবাংলা সুগার মিলস, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, ইস্টার্ন কেবলস, পদ্মা অয়েল, আইএফআইসি, আইসিবি, আইপিডিসি. সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, ন্যাশনাল হাউজিং, ন্যাশনাল টি, রেকিট বেনকিজার, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, এবি ব্যাংক, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, আইসিবি, ইসলামিক ব্যাংক এবং আলহাজ টেক্সটাইল।
তবে এ তালিকায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাওয়ার গ্রিড নেই। গত ডিসেম্বরেও কোম্পানিটি ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ারকে সরকারি শেয়ার দেখাত। এখন ওই শেয়ারকে স্টক এক্সচেঞ্জে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার হিসেবে দেখানো হচ্ছে।
জানতে চাইলে পাওয়ার গ্রিডের শেয়ার বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, এ শেয়ারের মালিক পিডিবি। এ ছাড়া ডিএসইর পক্ষ থেকে বলার পর এ তথ্য পরিবর্তন করা হয়েছে।
ন্যাশনাল হাউজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সের কোম্পানি সচিব সারোয়ার কামাল জানান, তার কোম্পানির ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা করপোরেশন। এ শেয়ারকে সরকারি শেয়ার হিসেবে দেখানোর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, উভয় দুই বীমা কোম্পানি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বলে একে সরকারি শেয়ার হিসাবে দেখানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা স্টক এক্সচেঞ্জ আপত্তি তুললে জানালে এ তথ্য সংশোধন করা হবে।
বস্ত্র খাতের সোনারগাঁও টেক্সটাইল ও আলহাজ টেক্সটাইলও কিছু শেয়ারকে সরকারি শেয়ার হিসেবে দেখাচ্ছে। এ শেয়ারের প্রকৃত মালিক কে জানতে কয়েকদিন কোম্পানিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও দায়িত্বশীলদের পাওয়া যায়নি।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।