facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

সঞ্চয়পত্র কেনার ঝোঁক বাড়ছেই


১৪ জানুয়ারি ২০১৯ সোমবার, ১২:৪৭  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


সঞ্চয়পত্র কেনার ঝোঁক বাড়ছেই

ব্যাংক আমানতের চেয়ে সুদহার বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্র কেনায় ঝোঁক বেড়ে চলেছে। আর সরকারেরও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ঋণ বাড়িয়ে চলেছে। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই সঞ্চয়পত্রের মাধমে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার ৮২ দশমিক ৬৯ শতাংশ পূরণ হয়ে গেছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২১ হাজার ৬৬১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২১ হাজার ১৭২ কোটি টাকা।এ খাত থেকে সংগৃহীত ঋণের বড় অংশই আবার পূর্বের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদবাবদ পরিশোধ করতে হচ্ছে।২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকার ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার।

বর্তমানে তিন ও পাঁচ বছর মেয়াদি বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক শূন্য ৪ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি আমানতের বিপরীতে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। যদিও তারল্য সংকটের কারণে কিছু ব্যাংক আমানত রাখতে গ্রাহকদের নির্ধারিত সীমার বেশি সুদহার দিচ্ছে। ২০১৮ সালে ব্যাংক আমানতের সুদহার ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

ব্যাংকগুলোর অভিযোগ, সঞ্চয়পত্রে মুনাফা বেশি হওয়ার কারণেই আমানতের সুদহার নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনা যাচ্ছে না। যদিও গত বছরের ২৭ নভেম্বরের এক বৈঠকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়ে আনার কথা জানিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সে সময় তিনি জানান, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ বাড়ায় বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের চাপ তৈরি করছে। ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যয়বহুল এ ঋণে নিরুৎসাহিত করার কথাও জানান তিনি। তবে নির্বাচনের পর নতুন বছর শুরু হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। ফলে সঞ্চয়পত্র কিনতে ডাকঘরসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীরা ভিড় জমাচ্ছেন।   

 এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ে কাঙ্ক্ষিত গতি না আসায় বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। ফলে বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ঋণগ্রহণ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাস মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, আলোচ্য সময়ে এক লাখ এক হাজার ৭০৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭৮ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় রাজস্ব কমেছে ২৩ শতাংশ। যদিও আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ছয় শতাংশ।

রাজস্ব আদায় কম হলে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়তে পারে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শুরুতে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে তা বাড়িয়ে লক্ষ্যমাত্রা ৪৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তবে সে সময় শেষ পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি ৩০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের যে ঝোঁক লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত এ খাত থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়তে পারে।  

তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর) পর্যন্ত নিট তিন হাজার ৮৩৩ কোটি টাকার ঋণ এসেছে সঞ্চয়পত্র থেকে। আলোচ্য সময়ে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। সুদবাবদ পরিশোধ করা হয় ৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার। এর মধ্যে মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। মুনাফা পরিশোধ হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা।

এ হিসাবে অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে নিট বিক্রি বলা হয়।

অর্থাৎ জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত দেওয়া হয়।

সঞ্চয়পত্র থেকে সংগৃহীত অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: