facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪

Walton

সংসদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শেষ বক্তব্য


০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সোমবার, ০৪:৩১  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


সংসদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শেষ বক্তব্য

বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণেতা কমিটির অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে বামধারার রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং দলটির প্রথম সারির অন্যতম নেতা হিসেবে পরিগণিত হন।

স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদসহ তিনি সাত বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ব্যতিক্রমধর্মী বাচনভঙ্গীতে ধারালো বক্তব্য দিয়ে সংসদ অধিবেশন মাতিয়ে রাখতেন তিনি। গত ২৯ জানুয়ারি রবিবার দশম জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন সুরঞ্জিত। পরের রবিবারই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে সেদিন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বর্তমান সময়ে আলোচিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটি গঠন ও তার সাংবিধানিক এখতিয়ার নিয়ে জোরালো যুক্তি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। ইসি গঠনের বিষয়কে বাংলাদেশের একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে জাতিসংঘকেও মাথা না ঘামানোর অনুরোধ করেন। সংসদে দেওয়া তার সেই বক্তব্য শেষ স্মৃতির সম্পদ হিসেবে সংসদ আর্কাইভে সংরক্ষিত থাকবে।

এক সপ্তাহ আগে সংসদে দেওয়া বক্তব্যে সুরঞ্জিত সংবিধানের ৪৮ ধারা উল্লেখ করে বলেন, রাষ্ট্রপতির কথার ওপরে কোনো কথা নাই। আমরা তার প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি গভীরভাবে পড়াশোনা করে একটি সুন্দর সার্চ কমিটি গঠন করেছেন।

সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, অত্যন্ত আশ্চর্যের সঙ্গে দেখলাম, বিএনপি সার্চ কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাইছে। রাষ্ট্রপতির এই কমিটি করার পরে কারো কোনো কথা বলার অধিকার নেই। বিএনপিকে যদি সাংবিধানিক রাজনীতি করতে হয়, তাহলে সংবিধান জেনেই করতে হবে।

এ সময় সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপির দুই নেতার দুই রকম বক্তব্যের বিষয়ও তুলে ধরে সমালোচনা করেন তিনি।

ইসি গঠন নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থার মতামত ও আগ্রহের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাতিসংঘও ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে। জাতিসংঘের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রক্রিয়ার ওপর কোনো কথা বলার এখতিয়ার বা সংশ্লিষ্টতার নজির বিশ্বের কোনো দেশেই নাই। তাদের যদি কোন কথা থাকে সেটা ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেলে তারা বলতে পারেন।

অভিজ্ঞ এই পার্লামেন্টারিয়ান বলেন, সাংবিধানিক পথ ছাড়া অন্যভাবে এই জাতিকে বিব্রত করা ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, সুযোগ এখনো যায় নাই। রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটি করে দিয়েছেন। বিএনপির যদি কোনো কথা থাকে, তারা অনুসন্ধান কমিটিতে বলতে পারেন। তারা বলতে পারেন, এই লোক না নিয়ে ওই লোক নিন। এটা সংবিধান প্রণিধানযোগ্য হতে পারে। অন্য কোনো উপায় নেই।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে এসেছে বলে দাবি করছে। তাহলে তাদেরকে সংবিধান সম্পর্কে আরো ওয়াকিবহাল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

সুরঞ্জিত বলেন, রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটি যেটা করেছেন, সেটা গোটা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে এমন সুন্দর অ্যাপ্লিকেশন দেখি নাই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তিনি তো বাইরে থেকে কোনো নতুন লোক আনেন নাই। তিনি নতুন করে কাউকে শপথও করান নাই, শুধু দু`জন ছাড়া। এখন এই ব্যাপারটি নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার না করে সাংবিধানিকভাবে যা উপায় আছে, তার কথা ভাবতে পারেন।

ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আমরা কী চাই, সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে বলে এসেছি। আমাদের নেত্রী কেবলমাত্র সংবিধানের মধ্য থেকেই ক্ষমতার ব্যবহার করতে হবে, সেটা বলে এসেছেন।

সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ তুলে ধরে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির বক্তব্য ও তার কথার ওপর, সংবিধান অনুযায়ী কারো প্রশ্ন তোলার অধিকার নেই। দেশে একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও শ্রদ্ধা রেখেই সংবিধান অনুসারে অগ্রসর হতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তাদের যদি কিছু বক্তব্য থাকে তাহলে বলতে পারেন। এর বাইরে তারা যদি কোনো প্রশ্ন তোলেন, এটা আমরা জাতি হিসেবে খুবই বিব্রত হব এবং সাংবিধানিকভাবে বিশ্বের কোনো দেশের কোথাও এটা হয় না।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: