facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

সংশোধিত ব্যাংক আইন: পাস হলে জটিলতা বাড়বে শেয়ারবাজারে


২০ মে ২০১৭ শনিবার, ০৩:৫১  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


সংশোধিত ব্যাংক আইন: পাস হলে জটিলতা বাড়বে শেয়ারবাজারে

সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন পাস হলে শেয়ারবাজারে জটিলতা বাড়বে। এতে একদিকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে সুশাসন যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, তেমনি বিদ্যমান সিকিউরিটিজ আইনের সঙ্গে এ আইন সাংঘর্ষিক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থনীতিবিদ ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আইনটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

পরিচালকদের নজিরবিহীন সুযোগ দিয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন আবারও সংশোধন করছে সরকার। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়া অনুমোদন হয়েছে। নতুন আইনে কোনো ব্যাংকে একই পরিবারের পরিচালক সংখ্যা ২ জন থেকে বাড়িয়ে ৪ জন করার প্রস্তাব করা হয়। আর পরিচালকদের মেয়াদ টানা ৬ বছর থেকে বাড়িয়ে ৯ বছর করা হয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ সিদ্ধান্তে মুদ্রা ও পুঁজি উভয় বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনিতেই ব্যাংকের ঋণ কিছু গোষ্ঠীর কাছে কুক্ষিগত। এর পর আইনটি কার্যকর হলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে জটিলতা বাড়বে। কারণ এ আইনের মানে হল ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র। কিন্তু পুঁজিবাজারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল কর্পোরেট সুশাসন। ফলে এ আইনের ধারায় কর্পোরেট সুশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি বলেন, এ আইনের খসড়া অনুমোদন করে কতিপয় ব্যবসায়ীর চাপের কাছে সরকার নতি স্বীকার করেছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং খাতে পরিবারতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হল।

দৈনিক যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন সংসদে পাস হলে এ আইনের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন লংঘনের আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৪(ক) ধারায় উল্লেখ আছে- কোনো ব্যাংকে একক কোনো পরিবারের সম্মিলিতভাবে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকতে পারবে না। আবার সিকিউরিটিজ আইনে উল্লেখ আছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রত্যেক উদ্যোক্তা পরিচালকের নিজ কোম্পানিতে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক। তবে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ শেয়ার থাকতে পারবে, সিকিউরিটিজ আইনে তার কোনো সীমা দেয়া হয়নি। ফলে কোনো ব্যাংকে যদি একই পরিবারের ৪ জনের বেশি পরিচালক থাকে এবং তাদের ২ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকলে তা ব্যাংক কোম্পানি আইনের পরিপন্থী হবে। কারণ বর্তমানে কোনো কোনো পরিচালকের ৫ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার রয়েছে।

অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, আইনটি শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক নয়। কারণ এতে কর্পোরেট সুশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আইনটির ব্যাপারে সরকারের ভাবা উচিত।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করার জন্যই ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে আনা হয়। এরপর আবার পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে, ওই ব্যাংকের তালিকাভুক্তির কোনো মানে হয় না। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষু্ণ্ন হবে। কর্পোরেট গভর্নেন্স বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

জানা গেছে, শেয়ারবাজারের সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। বর্তমানে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া ৩০টি ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। এসব ব্যাংকের বাজার মূলধন শেয়ারের মোট বাজার মূলধনের ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া সব ব্যাংকের আবার নিজস্ব ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক রয়েছে। অধিকাংশ ব্যাংকের মিউচুয়াল ফান্ডও রয়েছে। ফলে ব্যাংকের যে কোনো সিদ্ধান্ত খুব দ্রুতই শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলে। গত দু’বছর শেয়ারবাজারে দরপতনের জন্য ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগকে দায়ী করে আসছিল বাজার সংশ্লিষ্টরা। ২০০৯ সালের শুরুতে শেয়ারবাজারে আগ্রাসীভাবে বিনিয়োগ করে বিভিন্ন ব্যাংক। ফলে মৌলভিত্তি উপেক্ষা করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দাম সীমাহীনভাবে বেড়ে যায়। পরবর্তী সময়ে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশের আলোকে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা কমিয়ে আনা হয়। এ সময়ে যাদের অতিরিক্ত বিনিয়োগ ছিল তা গত বছরের ২১ জুলাইয়ের মধ্যে কমিয়ে আনার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ কমিয়ে আনতে পারেনি ১১টি ব্যাংক। আর এর প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি ছিল, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বাড়ানোর। কিন্তু বিনিয়োগ বাড়ানো দূরের কথা, কর্পোরেট সুশাসন প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য ব্যাংকিং খাতে কর্পোরেট গভর্নেন্স দরকার। কিন্তু যদি কর্পোরেটাইজেশনের পরিবর্তে ব্যাংকিং খাত ফ্যামিলি এন্টারপ্রাইজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে বিনিয়োগকারী ও আমানতদাররা আস্থা হারিয়ে ফেলবেন।’ তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে একচেটিয়াভাবে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলে কোথায় কী দাঁড়াবে সেটি এখন বড় প্রশ্ন।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: