facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

সংকটে ১০ বীমা কোম্পানি


০২ মার্চ ২০১৯ শনিবার, ০৯:১০  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


সংকটে ১০ বীমা কোম্পানি

দুর্বল আর্থিক ভিত্তির কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারছে না মেঘনা, সানফ্লাওয়ার, গোল্ডেন লাইফ, হোমল্যান্ডসহ ১০টি বেসরকারি বীমা কোম্পানি।

এজন্য দীর্ঘদিন ধরে জরিমানা গুনে আসছে কোম্পানিগুলো। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোর আর্থিক সংকট কাটাতে নিজেদের নামে থাকা পতিত জমি বিক্রির নির্দেশনা দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইডিআরএ)।

সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈঠক শেষে এমন নির্দেশনা দিয়েছে আইডিআরএ। আইডিআরএর কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসতে ব্যর্থ হওয়ায় ১০ বেসরকারি বীমা কোম্পানিকে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হচ্ছে। জরিমানা দৈনিক ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে সম্প্রতি ৫ হাজার টাকা করা হলেও কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নিজেদের আর্থিক অক্ষমতার কথা জানিয়ে তালিকাভুক্ত হতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এ অবস্থায় কোম্পানিগুলোকে আর্থিকভাবে সক্ষম করে তুলতে পতিত জমি বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আইডিআরএ সদস্য বোরহান উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিগুলোর অনেক জমি পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব জমি থেকে কোম্পানিগুলোর আয় হচ্ছে না। অনেক জমির দামও কমে গেছে। অপরদিকে সম্পদ পতিত অবস্থায় থাকলেও আর্থিক অক্ষমতায় তালিকাভুক্ত হতে পারছে না কোম্পানিগুলো। ফলে আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে ১০টি কোম্পানিকে তাদের পতিত জমি বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বীমা আইনানুযায়ী নিবন্ধিত হওয়ার তিন বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বাধ্যবাধকতা রয়েছে বীমা কোম্পানির জন্য। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তালিকাভুক্ত হতে না পারলে যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে ছয় মাস সময় বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত সময়ও শেষ হলে কোম্পানিগুলোকে প্রথমে মূল জরিমানা হিসেবে এককালীন ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। এরপর যতদিন প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে না পারবে, ততদিন প্রত্যেক দিনের জন্য ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হয়। আইডিআরএ নতুন বীমা আইন ২০১০-এর ১৩০ ধারা অনুযায়ী প্রতিদিনের এ জরিমানার হার ২০১১ সাল থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে, যা বছর শেষে একবারে আদায় করা হয়। যদিও আগের বীমা আইনের (বীমা আইন ১৯৩৮) ১০২ ধারা অনুযায়ী প্রতিদিনের জন্য জরিমানার হার ছিল ১ হাজার টাকা করে।

আইডিআরএ জানিয়েছে, আর্থিক ভিত্তি দুর্বলতার কথা জানিয়ে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তালিকাভুক্ত না হওয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরেই জরিমানা গুনে আসছে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সানফ্লাওয়ার লাইফ, বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ও এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এর মধ্যে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ও হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে প্রতিদিন জরিমানা গুনছে। অন্য কোম্পানিগুলোও বেশ কয়েক বছর ধরে এ জরিমানার অর্থ দিয়ে আসছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে।

যদিও সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসার জন্য বিএসইসিতে আবেদন করে। বীমা কোম্পানিটি ৪ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজার থেকে ৯ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য আবেদন জমা দেয়। এছাড়া ২০১০ সালের ২৮ এপ্রিল মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৯ লাখ শেয়ার ছেড়ে ৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে বিএসইসিতে প্রস্তাব দেয়। দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ৯ লাখ শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ৯ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য আবেদন করে। ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স পুঁজিবাজার থেকে ৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে আবেদন করে। তবে এসব আবেদনের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

 ২০১০ সালের ১১ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির যোগ্যতা হিসেবে কোম্পানির আইপিও-পরবর্তী পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা হওয়া বাধ্যতামূলক করে বিএসইসি। তালিকাভুক্তির এ শর্ত আরোপের পর সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে বীমা কোম্পানিগুলো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেয়ারবাজারে না আসায় প্রতিদিন জরিমানা গুনতে বাধ্য হওয়া সব বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনই ১০ কোটি টাকার কম। ফলে আইপিওর মাধ্যমে মূলধন বাড়ানোর পরও এসব কোম্পানির পক্ষে ৪০ কোটি টাকার শর্ত পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য বিএসইসিতে আবেদন করা ওই পাঁচটি বীমা কোম্পানির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও আইনি জটিলতা এড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয় বিএসইসি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক হওয়ায় কমিশনের পক্ষ থেকে বীমা কোম্পানির জন্য ৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের শর্ত শিথিল করার সুপারিশ করা হয়। ফলে বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকার কম হলেও আইপিও অনুমোদন দেয়ার জন্য কমিশন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে। এরপর শর্ত শিথিল করার পরও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও বীমা কোম্পানিগুলোর আইপিও অনুমোদন করা সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে বীমা আইন ২০১০-এর বিধান অনুযায়ী লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে ৩০ কোটি ও ৪০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ আইন জারি হওয়ার আগে বিদ্যমান নিবন্ধিত বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি ও সময়সীমার মধ্যে ওই পরিমাণ মূলধন থাকার শর্ত পূরণ করতে হবে। মূলধন উত্তোলন করার জন্য এ আইন প্রবর্তনের তারিখ থেকে তিন বছর সময় দেয়া হয়।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: