facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

বুক বিল্ডিং পদ্ধতি

শেয়ারের দাম ইচ্ছামতো বাড়ানো ঠেকাতে হচ্ছে কমিটি


১৫ আগস্ট ২০১৮ বুধবার, ১০:২৪  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


শেয়ারের দাম ইচ্ছামতো বাড়ানো ঠেকাতে হচ্ছে কমিটি

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনে কম্পানির শেয়ারের দাম নির্ধারণে কঠোর হচ্ছে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কম্পানির শেয়ারের দাম তথা প্রিমিয়াম নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। তারা বলছে, পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষা এবং যৌক্তিক শেয়ারের দাম নির্ধারণে সহায়ক হবে এটি।

কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো যোগ্য বিনিয়োগকারী চাইলেই কোনো কম্পানির কাট অব প্রাইস নির্ধারণে ইচ্ছামতো দাম প্রস্তাব করতে পারবে না। বিডিংয়ে অংশগ্রহণ ও কাট অব প্রাইস নির্ধারণে দাম প্রস্তাবে দক্ষ ও অভিজ্ঞদের নিয়ে ‘বিডিং রি-কমেনডেশন কমিটি (আরএসি)’ গঠন করতে হবে। আর এই কমিটির পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের পরই দাম প্রস্তাবে যেতে পারবে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা। আর কমিটির সেই ভ্যালুয়েশন বা পর্যালোচনার ব্যাখ্যা কমিশনে জমা দিতে হবে। আর সেটি না করলে দাম প্রস্তাব করতে পারবে না যোগ্য বিনিয়োগকারী।

যোগ্য বিনিয়োগকারীর আচরণ ও দাম প্রস্তাব সম্পর্কিত এক নির্দেশনায় এসব বিধান জারি করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর বর্তমান কমিশনকে পুনর্গঠন করে সরকার। দীর্ঘ সময়ে শতাধিক কম্পানি পুঁজিবাজারে এসেছে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসা কিছু কম্পানির দাম প্রস্তাবে যোগ্য বিনিয়োগকারীর যোগসাজশের অভিযোগ ওঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে যোগ্য বিনিয়োগকারীর আচরণ ও নীতিমালা তৈরি করেছে কমিশন।

সূত্র জানায়, পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫ পরিপালন করেই পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করতে হয়। বুক বিল্ডিং ও ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে একটি কম্পানি পুঁজিবাজারে শেয়ার ছেড়ে মূলধন উত্তোলন করতে পারে। ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতি প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ধরা হয় অভিহিত মূল্য (ফেসভ্যালু) ১০ টাকা আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে অভিহিত মূল্য ১০ টাকার সঙ্গে প্রিমিয়াম যুক্ত হয়। কম্পানির আর্থিক হিসাব পর্যালোচনার পর যোগ্য বিনিয়োগকারীর দাম প্রস্তাব বা কোটেশনের পর এই প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয়।

সূত্র জানায়, যোগ্য বিনিয়োগকারীর দাম প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে আসতে ইচ্ছুক কম্পানির ফেসভ্যালুর সঙ্গে প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয়। কম্পানির সঙ্গে যোগসাজশ করে যোগ্য বিনিয়োগকারী বেশি দাম প্রস্তাব করে। প্রতিটি শেয়ার বেশি দামে কম্পানি অফলোড করতে পারলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারীরা। সে জন্য বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে কমিশন। পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীর স্বার্থেই শেয়ারের দাম যৌক্তিক ও স্বচ্ছতা আনতে কঠোর অবস্থানে কমিশন।

পাবলিক ইস্যু রুলসে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ার নির্ধারণের বিষয়ে বলা হলেও যোগ্য বিনিয়োগকারীর আচরণ সম্পর্কিত বিষয়ে তেমন কিছুই বলা হয়নি। কাট অব প্রাইস নির্ধারণ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যার জন্য যোগ্য বিনিয়োগকারীর আচরণ সম্পর্কিত এক নির্দেশনা জারি করেছে কমিশন। এতে যোগ্য বিনিয়োগকারীর আচরণ ও দাম বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

পাবলিক ইস্যু রুলস অনুযায়ী, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কম্পানির শেয়ারের ৬০ শতাংশ যোগ্য বিনিয়োগকারীর। যার মধ্যে ১০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ড আর ৫০ শতাংশ অন্যান্য যোগ্য বিনিয়োগকারীর। আর ৪০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীর। এর মধ্যে ১০ শতাংশ নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি (এনআরবি) ও ৩০ শতাংশ অন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীর। ৭২ ঘণ্টার বিডিংয়ে যোগ্য বিনিয়োগকারী নিজ দাম ও শেয়ারের পরিমাণ প্রস্তাব করবে। যোগ্য বিনিয়োগকারীর জন্য বরাদ্দ শেয়ারের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কেনার প্রস্তাব করতে পারবে। প্রস্তাবকৃত শেয়ারের ২০ শতাংশ অর্থ ব্যাংকে জমা দেবে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা। আর যোগ্য বিনিয়োগকারীর দাম প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতেই কাট অব প্রাইস নির্ধারিত হবে। এই দাম থেকে ১০ শতাংশ কমে শেয়ার বরাদ্দ পাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

যোগ্য বিনিয়োগকারী ও কমিটি শেয়ারের দাম প্রস্তাবে স্বাধীন ও পেশাগত মূল্যায়ন করবে। বিডিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতে স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কমিটি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনে ইচ্ছুক কমিটির প্রসপেক্টাসে দেওয়া আর্থিক, টেকিনিক্যাল, ম্যানেজারিয়াল, কমার্শিয়াল, অর্থনৈতিক ও মালিকানা সম্পর্কিত বিষয়কে মাথায় রেখে পর্যালোচনা করবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতেই শেয়ারের দামের প্রস্তাব ও মূল্যায়ন করতে হবে, এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ও পেশাগত মূল্যায়ন নিশ্চিত করবে।

বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘যোগ্য বিনিয়োগকারী যে প্রাইস কোট করছে সেটার অ্যানালিসিস দরকার। কী পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই দাম প্রস্তাব করছে। যার জন্য আমাদের নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। একটা কমিটি করতে বলা হয়েছে। আমরা শেয়ারের দাম নির্ধারণে স্বচ্ছতায় খুবই জোর দিচ্ছি। বেশিসংখ্যক যোগ্য বিনিয়োগকারী যেন আমরা সেটা উন্মুক্ত করেছি। স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্যই আমরা চেষ্টা করছি।’

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: