১৫ মে ২০১৮ মঙ্গলবার, ০২:৪২ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
অনেক আলোচনা-সমালোচনা ও ঘটনার পর অবশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অংশীদার হলো চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ। দেশের প্রধান শেয়ারবাজারের ২৫ শতাংশের মালিকানায় আসতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির এ দুই এক্সচেঞ্জের জোট গতকাল সোমবার চুক্তি করেছে। আগামী এক বছরের মধ্যে শেয়ার কেনাবেচার এ প্রক্রিয়া শেষ হবে।
ডিমিউচুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুই স্টক এক্সচেঞ্জের এ জোটের অংশীদারিত্বে আসার বিষয়কে দেশের শেয়ারবাজারের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত ও গৌরবের বলে উল্লেখ করছেন অর্থমন্ত্রীসহ বাজার-সংশ্নিষ্টরা।
চুক্তি অনুযায়ী, ২১ টাকা দরে ডিএসইর মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫ শেয়ার কিনতে মোট প্রায় ৯৪৫ কোটি টাকা দেবে চীনা জোটটি। এ ছাড়া বিনামূল্যে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের প্রযুক্তিগত, কারিগরি ও পরামর্শক সহায়তাও দেবে তারা। এসব কারিগরি সহায়তা দেশের প্রধান এ স্টক এক্সচেঞ্জের সক্ষমতা বাড়াবে।
গতকাল রাজধানীর নিকুঞ্জে লা-মেরিডিয়েন হোটেলে এ চুক্তিতে সই করেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান এবং সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী ওয়াং জেনজুন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারভাইজরি বোর্ডের প্রধান প্যান সিয়েসিয়ান।
প্রধান অতিথি হিসেবে এ চুক্তি সইয়ের সাক্ষী হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ডিএসই অনেক পুরনো শেয়ারবাজার হলেও এর ইতিহাস সুখকর নয়। দু`দফা বড় ধসের পর সরকারের ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রমের পর বাজার স্বাভাবিক হওয়ার দিকে যাচ্ছে। সংস্কারের ধারাবাহিকতায় কৌশলগত অংশীদার নেওয়া হলো। চীনা জোটের সঙ্গে অংশীদারিত্ব সুশাসন ও শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানে যেতে সহায়তা করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মুহিত বলেন, পুঁজিবাজার থেকে আরও মূলধন উত্তোলনে এ চুক্তি সহায়তা করবে। তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সহায়তা করবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, এ চুক্তি ডিএসইর মর্যাদা ও গৌরব বাড়ানোর পাশাপাশি সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক আচরণ উন্নতিতে সহায়তা করবে। এতে আরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়বে ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। অনেক ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হবে।
ডিএসইর চেয়ারম্যান ড. আবুল হাশেম বলেন, ঐতিহাসিক এ চুক্তি শুধু দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নয়, উভয় দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট ওয়াং জেনজুন বলেন, উভয় দেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেবে এ অংশীদারিত্ব। আর অংশীদার হিসেবে তিনি বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
চুক্তি সইয়ের পর অনেকটা হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন ডিএসইর কর্তাব্যক্তিরা। কেননা ভালো দর ও প্রস্তাবের পরও চীনা জোটের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাদের। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে ভারতের স্টক এক্সচেঞ্জের একটি জোটকে কৌশলগত অংশীদার করতে চাপ ছিল। শেষ পর্যন্ত ডিএসইর শক্ত অবস্থানের কারণে তা হয়নি। এ ঘটনার সময় শেয়ারবাজারে টানা বড় ধরনের পতন হয়।
বিশ্ব শেয়ারবাজারে চীনের এ দুই স্টক এক্সচেঞ্জ অনেক দিক থেকেই শীর্ষস্থানীয়। বাজার মূলধন বিবেচনায় সাংহাই বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ও এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম। আর লেনদেনের দিক থেকে বিশ্বে এক নম্বর। অন্যদিকে সেনজেন বাজার মূলধনে বিশ্বের অষ্টম ও এশিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম এবং লেনদেনে প্রথম। গত বছর আইপিওর দিক থেকে ছিল সবার উপরে। ডিএসই সংশ্নিষ্টরা জানান, চুক্তির পর শেয়ার কেনাবেচার সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হতে এক বছর সময় নির্ধারিত থাকলেও উভয় পক্ষ ছয় মাসের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষে অংশীদার হিসেবে কাজ শুরু করতে চায়।
২০১১ সালে ধসের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি শেয়ারবাজারে কারসাজি বন্ধে স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা বিভাগ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগকে পৃথক ও স্বাধীন করতে ডিমিউচুয়ালাইজড করার সুপারিশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় কৌশলগত অংশীদার নিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে ডিএসই। প্রথম দফায় দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখালেও বিদেশি স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠানের তেমন আগ্রহ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করলে তাতে সাড়া দেয় চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের জোট অংশীদার হতে আগ্রহপত্র ও চূড়ান্ত দরপ্রস্তাব দেয়।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।