facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

নবায়ন ফি দিতে ব্যর্থ

শেয়ারবাজারে ২ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ


২০ জুলাই ২০১৭ বৃহস্পতিবার, ১১:০৬  এএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


শেয়ারবাজারে ২ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ

নির্ধারিত সময়ে নবায়ন ফি না দেয়ায় শেয়ারবাজারে ২ লাখ বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার) অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ তালিকায় বিভিন্ন কোম্পানির ২২০টি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) ৯ হাজার ১৫টি অ্যাকাউন্টও রয়েছে। লেট ফি দিয়েও এসব অ্যাকাউন্ট আর চালু করা যাবে না। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নেয় ইলেকট্রুনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএল (সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেড)। বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নের শেষ সময় ছিল ৩০ জুন। তবে ব্রোকারেজ হাউসগুলো বিনিয়োগকারীদের ২৫ জুন পর্যন্ত সময় দেয়। এরপরই হাউসগুলো থেকে ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধের তালিকা পাঠানো শুরু হয়।
সর্বশেষ হিসাবে দেশের শেয়ারবাজারে ওই অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৩৯ হাজার। সিডিবিএল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজারের স্বচ্ছতায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগকারীদের অমনিবাস অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়েছে। এখন বাজারে স্বচ্ছতা আনতে হলে বিও অ্যাকাউন্ট স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ বিদ্যমান আইন পরিপালনে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

সূত্র জানায়, বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়ন করতে ৫০০ টাকা লাগে। এরমধ্যে সিডিবিএল ১৫০ টাকা, হিসাব পরিচালনাকারী ব্রোকারেজ হাউস ১০০ টাকা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ৫০ টাকা এবং বিএসইসির মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে ২০০ টাকা জমা হয়। আর এ খাত থেকে গত বছর সরকারকে ৬১ কোটি টাকা দিয়েছিল বিএসইসি। এর আগের বছর যা ছিল ৮১ কোটি টাকা।

জানা গেছে, প্রতি বছর ৩০ জুনের মধ্যে এ ফি সিডিবিএলে জমা দিতে হয়। এ বছর ব্রোকারেজ হাউসগুলো বিনিয়োগকারীদের ২৫ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছিল। এরপরই নবায়ন ফি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করা শুরু হয়। ২৫ জুনের আগে শেয়ারবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২৯ লাখ ৪০ হাজার। বর্তমানে তা ২৭ লাখ ৩৯ হাজারে নেমে এসেছে। এরমধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারী ২৫ লাখ ৭৯ হাজার, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ১ লাখ ৪৮ হাজার এবং বিভিন্ন কোম্পানির ১১ হাজার ২৭৮টি। তবে সিডিবিএল সূত্র বলছে, ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হলেও অলিখিতভাবে আরও কিছুদিন সময় রয়েছে। ফলে অ্যাকাউন্ট বাতিলের সংখ্যা আরও বাড়বে। গত বছর এ প্রক্রিয়ায় তারা ১ লাখ ৬৫ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট বাতিল করেছিল।

তবে যেসব অ্যাকাউন্টে শেয়ার আছে অথবা টাকা জমা আছে, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়। এছাড়া বেশ কিছু হাউস অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সিকিউরিটি ডিপোজিট বা জামানত জমা নিয়েছে। ওইসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিডিবিএলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ব্রোকারেজ হাউস থেকে বন্ধের তালিকা পাঠানো হয়। এটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে সিডিবিএলের খুব বেশি কিছু করার নেই। তিনি বলেন, একবার বন্ধ হলে ওই অ্যাকাউন্ট আর চালু হয় না।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে তা নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকা বর্ষ হিসেবে প্রতিবছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে অ্যাকাউন্ট বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল।

সিডিবিএলের তথ্যানুসারে, সারা দেশে ২৭ লাখ ৩৯ হাজার বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে ঢাকায় ২২ লাখ এবং ঢাকার বাইরে ৫ লাখ। কিন্তু গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ ৯০ হাজার সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। এগুলোতে শেয়ার আছে এবং তা থেকে নিয়মিত লেনদেন হয়। এছাড়া ৯ লাখ অ্যাকাউন্টে কখনও কখনও শেয়ার থাকলেও গত বছরের জানুয়ারি থেকে তা শূন্য হয়ে যায়। ৪ লাখ ৮৪ হাজার ১০১টি বিও অ্যাকাউন্টে কখনোই কোনো শেয়ার ছিল না। এসব অ্যাকাউন্ট সাধারণত আইপিওর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লটারিতে কোনো শেয়ার বরাদ্দ পায়নি বলে এসব অ্যাকাউন্টে কোনো শেয়ার নেই বলে জানা যায়।

সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে আইপিও আবেদনের জন্য নামে-বেনামে প্রচুর বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। একই ব্যক্তি এক থেকে দেড়শ’ পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। আর এসব অ্যাকাউন্ট থেকে শুধু আইপিও আবেদন করা হয়। ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। কিন্তু ২০১০ সাল শেষে তা ৩৩ লাখ ছাড়িয়ে যায়। আর এ প্রবণতা রোধে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়। এছাড়াও ওই অ্যাকাউন্টে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সার্টিফিকেট দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর স্বচ্ছতা আনতে গ্রাহক পরিচিতি (কেওয়াইসি) ফরম পূরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: