facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

শেয়ারবাজারে স্বল্প মূলধনী কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে নানা ছাড়


২০ জুন ২০১৮ বুধবার, ১১:১০  এএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


শেয়ারবাজারে স্বল্প মূলধনী কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে নানা ছাড়

পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনী কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ছাড় দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর মধ্যে রয়েছে- প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নীতিমালা মানতে হবে না; আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে বৈশ্বিক মান অনুসরণে বাধ্যবাধকতা নেই; ঋণ ও সম্পদের হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই; সম্পদের তথ্য পুরো না দিলেও চলবে; মানতে হবে না কমিশনের ১৯৮৭ সালের বিধান অনুযায়ী আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির বাধ্যবাধকতা।

স্বল্প মূলধনী কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে বিদ্যমান বিধিমালা থেকে এসব নিয়ম বাদ দিয়ে নতুন বিধিমালা করার প্রস্তাব এনেছে বিএসইসি। গত ১৪ জুন এমন সংশোধিত প্রস্তাবের ওপর জনমত জানতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কমিশন।

নতুন প্রস্তাবে কোনো স্বল্প মূলধনী কোম্পানির এ প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত হয়ে মূল বাজারে ঢোকার সহজ ব্যবস্থাও রেখেছে কমিশন। পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা পার হলেই মূল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে যে কোনো কোম্পানি। বিদ্যমান আইনে এমন ক্ষেত্রে তালিকাভুক্তি আইনের শর্ত পরিপালনের বাধ্যবাধকতা আছে। আইপিও প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত হয়ে কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারের যে বোর্ডে লেনদেন হয়, সেটাই মূল বাজার বলে বিবেচিত। এখন স্বল্প মূলধনী কোম্পানির জন্য পৃথক বোর্ড করার প্রক্রিয়া চলছে।

বর্তমানে ডিসক্লোজার বেসিস বা প্রকাশ করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কোম্পানিকে আইপিও প্রক্রিয়ায় মূলধন উত্তোলনের অনুমতি দেয় কমিশন। এ প্রক্রিয়াটিকে বলা হয়, কাগজ দেখে আইপিও অনুমোদন। এখন স্বল্প মূলধনী কোম্পানির ক্ষেত্রে অনেক কম তথ্য ও কাগজ দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তোলার ব্যবস্থা হতে যাচ্ছে- নতুন বিধান করার প্রস্তাব দেখে এমন মন্তব্য করেছেন বিশ্নেষকরা।

প্রসঙ্গত, স্বল্প মূলধনী বলতে ৩০ কোটি টাকার কম পরিশোধিত মূলধনী কোম্পানিকে বুঝিয়েছে বিএসইসি। ২০১৬ সালের অক্টোবরের আগে এমন কোম্পানির শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ ছিল না। এ অবস্থায় কার্যকর শেয়ারবাজার গড়তে পাঁচ কোটি টাকার বেশি, কিন্তু ৩০ কোটি টাকার কম মূলধনী কোম্পানিকে মূলধন সংগ্রহ করতে দিতে আইপিওর মতো ‘কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপিটাল কোম্পানিজ’ নামে একটি বিধান করে সংস্থাটি। বিধান কার্যকর না হতেই তা বাদ দিয়ে নতুন বিধান করার প্রস্তাব আনল বিএসইসি।

বিদ্যমান বিধানের ব্যাপক রদবদলের কারণে যেনতেন কোম্পানির মূলধন উত্তোলনের সুযোগ বাড়বে বলে মনে করেন শেয়ারবাজার সংশ্নিষ্ট ও বিশ্নেষকরা। তারা বলেন, মনে হচ্ছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ানোতেই সাফল্য খুঁজছে বিএসইসি। এক্ষেত্রে মানের বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

বিদ্যমান বিধিমালায় আছে, সংশ্নিষ্ট কোম্পানির মুনাফার ১০ শতাংশ বা তার বেশি কোনো বিশেষ পণ্য ও সেবা বিক্রি থেকে এলে এবং সহযোগী কোম্পানি থাকলে তার তথ্য দিতে হবে। পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজারজাত করার তথ্য দিতে হবে। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীসহ বড় গ্রাহক ও সরবরাহকারীর তথ্য দিতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ও সব লাইসেন্স এবং ব্যবসায়িক অত্যাবশ্যক অনাপত্তিপত্র সম্পর্কিত তথ্য দিতে হবে। পণ্যের উৎপাদন ক্ষমতাসহ অতীত ও ভবিষ্যতের চিত্র দিতে হবে। এর সবই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য প্রয়োজন।

নতুন সংশোধন প্রস্তাবে এসব তথ্য প্রকাশের ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। উদ্যোক্তা-পরিচালক বা স্বার্থ-সংশ্নিষ্টদের কাছ থেকে সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়, মেশিনারিজ ক্রয়ের তারিখসহ সরবরাহকারী সম্পর্কে তথ্য প্রদান সংক্রান্ত ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। সরকারের রাজস্ব অর্থাৎ ভ্যাট বা আয়কর বকেয়া থাকলে বা কাউকে কোনো সম্পত্তি ইজারা দেওয়ার সম্মতি দিলে সেগুলোর তথ্য প্রকাশের শর্তও বাদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে একই ব্যবসায়িক গ্রুপের অন্য কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত থাকলে তার ছয় মাসের শেয়ারদরের ওঠানামার তথ্য বা কোনো কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে থাকলে তার তথ্য প্রদানের শর্ত বাদ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ পাঁচ বছরের কোম্পানির ব্যবসা সম্পর্কিত পরিবর্তনের তথ্য, পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা এবং ব্যবসা ঝুঁকি সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশের ধারাগুলো সম্পূর্ণ বাদ দিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া কোম্পানির ঋণ সম্পর্কিত তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতার ধারা বাদ দিয়ে নতুন প্রস্তাব আনা হয়েছে। এতে কোম্পানির দেনা-পাওনা ও অবিক্রীত পণ্যের বিষয়ে তথ্য দিতে হবে না। ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের বাধ্যবাধকতাও নেই নতুন সংশোধনে। তবে আগের মতো শুধু প্রাতিষ্ঠানিক ও উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের জন্য স্বল্প মূলধনী কোম্পানির শেয়ার কেনার সুযোগ রাখা হয়েছে। এখানে উচ্চ সম্পদশালী বলতে এক কোটি টাকার সম্পদধারীকে বোঝানো হয়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: