facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

শেয়ারবাজার চাঙা রাখতে এখনি ‘ভালো শেয়ার’, নইলে ধস


২৪ জানুয়ারি ২০১৭ মঙ্গলবার, ০৪:১০  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


শেয়ারবাজার চাঙা রাখতে এখনি ‘ভালো শেয়ার’, নইলে ধস

ছয় বছর পর চাঙা হয়ে ওঠা শেয়ারবাজারকে এই অবস্থায় ধরে রাখতে বাজারে ‘ভালো শেয়ার’ দ্রুত আসার প্রয়োজন দেখছেন বিশ্লেষকরা। নইলে ফের ধস নামতে পারে বলে শঙ্কা তাদের।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০২০ সালের মধ্যে ‘শক্তিশালী পুঁজিবাজার’ এর যে প্রত্যাশা করছেন, তার জন্যও নতুন ও ভালো প্রতিষ্ঠানের আইপিও বাজারে আনতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

চলতি বছরের শুরু থেকেই চড়ছে পুঁজিবাজার। লেনদেন প্রতিদিনই বাড়ছে, সঙ্গে সূচকও।

২০১০ সালের পর সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ১৮১ কোটি টাকা লেনদেনের রেকর্ড হয়েছে সোমবার, এদিন ডিএসইতে সূচকও প্রায় ৫ হাজার ৭০০ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে।

এই উল্লম্ফন দেখে অনেকে পুঁজিবাজার নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠায় আবারও ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ভিড় বাড়ছে, যা দেখে ছয় বছর আগের কথা মনে পড়ছে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম‌্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের।

নতুন শেয়ারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এ অবস্থায় বাজারে নতুন ও ভালো শেয়ার না আসলে খারাপ শেয়ারের দাম আরও বেড়ে যাবে। যার ফলে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের মতো ধসের ঘটনা ফের ঘটতে পারে।”

১৯৯৬ সালে ধসের পর ২০১০ সালে আবারও পুঁজিবাজার বিনিয়োগ করে সর্বস্ব হারিয়েছিলেন অনেকে। এবার বাজার চড়তে থাকায় বিনিয়োগকারীদের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকেও সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হচ্ছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজও ব‌্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের বুঝে-শুনে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, “পুরনো বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগকারীরাও বাজারে ঢুকছে। ভালো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের পাশাপাশি খারাপ শেয়ারের দামও বাড়ছে।”

তাই দেশের বিভিন্ন খাতের ভালো ভালো কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার উপর জোর দেন বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সাবেক এই চেয়ারম‌্যান।

“২০০৯ সালে গ্রামীণফোনের শেয়ার এসে বাজারকে শক্তিশালী করেছে। বহু বিনিয়োগকারী এই শেয়ারে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা করেছে। গত সাত বছরে অনেক শেয়ার বাজারে এসেছে। কিন্তু জিপির মতো শেয়ার আসেনি। অন্য মোবাইল কোম্পানিগুলোও বাজারে শেয়ার ছাড়বে বলে বলে আসছে। কিন্তু ছাড়ছে না।”

জনতা ব্যাংকসহ সরকারের অনেক লাভজনক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে ছাড়ার কথা শোনা যাচ্ছে অনেক দিন ধরে। অর্থমন্ত্রী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের তালিকাও তৈরি করেছিলেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো ফল আসেনি।

“এখন সময় এসেছে এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার। বিএসইসির মাধ্যমে ভালো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে ছাড়তে উৎসাহিত করার পাশাপাশি তদারকও করতে হবে,” বলেন মির্জ্জা আজিজ।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আনতে প্রয়োজনে প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়ারও পক্ষপাতি তিনি।

২০১০ সালের ধসের পর সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক অবস্থা না আসায় ক্ষোভ ছিল ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। নিস্তরঙ্গ বাজারে বিপরীত চিত্রের দেখা মিলছে মাসখানেকের লেনদেনে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমানও এখন বড় কোম্পানিগুলোকে বাজারে চান।

তিনি বলেন, “বাজার ভালো যাচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ছোট বিনিয়োগকারীরাও বাজারে এখন সক্রিয়। সবাই খুশি। প্রতিদিনই লেনদেনে রেকর্ড হচ্ছে। বাড়ছে সূচক।

“এ অবস্থায় তিনশ-সাড়ে তিনশ শেয়ার দিয়ে হবে না। সত্যিকার অর্থে শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে তিন হাজার প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে থাকতে হবে। এখন থেকেই এর প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতি মাসেই যাতে দু-তিনটি ভালো প্রতিষ্ঠানের আইপিও বাজারে আসে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।”

এজন‌্য কী ধরনের পদক্ষেপ সরকার নিতে পারে, সে পথও বাতলে দেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর।

“বড় বড় প্রতিষ্ঠান যাতে ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ না পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে বাধ্য হয়ে তারা শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করবে। এতে বাজার সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হবে।”

অর্থমন্ত্রীর মতো রকিবুরও মনে করেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার একটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছাবে।

রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজার নিয়ে নিজের আশার কথা শোনান অর্থমন্ত্রী মুহিত।

তিনি বলেন, “গত ২০ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে হয়নি, এ রকম রেকর্ড খুব কম দেশের আছে। আমার বিশ্বাস, আমরা যেভাবে চলছি, আরও যদি কিছু পরিবর্তন আমরা করতে পারি, তাহলে এই দশকেই, মানে ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের অনেকগুলো নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। আমি বিশ্বাস করি, ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের এখানে একটা শক্তিশালী পুঁজিবাজার সৃষ্টি হবে।”

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: