শেয়ার লুফে নিচ্ছেন কোসুলী বিনিয়োগকারীরা

টানা দরপতনের পর দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। দরপতনে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বিনিয়োগসীমায় নেমে আসায় কৌসুলী বিনিয়োগকারীরা সুযোগ লুফে নিয়েছেন। এতে শেয়ার ক্রয় চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার ডিএসইর ১৯ খাতের মধ্যে ১৫ খাতের বাজার মূলধন এক থেকে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এলফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচকটি বৃহস্পতিবার প্রায় দুই শতাংশ বেড়েছে।

ব্যাংক ব্যবস্থায় তারল্য সঙ্কট ও আমানতের সুদহার বৃদ্ধির কারণে চলতি বছরের শুরু থেকেই পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা তৈরী হয়। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কতৃক বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋন আমানত অনুপাত পূন:নির্ধারনের কারণে বাজার পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। ফলে চলতি বছরের শুরু থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি ৭৫৫ পয়েন্ট হারায়। নিয়মিত দরপতনে অধিকাংশ শেয়ার দর সর্বনিম্ন দরে নেমে আসে। এ অবস্থায় কম দরে শেয়ার কেনার সুযোগ নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। অবশ্য কম দরে শেয়ার কেনার সুযোগটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাই নিয়েছেন। কারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের নতুন করে বিনিয়োগ সামর্থ প্রায় নেই বললেই চলে।

বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই ক্রয়াদেশের চাপে অধিকাংশ শেয়ারের দরে উর্ধ্বমুখি প্রবনতা দেখা যায়। এতে শুরু থেকেই সূচকে বাড়তি পয়েন্ট যোগ হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৭৮ শতাংশ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের তুলনায় ১০৮ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট বেড়ে ৫৫৯৭ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়। বৃহস্পতিবার ব্লু চীপ খ্যাত শেয়ার দরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। এতে ডিএস-৩০ সূচকটি আগের দিনের প্রায় আড়াই শতাংশ বেড়েছে।

ডিএসইর খাতওয়ারি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল বেশিরভাগ শেয়ারের দর বাড়লেও ব্যাংকখাতের দরবৃদ্ধি সূচক বাড়াতে সবচেয়ে বেশি ভমিকা রেখেছে। বৃহস্পতিবার এ খাতটির বাজার মূলধন বেড়েছে ২ দশমিক ১ শতাংশ। অবশ্য বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে সিরামিক খাতে। এ খাতটির গড় মূল্য বেড়েছে ৩ দষমিক ৬ শতাংশ। এর বাইরে জীবন বীমা খাত ২ দশমিক ৮ শতাংশ, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাত ২ দশমিক ২ শতাংশ, সেবা খাতের ২ দশমিক ১ শতাংশ দর বেড়েছে। একমাত্র পাট খাতের বাজার মূলধন সামান্য কমেছে। গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এককভাবে ব্যাংকখাতের বাজার মূলধন বেড়েছে ১ হাজার ৩১০ কোটি টাকা।

অব্যাহত দরপতনে সাইড লাইনে থাকা বিনিয়োগকারীদের একটি অংশকে বৃহস্পতিবার সক্রিয় হতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবারশেয়ার ক্রয়ে নেতৃত্বে ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এতে গতকাল ডিএসইর লেনদেনে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেছে। বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৭০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ৬৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ৫৩৩ শতাংশ বেশি।

বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৩৫ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৬১টির, কমেছে ৫৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টি কোম্পানির শেয়ার। সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৩০ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬৮টির, কমেছে ৪৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টি কোম্পানির শেয়ার।

ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- স্কয়ারফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক লিঃ, বেক্সিমকো লিঃ, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ইউসিবিএল, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিঃ, ইফাদ অটোস, সিটি ব্যাংক লিঃ, গ্রামীন ফোন ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।

দরবৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বেক্সিমকো লিঃ, গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স, শাশা ডেনিমস, তাক্কাফুল ইন্সুরেন্স, বিডি ফাইন্যান্স, আইএফআইসি ব্যাকলিঃ, প্রিমিয়ার ব্যাংক,লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স ও জিএসপি ফাইন্যান্স।

অন্যদিকে দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কোম্পানি হলো:-কুইন সাউথ টেক্সটাইল, স্টাইল ক্র্যাফট, ইস্টার্ন ইন্সুরেন্স, ইউসিবিএল, রিপাবলিক ইন্সুরেন্স, এনভয় টেক্সটাইল, ফাইন ফুডস, মুন্নু স্টাফলার, কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স ও রেকিট বেন্কিজার।