১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ শনিবার, ০১:৩৫ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১২ কোম্পানির শেয়ারে কারসাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এতে কারসাজির মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের দায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিও (বেনিফিসিয়ারি ওনার্স) হিসাব থেকে তহবিল উত্তোলন ও স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কমিশনের নিয়মিত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের কারণ অনুসন্ধানে গত ২১ জুলাই এসইসির পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এসইসি। তদন্ত কমিটি কিছু শেয়ারের অস্বাভাবিক পতন ও স্টক এক্সচেঞ্জের কেনাবেচা কমে যাওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের ভূমিকাও পর্যালোচনা করে। বিস্তারিত তদন্তে কমিটি ১২ কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি ও অনিয়মের পাশাপাশি আরও এক কোম্পানির পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রির প্রমাণ পায়। তদন্ত কমিটির জমা দেওয়া প্রতিবেদন কমিশনে উত্থাপন করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় এসইসি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত ১২ কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা হলেন বিশ্বজিৎ দাস ও তার স্ত্রী, মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, মো. সাইফ উল্লাহ, হোসাম মো. সিরাজ, এ এস এস আহসান হাবিব চৌধুরী এবং মো. লুৎফুল গনি টিটো ও তার স্ত্রী।
এ ছাড়া মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইনের মালিকানাধীন বিঅ্যান্ডবিএস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, লুৎফুল গনি টিটোর মালিকানাধীন সাতরং অ্যাগ্রো ফিশারিজ ও মুন্নু গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির করপোরেট পরিচালক মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির দায়ে অভিযুক্ত। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট আরও কিছু ব্যক্তি রয়েছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায়। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্র্রিবিউশন কোম্পানি, ভিএফএস থ্রেড ডাইং, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, এসএস স্টিল, ইনটেক, সায়হাম টেক্সটাইলস, সায়হাম কটন মিলস, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু জুট স্টাফলার্স, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার নিয়ে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের প্রমাণ পেয়েছে এসইসি।
এসব কোম্পানির মূল্য সংবেদনশীল আগাম তথ্য পেয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শেয়ার লেনদেন ও বাজার কারসাজি করেছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সিরিজ অব ট্রেডিং, আচরণবিধি ভঙ্গ, অতিরিক্ত ঋণ প্রদান, অটো ক্লাইন্ট ট্রেড, আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম, শর্ট সেলিং ও সার্কুলার ট্রেডিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে এসইসি গঠিত তদন্ত কমিটি।
অভিযুক্তদের মধ্যে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী ছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কর্মরত ব্যক্তিও রয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকালের কমিশন সভায়।
এ ছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিও হিসাব থেকে তহবিল উত্তোলন, স্থানান্তর ও লিংক হিসাবের মাধ্যমে শেয়ার স্থানান্তর বন্ধ থাকবে। তবে তারা সেকেন্ডারি মার্কেটে নিয়মিতভাবে শেয়ার লেনদেন করতে পারবেন।
করপোরেট পরিচালক মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে মুন্নু সিরামিক ও মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারে কারসজির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে এসইসি। এ কারণে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত মুন্নু ওয়েলফেয়ার কর্তৃক ধারণকৃত মুন্নু সিরামিকস ও মুন্নু জুটের শেয়ার ফ্রিজ, শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, বন্ধকসহ সব ধরনের লেনদেন বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে এসইসি। এ ছাড়া মুন্নু সিরামিকের শেয়ার লেনদেন, আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম ও করপোরেট ঘোষণার মাধ্যমে মুন্নু ওয়েলফেয়ার কর্তৃক শেয়ার বিক্রিসংক্রান্ত এসইসি তদন্ত প্রতিবেদন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মুন্নু সিরামিক, মুন্নু ওয়েলফেয়ার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া মুন্নু সিরামিকের শেয়ার পাবলিক মার্কেট থেকে পরবর্তী কার্যদিবস থেকে স্পট মার্কেটে (নগদ টাকায় লেনদেন) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
এদিকে পরিচালক হয়েও আলহাজ টেক্সটাইলের শেয়ার ঘোষণা ছাড়া বিক্রি ও অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পাওয়া প্রসঙ্গে ভুল মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের দায়ে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. শামসুল হুদার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত শামসুল হুদার সব সিকিউরিটিজ স্থগিত (ফ্রিজ) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসইসি।
এসইসি জানায়, কোনো ঘোষণা না দিয়ে আলহাজ টেক্সটাইলের পরিচালক শামসুল হুদা নিজ কোম্পানির ২০ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন। এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবদন গত ১০ জুলাই এসইসিতে পাঠায় ডিএসই। এর বাইরে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪৪১টি শেয়ার বিক্রি করেন এএনএফ ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি নামের একটি ট্রেকহোল্ডারের মাধ্যমে, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তিনি। তার শেয়ার বিক্রির ফলে আলহাজ টেক্সটাইলের উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণের পরিমাণ ৩০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এসব কার্যক্রমে বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন হওয়ায় শামসুল হুদার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এসইসি। এর আগ পর্যস্ত তার ধারণকৃত সব সিকিউরিটিজ ফ্রিজ রাখার পাশাপাশি এএনএফ ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে এসইসি। এ ছাড়া পরবর্তী কার্যদিবস থেকে আলহাজ টেক্সটাইলের শেয়ার পাবলিক মার্কেটের পরিবর্তে স্পট মার্কেটে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তও নিয়েছে কমিশন।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।