facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

শীতে চার রোগ থেকে সাবধান


১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ শুক্রবার, ০৬:০০  পিএম

ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন

শেয়ার বিজনেস24.কম


শীতে চার রোগ থেকে সাবধান

শীতে দেশে হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, অ্যালার্জির মতো নানা রোগের প্রকোপ বাড়ে। সেই সঙ্গে পরিবেশে কিছু রোগজীবাণু বাড়ে। তাই এ সময় সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি। তাই সাবধান থাকতে হবে। জেনে নিন এ রকম কয়েকটি সংক্রমণের কথা:

ফ্লু: বাংলাদেশে বছরজুড়েই ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা হতে পারে। কিন্তু শীতে প্রতিবারই এর প্রকোপ বেড়ে যায়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ সমস্যার জন্য দায়ী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস পরিবেশে বাড়ে। এই ভাইরাস হাঁচি, কাশি ও বাতাসের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরিণামে জ্বর, কাশি, সর্দি, নাক বন্ধ ইত্যাদি দেখা দেয়। ফ্লু সাধারণত এমনিতেই সেরে যায়। কিন্তু শিশু, বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা এবং কম রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য এটা জটিল রূপ নিতে পারে। তাই এমন ক্ষেত্রে আজকাল ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকার কথা বলা হচ্ছে। ফ্লু হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খান, বিশ্রাম নিন। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ও সর্দি-কাশির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিনই যথেষ্ট। ফ্লু সারানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই।

নিউমোনিয়া: শীতের শুরু থেকেই ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে। নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া এই নিউমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বেশি আক্রান্ত হয় ছোট শিশু, বয়স্ক লোকেরা। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, যেমন: ডায়াবেটিস, কিডনি, শ্বাসতন্ত্র বা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিশেষ ঝুঁকিতে থাকেন। প্রচণ্ড জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি নিউমোনিয়ার লক্ষণ। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে জটিলতা হতে পারে। ঝুঁকি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের নিউমোনিয়ার টিকা দিয়ে নেওয়া ভালো। শিশুদের জ্বর ও কাশির সঙ্গে বুকের পাঁজর ওঠা-নামা করলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া জরুরি। অ্যান্টিবায়োটিকের ক্রমবর্ধমান অকার্যকারিতার জন্য নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হার বাড়ছে। সাধারণ ভাইরাস জ্বর বা ফ্যারিনজাইটিস হলে অকারণে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। তবে নিউমোনিয়া দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক সঠিক মাত্রায় ও মেয়াদে সেবন করতে হবে।
ডায়রিয়া: পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া সারা বছরই হতে পারে। তবে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া অনেক সময় শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়। এই রোগেও তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, কেবল পানি ও লবণশূন্যতা থেকে রক্ষা করাটাই জরুরি। তাই সময়টা শীত হলেও প্রতিবার মুখে খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর তরল খেতে হবে।

নাক-কান-গলা: শীতে বাড়তে পারে গলনালির প্রদাহ বা ফ্যারিনজাইটিস, সাইনাসের প্রদাহ এবং অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। ঠান্ডা হাওয়া, শুষ্কতা, পরিবেশের ধুলাবালি ইত্যাদি এর জন্য দায়ী। ছোটরাই বেশি আক্রান্ত হয়, বড়রাও কম নয়। সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, টনসিল ফুলে যাওয়া, মাথাব্যথা, নাক বন্ধ বা নাক দিয়ে পানি ঝরা ইত্যাদি বিরক্তিকর উপসর্গ দেখা দেয়। এই সমস্যাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসজনিত এবং নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে স্ট্রেপটোকক্কাল সোর থ্রোট হলে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয় বটে। ফ্লুর মতো এতেও বিশ্রাম, তরল খাবার গ্রহণ ও উপসর্গের চিকিৎসাই মূল চিকিৎসা।

নিপাহ ভাইরাস: শীত মৌসুমে কয়েক বছর ধরে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এই ভাইরাস বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। শীতকালে গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস খাওয়ার ধুম পড়ে। বাদুড়ের লালা, মূত্র ইত্যাদি দিয়ে এই রস সংক্রমিত হয়ে মানুষে ছড়ায়। নিপাহ ভাইরাসের আক্রমণে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহ হতে পারে। খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া উচিত নয়।

ডা. আ ফ ম হেলালউদ্দিন

মেডিসিন বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: