১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ মঙ্গলবার, ০৪:৪৯ পিএম
এমএ ওয়াদুদ মিয়া, শরীয়তপুর
শেয়ার বিজনেস24.কম
শরীয়তপুর সদর উপজেলার পূর্ব কোটাপাড়া, মুন্সিরহাটের সরকারি জমি এবং কীর্তিনাশা নদী থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে ড্রেজার ও ভ্যাকু দিয়ে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
ফলে নদীর নিকটবর্তী রাস্তাঘাট এবং ঘরবাড়ি ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। আর এ অবৈধ ব্যবসাটি স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে হলেও তারা অদৃশ্য কারণে নিরব রয়েছে।
এদিকে দ্রুত নদী থেকে মাটি কাটা এবং বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন এলাকাবাসী। আর উপজেলা প্রশাসন বলেন, অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন এবং সরকারি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পূর্ব কোটাপাড়া এবং মুন্সিরহাট খেয়াঘাট এলাকা থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী একিন আলী খান, মোসলেম খান, সুমন মন্ডল, মতি ছৈয়াল, হাবিবুর রহমান, মরণ ফরাজী দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খাশ জমি থেকে মাটি বিক্রি এবং কীর্তিনাশা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছেন।
এতে পূর্ব কোটাপাড়ার লঞ্চঘাট, নয়া কান্দি, নর বালা খানা হয়ে আবুল কাসেম ফরাজীর বাড়ির সামনে দিয়ে প্রবাহিত কীর্তিনাশা নদীর পারের রাস্তা এবং নদীর পাড়ের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি মাহেন্দ্র ট্রলি দিয়ে মাটি পরিবহনের কারণে রাস্তার অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়েছে যে, জনসাধারণ তথা যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে রাস্তার ওপর পড়ে থাকা কাঁদা মাটি এবং ধুলো বালিসহ মাহেন্দ্র ট্রলির কালো ধোঁয়ার কারণে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। এলাকাবাসীর বাঁধা উপেক্ষা করে প্রভাবশালীরা কোন বাঁধাই মানছে না। এ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী শরীয়তপুর মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তার কোনো ফল এলাকাবাসী পায়নি। তাদের শঙ্কা অবৈধ বালু উত্তোলন ও সরকারি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ না হলে বহু ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
পূর্ব কোটাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং পালং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার কামাল উদ্দিন সরদার বলেন, একিন আলী খান, মোসলেম খান, সুমন মন্ডল, মতি ছৈয়াল, হাবিবুর রহমান, মরণ ফরাজী দীর্ঘদিন ধরে সরকারী খাশ জমি থেকে মাটি বিক্রি এবং কীর্তিনাশা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছেন। প্রশাসন কি কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা আমার বোধগম্য হয় না। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
পূর্ব কোটাপাড়া গ্রামের জয়নাল আবেদীন সরদার বলেন, ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তারা শুধু বালু উত্তোলনই করছে না। তারা সরকারি খাশ জমি থেকে ভ্যাকু দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছে। তারা কাউকেই তোয়াক্কা করছে না। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।
পূর্ব কোটাপাড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত আবু কালাম সরদার বলেন, নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা এবং বালু উত্তোলন করার কারণে আমার ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের দেখার কোনো লোক নেই।
পূর্ব কোটাপাড়া গ্রামের মোসলেম সরদার বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারি জমি থেকে মাটি এবং কীর্তিনাশা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ইটের ভাটায় বিক্রি করছে। আমরা লিখিত অভিযোগ করার পরেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
পূর্ব কোটাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাবানা বেগম এবং রুবিনা বেগম বলেন, মাহেন্দ্র ট্রলি যাতায়াতের কারণে আমাদের রাস্তা ভেঙ্গে গেলে আমরা মিছিল করি। তারপর কিছুদিন বন্ধ ছিল। সরকার দলীয় লোকদের সহযোগিতায় আবারও অবৈধভাবে মাটি কাটা শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে মুন্সিরহাট এলাকার মাটি ব্যবসায়ী একিন আলী খান, হাবিবুর রহমান, মোসলেম খান বলেন, কীর্তিনাশা নদীপাড়ে আমাদের নিজস্ব জমি আছে। আমরা আমাদের জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, পূর্ব কোটাপাড়া এবং মুন্সির হাটের কিছু কিছু জায়গা থেকে কতিপয় লোকজন অবৈধ ভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন এবং সরকারি জমি থেকে মাটি কাটছিল বলে আমরা সংবাদ পেয়েছিলাম। সেই সংবাদের ভিত্তিতে আমরা সেখানে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা তা বন্ধ করে দিয়েছি। আবার নতুন করে কেউ যদি মাটি কাটে বা বালু উত্তোলন করে তাহলে আমরা তা বন্ধ করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।