facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ


২৩ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার, ০১:৩১  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ

 

দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতনে হতাশ বিনিয়োগকারীরা অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। শিগগির বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমন আশাবাদীর সংখ্যা কমছে। এ কারণে থেমে থেমে কম-বেশি সব খাতের শেয়ারের দর কমার মধ্যে প্রায় বড় পতন হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার আরেকটি বড় দরপতনে বেশিরভাগ শেয়ারের দর তলানিতে নেমেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে লোকসানের অঙ্ক বাড়ছে। অনেকে আরও লোকসানের ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বাজারে দিন দিন পতনের মাত্রা বাড়ছে।

প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল লেনদেন হওয়া প্রায় ৮৩ শতাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে, যেখানে দর বেড়েছে মাত্র সাড়ে ৮ শতাংশের। দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ৮০ শতাংশ শেয়ারের দর কমেছে। সোমবার শুধু ব্যাংক খাতের শেয়ারদর বাড়লেও গতকাল ব্যাংকসহ অন্য সব খাতের শেয়ার দর হারিয়েছে। অন্তত ২৪ কোম্পানির শেয়ার দিনের সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে কেনাবেচা হয়েছে। এর অনেকগুলোরই ক্রেতা ছিল না। গতকালের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়েছে ৫৫ শেয়ারের।

এমন দরপতনে গতকাল উভয় বাজারের প্রধান দুই মূল্য সূচকের পতন হয়েছে ১ শতাংশের ওপর। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৫৩ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৭০৮ পয়েন্টে নেমেছে। সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ৯৭ পয়েন্ট হারিয়ে ৮৭০৮ পয়েন্টে নেমেছে।

দরপতনের বিষয়ে জানতে গতকাল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, স্টক এক্সচেঞ্জের কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবির কর্মকর্তারাও মুখ বন্ধ রেখেছেন। প্রতিষ্ঠানটি গত কিছুদিন ধরে ক্রমাগত শেয়ার কিনে দরপতন রুখতে চেষ্টা করেও সুবিধা করতে পারছে না।

আইসিবির এক কর্মকর্তা জানান, বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে নয়, শুধু সূচক বাড়ানোর জন্য শেয়ার কিনেছে তার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিক্রির চাপ বেশি থাকায় তাদের বিনিয়োগ বাজারে প্রভাব ফেলছে না। তার মতে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা একেবারেই আশা ছেড়েছেন। এখন যারা কম লোকসানে আছেন, তারা ঝুঁকি কমাতে শেয়ার বিক্রি করছেন। হাতে গোনো কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নিষ্ফ্ক্রিয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, উল্টো মাঝে মধ্যেই এদের কারও কারও কাছ থেকে বড় বিক্রির চাপ আসছে।

আইসিবির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বাজারের অনেকের অভিযোগও কম নয়। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা জানান, আইসিবি দরপতন রুখতে চায়; কিন্তু এক দিনে ১০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার কিনবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এভাবে হয় না উল্লেখ করে তারা বলেন, দরপতন রুখতে প্রয়োজনে একাধিক দিন যথেষ্ট বিনিয়োগ করতে হবে। সুযোগ বুঝে কেউ হয়তো শেয়ার বিক্রি করবে। তবে সাপোর্ট বজায় রাখলে এ ধারা বন্ধ হবে। এখন যেভাবে আইসিবি বিনিয়োগ করছে, তা দিয়ে বাজার তো ঘুরে দাঁড়াচ্ছেই না, উল্টো প্রতিষ্ঠানটি যে কিছু করতে পারে- বিনিয়োগকারীরা সে বিশ্বাসও হারিয়ে ফেলছে।

বড় একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, বাজারের কারও মুখের দিকে তাকানো যায় না। সবাই বিশাল অঙ্কের লোকসানে। মাঝে দরপতন বাড়ার সময় অনেক বিনিয়োগকারী ফোন করে জানতে চাইত, দরপতন কবে বন্ধ হবে। তাদের বলেছি, ধৈর্য ধরতে। ধৈর্য ধরে যারা শেয়ার রেখেছিল, তাদের অনেকের লোকসান গত এক মাসেই ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তাই এখন যাতে কিছু বলতে না হয়, সে জন্য অনেক সময় ফোনও রিসিভ করি না।

তবে ধৈর্য ধরার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি শাকিল রিজভী। তিনি বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না শেয়ারবাজার এখন গভীর সংকটে। তাই বলে অধৈর্য হয়ে সবাই শেয়ার বিক্রি শুরু করলে ক্রেতা আসবে কোথা থেকে। বরং শেয়ার বিক্রি বন্ধ হলে দরপতনও বন্ধ হবে। ডিএসইর সাবেক এই সভাপতি বলেন, দরপতন বন্ধ করতে অন্যের ওপর নির্ভর না করে সবাই যদি সিদ্ধান্ত নিই লোকসানে বিক্রি করব না- তাহলেই ঘুরে দাঁড়াবে বাজার। এটা মনে করার কারণ নেই- পতন অনন্তকাল চলবে। আমরা যখন লোকসানে শেয়ার বিক্রি বন্ধ করব, তখনই ঘুরে দাঁড়াবে বাজার। কাউকে এসে `উদ্ধার` করতে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: