facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪

Walton

লেনদেন নিষ্পত্তিতে সিসিপি গঠনে ২৯ বিষয়ে পরিবর্তন চায় ডিএসই


২৬ এপ্রিল ২০১৭ বুধবার, ০৮:৪৭  এএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


লেনদেন নিষ্পত্তিতে সিসিপি গঠনে ২৯ বিষয়ে পরিবর্তন চায় ডিএসই

উভয় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব ধরনের সিকিউরিটিজের লেনদেন নিষ্পত্তির (সেটেলমেন্ট) জন্য স্বতন্ত্র ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে একটি ‘সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি’ (সিসিপি) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি সংস্থাটি সিসিপি কোম্পানি গঠন-সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া প্রকাশ করেছে। খসড়ায় এ বিধিমালার ২৯টি বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। এসব বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের মতামত দিয়ে চলতি সপ্তাহে বিএসইসিকে চিঠি দিয়েছে ডিএসই।

পৃথক ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট কোম্পানি বা সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি গঠন হলে সিকিউরিটিজ, বন্ড, ডেরিভেটিভস প্রডাক্টস দ্রুত লেনদেন সুবিধাসহ আরও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

বিএসইসি’র খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, ক্লিয়ারিং ও সেটলমেন্ট কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ শেয়ার সম্মিলিতভাবে ধারণ করতে পারবে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানই এককভাবে ৪৯ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। এর বিপরীতে স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের কমপক্ষে ৮৫ শতাংশ শেয়ার ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই।

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি ডি-মিউচুয়ালাইজড (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা আলাদা) আকারে গঠন হবে। থাকবে কৌশলগত বিনিয়োগকারী। বিধিমালায় কৌশলগত বিনিয়োগকারীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘কৌশলগত বিনিয়োগকারী’ অর্থ বৈদেশিক কোনো প্রতিষ্ঠান যা সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি অথবা এক্সচেঞ্জ অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কার্যক্রমে নিয়োজিত এবং যার বিনিয়োগের মাধ্যমে সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির কার্যক্রম পরিচালনায় অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা নিশ্চিত হবে। এক্ষেত্রে বিএসইসি কৌশলগত বিনিয়োগকারী একক বা যৌথভাবে সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির মোট ইস্যুকৃত এবং পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার পক্ষে।

তবে ডিএসই’র মতে, মূলধনের ১০ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে হস্তান্তর করাই সব পক্ষের জন্য যুক্তিযুক্ত হবে। আর কৌশলগত বিনিয়োগকারী শুধু বৈদেশিক নয়, স্থানীয়ও হতে পারে বলে মত দিয়েছে ডিএসই।

খসড়ায় বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র পরিচালক, শেয়ার ধারক পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সমন্বয়ে গঠিত হবে এবং পর্ষদের সদস্য সংখ্যা হবে ১১ জন।  এর মধ্যে ছয়জন স্বতন্ত্র পরিচালক। তবে সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির প্রথম পরিচালনা পর্ষদের স্বতন্ত্র পরিচালক কোনো প্রস্তাবনা ছাড়াই কমিশন নিয়োগ দেবে। এছাড়া শেয়ারহোল্ডার এক্সচেঞ্জগুলোর পরিচালনা পর্ষদ মনোনীত দুজন পরিচালক; অন্য শেয়ারহোল্ডারদের মনোনীত বা নির্বাচিত দুজন পরিচালক, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ পরে একজন পরিচালক কৌশলগত বিনিয়োগকারীর মনোনীত বা নির্বাচিত হবেন। পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হবে।

এ বিষয়ে ডিএসই বলেছে, স্বতন্ত্র পরিচালক থাকবে চার জন। স্বতন্ত্র পরিচালকদের শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা নির্বাচিত করার বিধান রাখার পক্ষে ডিএসই। শেয়ারহোল্ডার এক্সচেঞ্জগুলোর পরিচালনা পর্ষদ মনোনীত দুজন পরিচালক থাকার বিপক্ষেও মত দিয়েছে ডিএসই। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, শেয়ারহোল্ডার এক্সচেঞ্জগুলোর পরিচালনা পর্ষদ মনোনীত চার জন পরিচালক থাকবে। এর মধ্যে ডিএসইরই থাকবে তিন জন পরিচালক।

মতামতের যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই’র একাধিক পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, যেহেতু সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির কাজ হবে এক্সচেঞ্জকে ঘিরে এবং মোট লেনদেনের প্রায় ৯০ শতাংশ ডিএসই’র, তাই কমপক্ষে তিন জন পরিচালক ডিএসই থেকে মনোনীত হওয়ার পক্ষে মতামত দেওয়া হয়েছে।

পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ প্রসঙ্গে খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, একজন পরিচালক পরপর দুই মেয়াদের বেশি নির্বাচিত হবেন না। তবে একটি মেয়াদ বাদ দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত হতে পারবেন। স্বতন্ত্র পরিচালকের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, একজন স্বতন্ত্র পরিচালক তিন বছর মেয়াদের জন্য মনোনীত হতে পারবেন এবং সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির বোর্ডের সুপারিশক্রমে এবং কমিশনের অনুমোদনক্রমে আরও একটি মেয়াদের জন্য নবায়ন করা যেতে পারে। তবে, তারপর একটি মেয়াদ বাদ না দিয়ে পরে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে মনোনয়নের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ নিয়ে ডিএসই’র কোনো মতামত দেয়নি।

লেনদেন নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি এবং ঝুঁকির বিপরীতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি ‘সেটলমেন্ট গ্যারান্টি ফান্ড’ ও ‘ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ড’ গঠন করবে। তাছাড়া ক্ষতিপূরণের জন্য বিমা অন্তর্ভুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নিতে চায় না ডিএসই।

এছাড়া সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির রিস্ক ম্যানেজমেন্ট  কমিটি ব্যতীত পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক গঠিত সব কমিটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী সদস্য সচিব হবেন বলে খসড়া বিধিতে বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ডিএসইর মতামত হচ্ছে রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটিরও সদস্য সচিব হবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

এ বিষয়ে ডিএসই বলছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইও যেহেতু প্রতিষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন, সেহেতু রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে তাদের থাকাটা জরুরি।

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, ক্লিয়ারিংয়ে শুধু উচ্চ নিট সম্পদ রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান, যারা সব ধরনের সেটলমেন্ট ঝুঁকি বহন করতে পারবে, তারা এতে অংশগ্রহণ করতে পারবে। ব্যাংক, বিমা ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্টক ব্রোকার বা ডিলার এতে অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য হবে। ক্লিয়ারিং অংশগ্রহণকারীরা লেনদেনের তথ্য ও রেকর্ড রেজিস্টারভুক্ত করবে এবং চুক্তিগুলোর ক্লিয়ারিং করবে। কোনো ক্লিয়ারিং অংশগ্রহণকারী তার নিজের ও গ্রাহকদের পাশাপাশি তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ অন্যান্য ব্যক্তির লেনদেনের ক্লিয়ারিং ও সেটলমেন্ট করতে পারবে। ক্লিয়ারিং অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হবে এক কোটি টাকা। তাছাড়া সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি, লেনদেনের ক্লিয়ারিং ও সেটলমেন্ট-সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত নিজ কার্যালয় ছাড়াও দুটি ভিন্ন স্থানে ন্যূনতম ১২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করবে। এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ মাত্র সাত বছর পর্যন্ত তথ্য সংরক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ক্ষেত্রে বিধিমালায় বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর হবে। তবে সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টির পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশক্রমে ও কমিশনের অনুমোদনক্রমে আরও একটি মেয়াদের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন। এ বিষয়ে ডিএসই একমত বলে জানা গেছে।

খসড়ায় নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ও নবায়ন বিষয়ে বলা হয়েছে, নিবন্ধন সনদের মেয়াদ হবে প্রদানের তারিখ থেকে পাঁচ বছর। প্রতি পাঁচ বছরে সনদ নবায়ন করা যাবে। নিবন্ধন সনদের বার্ষিক ফি প্রত্যেক হিসাববছরের সমাপ্তির তিন মাসের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা পে-অর্ডার অথবা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে কমিশন বরাবর জমা করতে হবে।

এদিকে প্রতিবছর ফি প্রদান সাপেক্ষে নিবন্ধন সনদ একটি চলমান সনদ হিসেবে বিবেচনা করার পক্ষে মত দিয়েছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

বিএসইসি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর সেকশন ৩৩ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ (১৯৯৩ সালের ১৫নং আইন) এর ধারা ২৪ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি) বিধিমালা, ২০১৭ খসড়া প্রণয়ন করেছে।

 

 

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: