facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

লাফার্জ-হোলসিমের মুনাফায় ধস


২৯ এপ্রিল ২০১৭ শনিবার, ০৮:০৪  এএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


লাফার্জ-হোলসিমের মুনাফায় ধস

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গত বছর জুলাইয়ে একীভূত হয় হোলসিম ও লাফার্জ। তবে বহুজাতিক এ দুই কোম্পানির একটি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় বাংলাদেশে এক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। তবে গত ডিসেম্বরে হোলসিম বাংলাদেশের শতভাগ মালিকানা কিনে নেয় তালিকাভুক্ত লাফার্জ সুরমা। আর যাত্রা শুরুর প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’১৭) ৬৩ শতাংশ মুনাফা কমেছে লাফার্জ-হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের। একই সঙ্গে কমে গেছে কোম্পানিটির বিক্রয় ও আয়।

যদিও এর কারণ কিছুটা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, সিমেন্টের দাম কমে যাওয়া ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমায় ব্যক্তিগত বাড়িঘর নির্মাণ কমে গেছে। এর ফলে সিমেন্টের বিক্রি কমেছে। অন্যদিকে ক্লিংকারের দাম নিম্নমুখী থাকার কারণেও এ ব্যবসা থেকে কোম্পানিটির আয় কমেছে বলে মনে করছেন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তাদের মতে, ব্যক্তিগত বাড়িঘর নির্মাণে সিমেন্টের ৪০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে, যা অধিকাংশই গ্রামাঞ্চলে। আর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অন্যতম আয়ের উৎস প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ। গত কয়েক মাস ধরে রেমিট্যান্স প্রবাহে মন্দা থাকায় গ্রামে ব্যক্তিগত বাড়িঘর নির্মাণকাজে ধীরগতি বিরাজ করছে। রেমিট্যান্স প্রবাহের পালে আবারও সুবাতাস পেলে বহুজাতিক এ কোম্পানিটির মুনাফা বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

জানা গেছে, গত ডিসেম্বরে হোলসিম বাংলাদেশকে কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় লাফার্জ সুরমা সিমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ; যা ৩১ জানুয়ারি কোম্পানির বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতি নেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোম্পানিটি লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট নামের পরিবর্তে লাফার্জ-হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড নাম ব্যবহারও অনুমোদন পায়। এজন্য কোম্পানিটিকে গুনতে হবে ১১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৯২৮ কোটি টাকা। হোলসিমকে কেনে নেওয়ার পরবর্তী প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ’১৭) প্রকাশ করেছে লাফার্জ-হোলসিম।

অনিরীক্ষিত এ আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটি ট্যাক্স পরবর্তী মুনাফা করেছে ৩০ কোটি টাকা; যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৬৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এ সময়ে লাফার্জ-হোলসিমের শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৭ পয়সা, শেয়ারপ্রতি সমন্বিত কার্যকরী নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে পাঁচ পয়সা (ঋণাত্মক) এবং শেয়ারপ্রতি সমন্বিত সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১৩ টাকা ৬০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে লাফার্জের ইপিএস ছিল ৪৩ পয়সা, এনওসিএফপিএস ছিল ৩৯ পয়সা ও ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ এনএভিপিএস ছিল ১২ টাকা ৮০ পয়সা। সে হিসেবে এ প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে ১৬ পয়সা বা ৩৭ দশমিক ২১ শতাংশ।

সিমেন্ট খাতের এ কোম্পানিটি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মোট ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে পাঁচ শতাংশ ক্যাশ ও পাঁচ শতাংশ অন্তবর্তীকালীন ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। ২০১৫ সমাপ্ত অর্থবছরে ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে পাঁচ শতাংশ ক্যাশ ও পাঁচ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

২০১৬ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির শেয়ার ইপিএস হয়েছে এক দশমিক ৯২ টাকা এবং এনএভি হয়েছে ১৩ দশমিক ২৪ টাকা, যা আগের বছর একই সময় ইপিএস ছিল এক দশমিক ৯৭ টাকা এবং এনএভি ছিল ১২ দশমিক ৩৭ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির ইপিএস ও এনএভি আগের বছরের তুলনায় কমেছে।

লাফার্জ-হোলসিমের শীর্ষস্থানীয় দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সিমেন্টের বাজারে আলাদাভাবে অষ্টম ও নবম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে লাফার্জ-হোলসিম। দুটি কোম্পানি এক হওয়ার পর সিমেন্টের বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠছে। শাহ সিমেন্টের পরই লাফার্জ-হোলসিমের অবস্থান তৈরি হবে বলে আশা করছেন তারা।

মুনাফা কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তারা বলেন, সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকারের দাম এখনও কমতির দিকেই রয়েছে। এর ফলে আমাদের অন্যতম ব্যবসা ক্লিংকারের আয় কমেছে। অন্যদিকে সিমেন্টের দামও কমেছে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহ বছরের ব্যবধানে ১১ শতাংশ কমায় গ্রামে সিমেন্ট বিক্রিও কমেছে। মূলত এসব কারণেই কোম্পানির মুনাফা কমেছে।

এদিকে ২০১৭ সালের প্রথম প্রান্তিকে লাফার্জ-হোলসিমের সিমেন্ট বিক্রি থেকে আয় হয় ২৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর ২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৫৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে লাফার্জের বিক্রি কমেছে সাড়ে পাঁচ শতাংশ।

যদিও খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত নয় বছরে সিমেন্ট খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। এখন দেশে মাথাপিছু সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে ১২৪ কেজি। মাথাপিছু সিমেন্ট ব্যবহার ৬০০ কেজি হওয়ার পর ফের রিকন্সট্র্যাকশনে আসে। বাংলাদেশে আগামীতে সিমেন্ট ব্যবসা আরও চার গুণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গত বছরের ১০ জুলাই থেকে সিমেন্ট প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারী দুই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হোলসিম ও লাফার্জ আন্তর্জাতিকভাবে একীভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকে সুইজারল্যান্ডের হোলসিম ও ফ্রান্সের লাফার্জের সমন্বিত নাম হয় ‘লাফার্জ-হোলসিম’। এরপর বাংলাদেশে আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকাণ্ড চলে আসছিল। বর্তমানে বিশ্বের ৬৪টি দেশে লাফার্জের ও ৭০টি দেশে হোলসিমের কার্যক্রম রয়েছে। বাংলাদেশেও এই দুটি কোম্পানির কার্যক্রম আছে। এর মধ্যে লাফার্জ সিমেন্ট বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। লাফার্জ-হোলসিমকে কেনার আগে হোলসিম তালিকাভুক্ত ছিল না।

সিমেন্ট খাতে বিশ্বের এ দুটি নামিদামি কোম্পানির একীভূত হওয়া নিয়ে কয়েক দফায় জটিলতা দেখা দিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তারা একীভূতকরণ কার্যক্রম থেকে সরে এসে ডিসেম্বরে হোলসিমকে কেনার সিদ্ধান্ত নেয় লাফার্জ।

বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জের ছাতকে অবস্থিত লাফার্জের সিমেন্ট কারখানা। ছাতকের নোয়ারাই গ্রামে সুরমা নদীর তীরঘেঁষে ২০০ একর জায়গার ওপর অবস্থিত এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসার পাশাপাশি শিক্ষা, নারীর অগ্রযাত্রা, সামাজিক ও পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করছে। বর্তমানে কোম্পানির নিজস্ব কারখানায় ‘সুপারক্রিট’ ব্র্যান্ডের সিমেন্ট উৎপাদন করা হয়। এর বাইরে বাজারে লাফার্জের ‘পাওয়ারক্রিট’ ব্র্যান্ডের যে সিমেন্ট পাওয়া যায়, সেটি উৎপাদিত হয় দেশীয় কোম্পানি মদিনা সিমেন্ট কারখানায়।

লাফার্জ কোম্পানিটি ২০০৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৬৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীর কাছে এক দশমিক ৪১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ১৮ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: