facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিন: ফখরুল


০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শুক্রবার, ০৫:০৮  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিন: ফখরুল

মানবিক দিক বিবেচনায় মিয়ানমারে সেনা অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি সঙ্কট সমাধানে দেশটির সরকারকে বাধ্য করতে ‘সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতা’ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

শুক্রবার সকালে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আয়োজিত এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “আমাদের খুব সুস্পষ্ট দাবি যে, রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হোক; তাদের খাদ্য, নিরাপত্তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। একইসঙ্গে সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে এই রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করা হোক।

“ওরা হিন্দু না মুসলিম- এটা জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই, ওরা মানুষ। সেই মানবতার বিরুদ্ধে আজকে মিয়ানমার সরকার যুদ্ধ শুরু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আসুন, আমরা আজকে জনমত সংগঠিত করে সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, তারা যেন এই গণহত্যা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়।”

মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সীমানা লঙ্ঘন করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “যখন তাদের বিমান আকাশ সীমা লঙ্ঘন করে তখন এই সরকার চুপ করে থাকে। এটা হচ্ছে এদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির পরিচায়ক।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে দীর্ঘ এই মানববন্ধন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হয় ১১টায়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন বন্ধের দাবি সম্বলিত নানা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করে।
ঢাকাসহ সারা দেশে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি একযোগে পালনের ঘোষণা থাকলেও বিএনপির নেতারা বলছেন, বিভিন্ন জেলায় পুলিশ তাদের এই কর্মসূচি করতে দেয়নি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা গত ২৪ অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশ পানে ছুটছে।

কয়েক দশক ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ সরকার নতুন করে শরণার্থী নিতে অনিচ্ছুক হলেও এরই মধ্যে মিয়ানমারের দেড় লক্ষাধিক মুসলিম নাগরিক ঢুকে পড়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের ঘটনায় সরকার নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “কূটনৈতিক ও মানবিক দিক থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে নাই।”

১৯৭৯ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়ে একই ঘটনা ঘটেছিল, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। তখন তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন, খাদ্য ও চিকিৎসা প্রদান করেছেন; একই সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করেছেন, সেই সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নিতে এগ্রিমেন্ট করেছিলেন।

“পরবর্তীতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও ১৯৯২ সালে যখন রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের অত্যাচারে আবার পালিয়ে চলে আসে তখনও তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করেছিলেন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে।”

দুস্থ ও নির্যাতত মানুষের পাশে সব সময় দাঁড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানেও বলা হয়েছে মন্তব্য করে এক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে ভাষ্য মির্জা ফখরুলের।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের এই পরিস্থিতিতে একটি মাত্র সমাধান রয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।

তিনি বলেন, “সেটা হচ্ছে- আমরা মানবতার হাত রোহিঙ্গাদের প্রতি বাড়িয়ে দেব। সারা বাংলাদেশের মানুষ এজন্য প্রস্তুত আছে। সরকার যদি এই কঠিন সত্যকে স্বীকার না করে, তাহলে তারা দায়িত্ব ছেড়ে পদত্যাগ করে এই দেশ থেকে চলে যাক- এই হচ্ছে আমাদের দাবি।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “দুঃখের বিষয় মিয়ানমারের এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। নিরাপত্তার দিক থেকে এবং মানবেতর যে অবস্থা তার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। অথচ আমরা নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়টি তুলতে পারি নাই। এই ব্যাপারটিকে সেখানে নিয়ে যেতে হয়েছে জাতিসংঘের মহাসচিবকে। এর চেয়ে লজ্জ্বার বিষয় আর কিছু হতে পারে না।

“বিশ্বের যে সমস্ত দেশে এই ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, সেই সমস্ত দেশ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টিকে নিয়ে সুরাহার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশ সেখানে ব্যর্থ হয়েছে।”

রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যে মিয়ানমারের কাছ থেকে চাল কিনতে যাওয়ার সমালোচনা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

“আজকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার; অথচ সেই দেশের কাছে খাদ্য-চাল আনতে গেছেন আমাদের খাদ্য মন্ত্রী… সঙ্গে স্ত্রীকে নিয়ে। অর্থাৎ নাফ নদীর রক্তাক্ত লাশের ওপর দিয়ে কামরুল ইসলাম গেছেন মিয়ানমারে। কত বড় নতজানু এই সরকার, প্রতিবাদ করতে পারে না, তাদের কাছে অনুনয়-বিনয় করছেন।

“কেন মিয়ানমারে যাচ্ছেন? কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে চাল আছে, সেখানে না গিয়ে কেন মিয়ানমার যাচ্ছেন?

প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরীর পরিচালনায় মানববন্ধনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং ছাত্র দলের সভাপতি রাজিব আহসান বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফরহাদ হোসেন ডোনার, আতাউর রহমান ঢালী, গৌতম চক্রবর্তী, আশরাফউদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, মীর সরফত আলী সপু, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, বেলাল আহমেদ, ফরিদা মনি শহিদুল্লাহ, আমিরুল ইসলাম আলীম, কাদের গনি চৌধুরী, অঙ্গসংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, উত্তরের আহসানউল্লাহ হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, যুবদলের মোরতাজুল করীম বাদরু, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মহিলা দলের জেবা খান, হেলেন জেরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলে ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক খান, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, মিলন মেহেদী, জাসাসের শায়রুল কবির খান, শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, ছাত্রদলের আকরামুল হাসানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন:

রাজনীতি -এর সর্বশেষ