facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

রিজার্ভ বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকাচ্ছে কোম্পানিগুলো


২২ অক্টোবর ২০১৭ রবিবার, ০২:৪২  পিএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


রিজার্ভ বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকাচ্ছে কোম্পানিগুলো

বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে শেয়ারবাজারে চলছে রিজার্ভ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যেন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের চাইতে উদ্যোক্তা পরিচলকদের স্বার্থকেই প্রাধান্য বেশি দিয়ে রিজার্ভ বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় মনোযোগি। এতে উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ হলেও বিনিয়োগাকারীরা ন্যায্য প্রাপ্তি বঞ্চিত হচ্ছেন। সম্প্রতি তালিকাভুক্ত কয়েকটি কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা দেখে এমটাই মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলো সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০টি কোম্পানির মতো বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো আয়ের সিংহভাগই রিজার্ভ ফান্ডে রাখার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বেশিরভাগ কোম্পানি আয়ের ৪০ শতাংশেরও বেশি অর্থ রিজার্ভ ফান্ডে স্থানান্তরে ব্যবস্থা করেছেন। অনেক কোম্পানি মুনাফার অর্ধেকেরও কম বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ হিসাবে দিয়েছে। আবার কয়েকটি মুনাফার তিন ভাগের একভাগও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে কুন্ঠাবোধ করেছে।

সম্প্রতি সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইফাদ অটো, একমি ল্যাবরেটরিজ, জেএমআই সিরিঞ্জ, স্কয়ার ফার্মার মুনাফা ও লভ্যাংশের পরিমাণ দেখলে বিনিয়োগকারীদের ঠকানোর অভিযোগের সত্যতা মিলে। এ কোম্পানিগুলো প্রায় সবগুলোর রিজার্ভ খুব ভালো। কিন্তু তাপরও কোম্পানিগুলো এবছরও রিজার্ভ বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করেছে। প্রতিটি কোম্পানি মুনাফার ৪০ শতাংশের বেশি রিজার্ভ ফান্ডে রাখার ঘোষণা দিয়েছে। তারমধ্যে ইফাদ অটো লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কোম্পানিটি মুনাফার মাত্র ৩৩ শতাংশ অর্থাৎ মুনাফার তিনভাগের মাত্র একভাগ বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ হিসাবে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অবশিষ্ট ৬৭ শতাংশই রিজার্ভ ফান্ডে রাখার কৌশল অবলম্বন করেছে। মুনাফার এতো কম হিস্যা তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি বোধহয় এর আগে বিনিযোগকারীদের দেয়নি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি রয়েছে যেগুলোর রিজার্ভ পরিশোধিত মূলধনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এইসব কোম্পানির দাবি তারা রিজার্ভকৃত অর্থ দ্বারা কোম্পানির কার্যপরিধি সম্প্রসারণকরছে। রিজার্ভকৃত অর্থ তারা বসিয়ে রাখে না বলে দাবিও করে আসছে। কিন্তু কার্যপরিধি সম্প্রসারণ করলেও কোনো ধরনের ফল পাওয়া না বিনিয়োগকারীরা।। যার কারণে কোনো বছর মুনাফার পরিমাণ কমে গেলেই লভ্যাংশ কম নিতে হয় বিনিয়োগকারীদের। এ কারণে রিজার্ভ নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

বড় বড় রিজার্ভকৃত কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাদের তালিকাভুক্তির সময় যে পরিমাণ শেয়ারপ্রতি আয় করেছে, এখন বড় রিজার্ভ ব্যবহার করেও একই রকম আয় করছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ বাড়ানোর কোনো উন্নতি দেখামিলছে না। এছাড়া বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে কোম্পানিগুলোর আয় কমে গেলেও রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ পুষিয়ে দেয়ার নজির খুব একটা দেখা যায় না। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, তাহলে কোম্পানির রিজার্ভ বাড়িয়ে তাদের লাভ কী?

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, একাধিক কোম্পানি পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রিজার্ভ সংরক্ষণ করছে। আবার কিছু কিছু কোম্পানি অনুমোদিত মূলধনের চেয়েও অনেক বেশি রিজার্ভ সংরক্ষণ করছে। বছরের পর বছর এসব কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ালেও লভ্যাংশের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীরা তথা শেয়ারহোল্ডরা ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন এবং কোম্পানিতে অনিয়ম চর্চার সুযোগ তৈরী হয়।

বিনিয়োগকারীদের মতে, অধিকাংশ কোম্পানির পরিচালকরা খাতে-কলমে মুনাফা কম দেখিয়ে বছর শেষে কম লভ্যাংশ দিচ্ছেন। আর কোনো বছর কোম্পানি লোকসানে থাকলে কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। রিজার্ভ ভেঙে লভ্যাংশ দেওয়ার প্রবণতা বিশ্বের অন্যান্য দেশে ব্যাপকভাবে দেখা গেলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে খুবই কম বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

তাঁদের মতে, রিজার্ভের পাহাড় না জমিয়ে রিজার্ভের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে বাজারের তারল্য সংকট কেটে যাবে। একই সঙ্গে রিজার্ভ থেকে লভ্যাংশ দিলে বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন। তাঁরা মনে করেন, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) কোম্পানিগুলোর রিজার্ভ বেশি রাখার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারীদের রিজার্ভের ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘রিজার্ভের টাকা বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির আস্থার হাতিয়ার। রিজার্ভ ফান্ড কোম্পানিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সহযোগিতা করে। তবে বিনিয়োগকারীদের বঞ্চিত করে রিজার্ভ ফান্ড বাড়ানো যুক্তিসঙ্গত নয়।’

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছে বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ৯৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। খাতভিত্তিক রিজার্ভের পরিমাণ দেখলে রিজার্ভের শীর্ষে রয়েছে ব্যাংকিং খাত। এ খাতের তালিকাভুক্ত ২৯টি কোম্পানি রিজার্ভ সংরক্ষণ করছে ২৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাত। এ খাতের তালিকাভুক্ত চার কোম্পানির কাছে রয়েছে ১৮ হাজার ৮৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এ খাতের ১৯ কোম্পানির কাছে ১১ হাজার ৬৭৬ কোটি ৫২ লাখ টাকার রিজার্ভ রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২৯৩টি কোম্পানির মধ্যে ৫ হাজার ১৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা রিজার্ভ নিয়ে বিবিধ খাতের কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড শীর্ষস্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৩ হাজার ১৬৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্যাংকিং খাতের কোম্পানি ইসলামী ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। কোম্পানিটির রিজার্ভ রয়েছে ২ হাজার ২৭৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পঞ্চম স্থানে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ১ হাজার ৮২৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানি ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ১ হাজার ৭১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা রিজার্ভ নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের তিন কোম্পানির মধ্যে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি ৪৮ লাখ দুই হাজার টাকা রিজার্ভ নিয়ে এবি ব্যাংক তালিকায় সপ্তম স্থানে, ১ হাজার ৫০৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা রিজার্ভ নিয়ে সিটি ব্যাংক অষ্টম স্থানে এবং ১ হাজার ৫০০ কোটি ৯০ লাখ তিন হাজার টাকা রিজার্ভ নিয়ে পূবালী ব্যাংক তালিকার নবম স্থানে রয়েছে। আর জ্বালানি খাতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি যমুনা অয়েল ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা রিজার্ভ নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: