রাজশাহীর উন্নয়নে ১৩ হাজার কোটি টাকা চায় ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিকভাবে অবহেলিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর উন্নয়নে আগামী বাজেটে দশ খাতে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে আয়কর ও ভ্যাট রেয়াতেরও প্রস্তাব করেছেন তারা। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের ওই শীর্ষ সংগঠনটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, বুধবার বিকেলে রাজশাহীতে প্রাক-বাজেট বিষয়ক মতবিনিময় সভা করা হয়। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি মিলনায়তনে আয়োজিত ওই মতবিনিময় সভায় অংশ নেন রাজশাহীর ব্যবসায়ী নেতারা ও বিভিন্ন দপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ের কর্তকর্তারা। মতবিনিময়কালে রাজশাহীর উন্নয়নে ৩৮টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। যেখানে রাজশাহী বিভাগের জন্য আলাদা উন্নয়ন বাজেট ও উন্নয়ন পরিকল্পনার সুপারিশসহ দশ খাতে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ এবং ৫০ শতাংশ ভ্যাট ও আয়কর কমানো প্রস্তাব রয়েছে।

রাজশাহী চেম্বার সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেন, পিছিয়ে পড়া রাজশাহী বিভাগের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শিল্পের উন্নয়ন ঘটানো। শিল্প উন্নয়নের জন্য রাজশাহী বিভাগের জন্য আলাদা বাজেটসহ কর অবকাশ, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ ও আলাদা উন্নয়ন পরিকল্পনার সুপারিশ করা হয়।

তিনি বলেন, আম, আলু ও টমেটো রাজশাহী অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন হয়। এ তিনটি কৃষি পণ্যের ওপর ভিত্তি করে এ অঞ্চলে শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। এ জন্য ৫ শতাংশ সুদে এক হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দর প্রস্তাব করা হয়। সেই সঙ্গে আয়কর ও ভ্যাট রেয়াতের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতা মনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী সিল্কের পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই লক্ষে রাজশাহী ‘সিল্কি সিটি’ ব্রান্ডেড করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ওই শিল্পের পুনরুদ্ধারের জন্য বিনা সুদে প্রান্তিক মহিলা ও কৃষককে তুত চাষে উৎসাহিত করার জন্য এবং শিল্প স্থাপন ত্বরান্বিত করাতে আগামী বাজেটে বিনা সুদে এক হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডেইরি ফার্ম করার লক্ষে ৫ শতাংশ সুদে এক হাজার কোটি টাকা এবং এ অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির প্রোটিনের চাহিদা পূরণের লক্ষে পোল্ট্রি ফার্ম উদ্যোক্তাদের ৫ শতাংশ সুদে আরও এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দর প্রস্তাব করা হয়েছে।  

এছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষে রাজশাহী অঞ্চলে আইসিটি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ উদ্ধুদ্ধ করতে ৫ শতাংশ সরল সুদে এক হাজার কোটি টাকা, এ অঞ্চলের জনগণকে প্রযুক্তি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য বেসরকারি খাতে বিনা সুদে আরও এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান মনিরুজ্জামান মনি।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সেবার জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী ভারত মুখী। রাজশাহীতে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষে ৫ শতাংশ সুদে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মনি বলেন, কোম্পজিট টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, চামড়া, বহুমূখী পাটজাত পণ্য, এ শিল্পগুলোর জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যাতে শ্রম বান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। একই সঙ্গে আয়কর ট্যাক্স রেয়াতসহ ব্যাংক সুদের হার ৫ শতাংশ এ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে শিল্পপার্ক করার জন্য ভূমি ক্রয়ের লক্ষে ৫ শতাংশ সুদে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ এবং রাজশাহীর ব্যবসা বাণিজ্য উন্নয়নের লক্ষে পাঁচশ একরের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করার লক্ষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক বিনা জামানতে ২৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তা দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ সুদে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতা মনি বলেন, রাজশাহীতে ক্রিকেট টেস্ট ভেন্যু এবং ঐতিহ্যবাহী পুরানো বিভাগ হওয়া সত্বেও কোনো রিসোর্ট ও পাঁচ তারকা হোটেল নেই। সেই লক্ষে বেসরকারি উদ্যোগে একটি রিসোর্ট ও পাঁচ তারকা হোটেলের জন্য ২০ বছর মেয়াদে ৫ শতাংশ সুদে ২০০ কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।