facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪

Walton

রসিক ভোটে প্রার্থী এমএ পাশ হিজড়া


১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ বুধবার, ১০:৪৬  এএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


রসিক ভোটে প্রার্থী এমএ পাশ হিজড়া

হিজড়া নাদিরা খানম। রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে ১৮, ২০ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রংপুরের মানুষের মুখে মুখে এখানে কাউন্সিলর পদে তৃতীয় লিঙ্গের একজন নির্বাচন করছেন। সেই থেকে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছ থেকে তার মোবাইল নম্বর নিয়ে যোগাযোগ শুরু। কিন্তু তিনি জনসংযোগে মহাব্যস্ত। সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় নেই। ঢাকা থেকে আসার কথা জানালে বললেন, রাত ১১টার দিকে তার বাসায় আসতে। সেই অনুযায়ী, যাওয়া হলো রংপুর সিটির বালাপাড়ায়।

এ পাড়ারই স্থায়ী বাসিন্দা আনসার আলী। কাকতালীয়ভাবে তার সঙ্গে দেখা হলো। পরে জানা গেল তিনিই মূলত নাদিরা খানমের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল। তার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই একটা রিকশা এসে পাশে থামল। রিকশাতে দেখেই মনে হলো তিনিই সেই কাঙ্খিত মানুষ (নাদিরা)।

নাদিরা জানান, ১৯৯১ সালের কথা। সবে এসএসসি পাশ করেছেন, থাকতেন দিনাজপুর নিউ টাউনের নিজ বাড়িতে। আদমজী জুট মিলস’র প্রোডাকশন ম্যানেজার সিরাজুল ইসলামের চার সন্তানের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বড় বোনের ততদিনে বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছোট বোনের বিয়ের কথা পাকাপাকি। হঠাৎ বরপক্ষ থেকে কথা উঠল-মেয়ের বড় বোন তো ‘হিজড়া’। তার ছোট বোন বিয়ে করায় যদি উত্তরসূরিও তাই হয়! বিয়েটা তাই ভেঙেই গেল।

সিরাজুল ইসলাম চাপ দিতে থাকলেন নাদিরার মাকে। এই সন্তানের জন্য কি আরেক সন্তানের জীবন নষ্ট হবে? একে বের করে দাও। মায়ের কষ্ট দেখে নাদিরা চলে গেলেন পার্বতীপুর মামার বাড়িতে।

মামার এক বন্ধু ছিলেন নিঃসন্তান। তিনিই নাদিরাকে সন্তান হিসেবে লালন-পালনের দায়িত্ব নিলেন। দিনাজপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকেই তাকে বিএ (ব্যাচেলর অব আর্টস) পাশ করালেন। এরপর ইংরেজি বিষয়ে এমএ (মাস্টার্স অব আর্টস) করলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহীতে নাদিরা ‘পালক বাবার’ সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশুনা শেষ করলেন ৯৯ সালে।

এরপর ফুলবাড়ীয়া চলে এসে ছোটখাট ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৬-০৭ সালের দিকে পরিচয় হয় রংপুরের তৃতীয় লিঙ্গের নূরজাহানের সঙ্গে। তার পরামর্শেই রংপুর চলে আসেন। তৃতীয় লিঙ্গের উন্নয়নে দাঁড় করান ‘ন্যায় অধিকার তৃতীয় লিঙ্গ উন্নয়ন সংস্থা’।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে তিনি এখন ৩৭০ জন তৃতীয় লিঙ্গের উন্নয়নে কাজ করছেন। তাদের নিয়ে কাজ করতে করতেই সমাজের মূল ধারায় কাজ করার তাগিদ অনুভব করেন তিনি। সেই থেকেই তার চিন্তা হলো জনপ্রতিনিধি হওয়ার। আর এ চিন্তা থেকেই সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী হলেন।

নাদিরা খানম বলেন-‘আমার মতো যারা তৃতীয় লিঙ্গ এবং হত দরিদ্র লোক আছেন, তারা বাস্তবের সঙ্গে যুদ্ধ, সংগ্রাম করছেন। প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে তাদের জীবন চালাতে হচ্ছে। এ সমস্ত লোকদের যেন সেবা করতে পারি। তৃতীয় লিঙ্গের ওরাও কিছু কাজ করতে পারে এবং সমাজে তাদেরও কিছু কন্ট্রিবিউশন আছে, এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। ইনশাল্লাহ আরেকটু চেষ্টা করলে জয় নিশ্চিত হবে।’

আগামী ২১ ডিসেম্বর রসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। নাদিরা পাঁচ জনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।


শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: