facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

রবির বিরুদ্ধে ৯২৫ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ


০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার, ১২:১৩  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


রবির বিরুদ্ধে ৯২৫ কোটি টাকা কর ফাঁকির অভিযোগ

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ তুলে পাওনা প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা দাবি করে চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) গত মঙ্গলবার পাঁচটি চিঠিতে ওই অংকের পাওনা পরিশোধের দাবি রবির কাছে পাঠায়।

এলটিইউ-এর কর কমিশনার মতিউর রহমান বলেন, “এটা বড় ধরনের কর ফাঁকি। অন্য কোনো টেলিকম কোম্পানি এভাবে কর ফাঁকি দেয়নি।”

রবির কাছ থেকে ওই অর্থ আদায়ে ‘প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

অন্যদিকে রবির হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম বলেছেন, ‘ভিত্তিহীন’ অডিটের মাধ্যমে এনবিআর ‘অন্যায্য’ দাবি করছে।

২০১৬ সালে দুই অপারেটর রবি ও এয়ারটেল একীভূত হওয়ার পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন সেবাদানকারী কোম্পানিতে পরিণত হয় রবি আজিয়াটা লিমিটেড।

সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসের হিসাব অনুযায়ী, রবির গ্রাহক সংখ্যা ৪ কোটি ২৯ লাখ, যা দেশের মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকের প্রায় ২৯ শতাংশ।

একীভূত হওয়ার পর রবির আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয় এনবিআর। সেখানেই কার ফাঁকির ওই তথ্য পাওয়া যায় বলে এনবিআরের ভাষ্য।

চিঠিতে বলা হয়েছে-

>> ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রবি এসএপি সফটওয়্যার খাতে ৫৫৩ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৫২৮ টাকা ২০ পয়সার ভ্যাট এবং ১৫৮ কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার ৩৮৮ টাকা ৮৪ পয়সার উৎসে কর কম পরিশোধ করে ফাঁকি দিয়েছে।

>> একই সময়ে অপারেটরটি ‘বিধি বহির্ভূতভাবে’ ১১৬ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার ৬২ টাকা ২৫ পয়সার ভ্যাট রেয়াত দেখিয়েছে।

>> ২০১২ সালে ইন্টারকানেকশনে (এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে কল) ১ কোটি ৬৫ লাখ ১৫ হাজার ৮০২ টাকা ৩ পয়সা এবং ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৩৪৮ টাকা ৬৭ পয়সার ভ্যাট পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে রবি।

>> রবি ও এয়ারটেল একীভূত করার ক্ষেত্রে ১০০ কোটি টাকা ফি এবং এয়ারটেল লিমিটেডের নামে বরাদ্দ করা টু-জি তরঙ্গের নবায়ন ফি মিলিয়ে ৫০৭ কোটি টাকার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট বাবদ এনবিআরের পাওনা ৯১ কোটি ৫ লাখ টাকাও রবি পরিশোধ করেনি।

সব মিলিয়ে রবি মোট ৯২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯ টাকা ৯৯ পয়সার কর ফাঁকি দিয়েছে বলে দাবি এনবিআরের।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রবির হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স শাহেদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এনবিআর আগে একবার ‘কারণ দর্শাও’ নোটিস দিয়েছিল। কিন্তু সেটা দেখে ‘বোঝার উপায় ছিল না’ যে তারা কেন বা কী দাবি করছে। এরপর রবির পক্ষ থেকে অডিট রিপোর্ট চাওয়া হলে তিন সপ্তাহ পরে তা পাঠায় এনবিআর।

“অডিট রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা সময় চাইলাম অ্যাসেস করার জন্য। তারা সময় না দিয়ে ডিমান্ড নোট পাঠিয়ে দিলেন। আমার বলেছি, এভাবে তো ডিমান্ড নোট পাঠাতে পারেন না আমাদের বক্তব্য ছাড়া। আমরা মনে করছি, এই অডিটের কোনো ভিত্তি নেই, কারণ সেখানে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।”

এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে শাহেদ বলেন, এনবিআর তাদের পাঁচটি দাবির মধ্যে ইন্টারকানেকশন চার্জে ভ্যাট ফাঁকির যে অভিযোগ এনেছে, সেজন্য তাদের উচিৎ বিটিসিএলকে ধরা।

“সার্ভিসটা বিটিসিএলকে দিয়েছে, আমি ভ্যাট দিলে বিটিসিএল ভ্যাটের চালান দেবে। বিটিসিএল চালান না দিলে কীভাবে টাকা দেব? বিটিসিএল যদি ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন না করে তাহলে সে যত সেবা দেয় তা ভ্যাটের আওতামুক্ত, এটি নতুন কোনো ইস্যু নয়।”

তরঙ্গের উপর ভ্যাটের বিষয়টি ২০১২ সাল থেকে আদালতে আছে জানিয়ে শাহেদ আলম বলেন, হাই কোর্ট ২০১৪ সালে রবির পক্ষে রায় দিয়ে বিটিআরসিকে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন করতে নির্দেশ দেয়। বিটিআরসি আপিলে যাওয়ায় বিষয়টি এখনও বিচারাধীন।

“একটি সাবজুডিস বিষয়ে সে আমার কাছ থেকে কি ভ্যাট চাইতে পারে?”

এসএপি সফটওয়্যার খাতে ৫৫৩ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে এই রবি কর্মকর্তার ভাষ্য, রবির ইলেকট্রনিক অ্যাকাউন্ট সিস্টেম থেকে আংশিক তথ্য নিয়ে তার ভিত্তিতে ওই টাকা দাবি করেছে এনবিআর।

আর ১১৬ কোটি টাকা রেয়াত নেওয়ার বিষয়ে শাহেদ আলমের ভাষ্য, “ভ্যাটের আইন অনুযায়ী প্রতিটি প্রোডাক্টে অর সার্ভিসে একবার মাত্র ভ্যাট হবে। প্রোডাক্ট বা সার্ভিস তৈরিতে যা মালামাল লেগেছে- তার প্রতিটিতে আমি রেয়াত পাব। রেয়াত নিয়ে নিয়ে ভ্যাট হবে একবার।

“রাউটার বা সার্ভার কিনলে এগুলো আউটসোর্স ভ্যাট, এগুলো ছাড়া তো ব্যবসা চালাতে পারব না। যে ভ্যাট আমি পে করেছি তা তো ক্লেইম করতে হবে আমাকে। আমাকে অ্যাডজাস্ট করতে হবে। আমরা আইনগতভাবে ভ্যাট ক্লেইম করতে পারি।”

বিটিআরসির দাবিকে ‘অন্যায্য’ হিসেবে বর্ণনা করে এই রবি কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে এসব বিষয়ে কমপ্লেইন দিয়েছি। আমরা বলেছি, প্রয়োজনে একটি কমিটি করেন বা অডিটর নিয়োগ করেন। আমরা ওয়ান অফ দা লার্জেস্ট ট্যাক্স পেয়ার। যদি ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে থাকি আপনারা (এনবিআর) ব্যবস্থা নিলে মেনে নেব।”

শাহেদ বলেন, এবিআরের চেয়ারম্যানের জবাব পাওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন, এ বিষয়ে রবি আইনি ব্যবস্থার পথে যাবে কি না।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: