facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪

Walton

যেসব শেয়ারে বিনিয়োগের পরামর্শ দিলেন আইসিবি ব্যবস্থাপনা পরিচালক


১৮ নভেম্বর ২০১৮ রবিবার, ০৪:১২  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


যেসব শেয়ারে বিনিয়োগের পরামর্শ দিলেন আইসিবি ব্যবস্থাপনা পরিচালক

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছানাউল হক ১৯৮৪ সালে এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘ ৩৪ বছরের কর্মজীবনে তিনি রাকাবের এমডি, অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি, আইসিবির ব্রোকারেজ হাউসের সিইওসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

প্রশ্ন :নির্বাচন ঘিরে এখন শঙ্কা নেই। শঙ্কা কাটলে শেয়ারবাজার ভালো হবে বলে প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু হচ্ছে উল্টো। কারণ কী?

ছানাউল হক :নানা ইস্যুতে বছরের শুরু থেকে শেয়ারবাজারের অবস্থা খারাপ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমেছে। এ কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অনেকের কাছে টাকা থাকলেও নতুন বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হলে তারাও লেনদেনে ফেরার অপেক্ষায় আছেন।


প্রশ্ন :প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় নয় কেন?

ছানাউল হক :এটা বলা মুশকিল। হয়তো কারও মধ্যে কোনো ইস্যুতে এখনও কিছু শঙ্কা কাজ করছে। আবার সবার বিনিয়োগের একমাত্র উদ্দেশ্য মুনাফা করা। বেশি মুনাফা পেতে প্রত্যেকেরই কিছু কৌশল থাকে। এখন বাজার খারাপ। কিন্তু এমনটা সব সময় থাকবে না। শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের নীতি হলো- খারাপ সময়ে শেয়ার কেনো। এখন খারাপ বলে বড়দের বিনিয়োগ করার সময়। কেউ যে কিনছে না, তাও নয়। আবার এটাও সত্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একবারে বড় অঙ্কের কিনে কোনো শেয়ারের দর আকাশে তুলবে না। তারা ধীরে ধীরে কিনছে। এটাও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বুঝতে হবে। আর একটা কথা, বাজারের সব খারাপ পরিস্থিতিতে আইসিবি সহায়ক ভূমিকায় থাকে। এতে সাময়িক লোকসান হলেও আইসিবি দীর্ঘমেয়াদে ভালো মুনাফাই করে।


প্রশ্ন :আইসিবির ২০০০ কোটি টাকার বন্ড থেকে পাওয়া অর্থ বিনিয়োগ কী শুরু করেছেন?

ছানাউল হক :হ্যাঁ, ২ নভেম্বর থেকেই। এ কারণেই টানা পাঁচ দিনের দরপতন কাটিয়ে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। পরের দুই দিনও বিনিয়োগের কারণে বাজার ইতিবাচক ছিল।


প্রশ্ন :গত সপ্তাহের প্রথম দিনটা ভালো কাটলেও পরের চার দিন দরপতন হয়েছে।

ছানাউল হক :দেখুন, বন্ড বিক্রি থেকে এখন পর্যন্ত ৭০০ কোটি টাকা পেয়েছি। বাকিটা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পাবো। এখন পুরো টাকা তো একবারে বিনিয়োগ করতে পারি না, তা যৌক্তিকও নয়। একা আইসিবি পুরো বাজারকে ধরে রাখবে, এমন আশা করা বোকামি। অন্য প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ব্রোকাররা ডিএসইর শেয়ার বিক্রির টাকা স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে বিনিয়োগ হলে বাজারে ঘুরে দাঁড়াবে। মিউচুয়াল ফান্ড ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে এখানে এগিয়ে আসতে হবে। অনেকের কাছে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ আছে। এর কিছুটা শেয়ারবাজারে আনতে ভালো মার্চেন্ট ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে সক্রিয় হতে হবে। পুরনো জেলাগুলোতে এরা শাখা খুলতে পারে।


প্রশ্ন :ডিএসইর কৌশলগত শেয়ার বিক্রির টাকা বিনিয়োগ হলে বাজার ঘুরে যাবে- এমন ধারণা ছিল। তারও তো প্রভাব নেই।

ছানাউল হক :অনেক ব্রোকার বিনিয়োগ শুরু করেছেন। যারা করছাড় সুবিধা নিয়েছেন, তাদের ছয় মাসের মধ্যে বিনিয়োগ করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। এ কারণে হয়তো কেউ কেউ দেখেশুনে এবং পরিস্থিতি বুঝে শেয়ার কিনছেন। আবার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে না পারায় কিছু ব্রোকার এখনও টাকা তুলতে পারেননি। এ কারণে এর প্রভাব কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে।


প্রশ্ন :গুজব আছে, নির্বাচনের আগে বাজার ভালো হবে না, নির্বাচনের পর ২০১৯ সালে ভালো হবে। আপনারও কী তাই মনে হয়?

ছানাউল হক :শেয়ারবাজার কেমন হবে এটা কারও জানা নেই। রাজনীতি, অর্থনীতি, বিনিয়োগকারীদের সকলের সম্মিলিত যে অবস্থান অর্থাৎ অনেক কিছুর ওপর বাজারের ধরন নির্ধারণ করে। এক্ষেত্রে কারও ধারণা মিলে যেতে পারে। আমার মনে হয়, এখন দেশের মধ্যে এমন কোনো অবস্থা নেই, যার কারণে শেয়ারবাজারে খারাপ কোনো পরিস্থিতি হতে পারে। বরং ভালো হওয়ার মতো অনেক কিছু আছে। দেশের সবার অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে যাচ্ছে- এটাই এ সময়ে সবচেয়ে ভালো খবর।

প্রশ্ন :ভালো খবরের প্রতিফলন নেই কেন?

ছানাউল হক :ওই যে বললাম, অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এখন বাজারে সক্রিয় নয়। কেন নয়, তার উত্তর তারাই ভালো দিতে পারবে। এ কথাতো সত্যি, সকলে বিশ্বাস করে ২০১৯ সাল শেয়ারবাজারের জন্য ভালো হবে। তাহলে বড় বিনিয়োগকারীদের তো উচিত এখনই পজিশন নেওয়া অর্থাৎ বিনিয়োগ করা।


প্রশ্ন :খারাপ বাজারেও দুর্বল মৌলভিত্তির এবং স্বল্প মূলধনী কোম্পানির বেশ দাপট চলছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

ছানাউল হক :ভালো নয়। আপনাকে নিশ্চিত করে বলছি, এ ধারা টিকবে না। এখন যারা খারাপ শেয়ার কিনছে, তারা লোকসান করবে। অতীতেও এমনটি হয়েছে। আজ যারা রাতারাতি বড় লোক হতে বুঝে-না বুঝে এমন শেয়ার কিনছে, তারা মুনাফা তুলে বাড়ি ফিরতে পারবে বলে তাদের মধ্যে আরও লোভ জেঁকে বসবে এবং যখন এগুলোর দরপতন শুরু হবে, তাদের মুনাফার সবটাই চলে যাবে। বুদ্ধিমানদের উচিত এখন এসব শেয়ার থেকে সরে এসে মৌলভিত্তিসম্পন্ন ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করা।


প্রশ্ন :কিছু কোম্পানি কারসাজির উদ্দেশ্যে মুনাফায় কারসাজি করে লভ্যাংশ দিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে... নিশ্চয় এটা শুনেছেন?

ছানাউল হক :হ্যাঁ, শুনেছি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে অনুরোধ করেছি, যাতে এ বিষয়গুলো কঠোরভাবে নজরদারি করা হয়, দায়ীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অন্যথায় বাজারে নতুন করে বিপর্যয় হতে পারে।

প্রশ্ন :সমালোচনা আছে, আইসিবি কখনও কখনও স্বার্থান্বেষী মহল বা প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শেয়ার কেনে। এ বিষয়ে কি বলবেন?

ছানাউল হক :স্পষ্ট করেই বলছি, এখনকার কোনো জুয়ার আইটেমে (শেয়ার) আইসিবি নেই। কোম্পানির মৌলভিত্তি, ব্যবস্থাপনা প্রশ্নাতীত না হলে আইসিবি ওই শেয়ারে বিনিয়োগ করে না। এক্ষেত্রে কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদানের ইতিহাসও বিবেচনায় থাকে।

প্রশ্ন :নতুন কী পরিকল্পনা আছে?

ছানাউল হক :আইসিবিই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যে বাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে কাজ করে। এখানে মুনাফা করার লক্ষ্য আছে, তবে তা প্রধান নয়। এজন্য নিজেদের বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে নানা ধরনের বন্ড আনার পরিকল্পনা করেছি। এ বিষয়ে সরকারকেও প্রস্তাব দিয়েছি।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: