১৪ মার্চ ২০১৮ বুধবার, ০৮:৪০ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশনার কারণে পুঁজিবাজারে তারল্য সঙ্কটের পাশাপাশি বড় ধরনের দরপতনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিস্ট বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা, ক্রয়মূল্যের পরিবর্তে বাজার মূল্যে সিকিউরিটিজের বিনিয়োগ গননা, তালিকাভুক্ত নয় এমন সিকিউরিটিজ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগসীমায় হিসাবায়নসহ সাত কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশনা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ সক্ষমতা কমছে, যা দরপতনে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। এছাড়া অগ্রীম আমানত অনুপাত (এডিআর) কমিয়ে আনার নির্দেশনাও পুঁজিবাজারের বিনিয়োগে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা ও চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, মার্চেন্ট ব্যাংকার অ্যাসোসিয়েশন ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে পুঁজিবাজারের দরপতনের কারণ হিসেবে এসব বিষয়ে উঠে এসেছে। পুঁজিবাজার বিকাশে এসব বাধা দূরীকরনে গত ১৩ মার্চ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের নজরে এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
২০১৭ সাল পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখি প্রবনতায় থাকলেও চলতি বছরের শুরু থেকেই দরপতনের কারণে অস্থিরতা রিবাজ করছে। দরপতনের কারণে চলতি বছর প্রায় ১০ শতাংশ পয়েন্ট হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক। লেনদেন নেমে এসেছে ৩০০ কোটি টাকারর নীচে। এ অবস্থায় দরপতনের কারণ চিহ্নিত করে বিএসইসিতে তা জমা দিয়েছেন স্টেকহোল্ডাররা। এতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ গননার বিষয়টি প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা।
স্টেকহোল্ডারদের দেয়া প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, পুঁজিবাজার সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠানসমুহের ঋণ প্রবাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক নীতির কারণে তারল্য ঘাটতি আগে থেকেই ছিল। পরবর্তিতে ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা হিসাবের ক্ষেত্রে সমন্বিত ভিত্তিতে গননা করার বিষয়টি আরোপ করা হয়। ফলে পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহের ক্ষেত্রটি অধিকতর সংকোচন মূলক হয়ে পড়ে। এটি পুঁজিবাজারের লেনদেনে বড় প্রভাব ফেলে। এ অবস্থায় সমন্বিত ভিত্তির পরিবর্তে একক ভিত্তিতে বিনিয়োগ গননার দাবী জানানো হয়েছে।
বন্ড, ডিবেঞ্চার, প্রেফারেন্সিয়াল শেয়ার ও তালিকাভুক্ত নয় এমন মিউচুয়াল ফান্ডকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমায় হিসেব করা হচ্ছে, যার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এছাড়া যেসব সিকিউরিটিজে প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত বিনিয়োগ রয়েছে, তাও বিনিয়োগ গননায় হিসাব করা হচ্ছে, যা অযৌক্তিক বলে বাদ দেয়ার দাবী জানিয়েছে স্টেকহোল্ডাররা।
বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজার বিনিয়োগ সীমা গননা করার ক্ষেত্রে ধারণকৃত সিকিউরিটিজের বাজার মূল্যে বিবেচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাজার মূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে বিবেচনার দাবী জানানো হয়েছে। ব্যাংক তার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়, তার পুরোটাই পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসেবে গননা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি অযৌক্তিক অভিহিত করে শুধুমাত্র উক্ত ঋণের যে অংশটি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা হয়, তাই ব্যাংকের প্রকৃত পুঁজিবাজার বিনিয়োগ।
স্টেকহোল্ডাররা তাদের প্রস্তাবনায় জানিয়েছেন যে, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাাংলাদেশ (আইসিবি) হচ্ছে বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠিত সরকারী প্রতিষ্ঠান, যা পুঁজিবাজারের প্রয়োজনে সহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ঋণ গ্রহনের একক সীমা’ গননার অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কারনেপুঁজিবাজারে আইসিবির বিনিয়োগ ক্ষমতা কমে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে ঋণ গ্রহনের একক সীমার গননা থেকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করেছে স্টেকহোল্ডাররা।
পুঁজিবাজারে তারল্য সঙ্কটের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বানিজ্যিক ব্যাংকের অগ্রীম আমানত অনুপাত (এডিআর) কমিয়ে এনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নির্দেশনা। এরফলে সুদের হার বৃদ্ধিসহ পুরো আর্থিক খাতে তারল্য সঙ্কট তৈরী হয়েছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বিশেষ করে ব্যাংক ও তার সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে গেছে, যা পুঁজিবাজারের লেনদেনে প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় তারল্য প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকের এডি রেশিও ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত পূর্বহারে পরিপালনের নির্দেশনা দেয়ার সুপারিশ করেছে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা।
শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।