facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

যে কারণে সাত কোম্পানির ব্যবসা কমছে


২১ মে ২০১৯ মঙ্গলবার, ০১:৫৯  পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক


যে কারণে সাত কোম্পানির ব্যবসা কমছে

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন খাতের সাত কোম্পানির ব্যবসা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রকৌশল খাতের ইস্টার্ন কেবলস, এ্যাপোলো ইস্পাত ও আফতাব অটোমোবাইলস, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, বস্ত্র খাতের জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস এবং বিবিধ খাতের ন্যাশনাল ফিড মিলস লিমিটেড। চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিগুলোর রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এছাড়া সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরেও কোম্পানিগুলোর মুনাফা ছিল নিম্নমুখী।

ইস্টার্ন কেবলস লিমিটেড চলতি ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ২৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করেছে, যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির রাজস্ব ছিল ১১৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির রাজস্ব ৭৮ দশমিক ২৪ শতাংশ কমেছে। আর রাজস্ব কমে যাওয়ার প্রভাবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটিকে ৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কর-পরবর্তী লোকসান গুনতে হয়েছে, যেখানে আগের বছরের একই সময়ের ১ কোটি ২১ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছিল। এদিকে সর্বশেষ সমাপ্ত ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে ৩৫ লাখ টাকা কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে ইস্টার্ন কেবলসের, যেখানে এর আগের বছরে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছিল।

জানতে চাইলে ইস্টার্ন কেবলসের কোম্পানি সচিব মো. এমদাদুল হক বলেন, সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো হচ্ছে আমাদের পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। কিন্তু চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে আমরা সেভাবে তাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ পাইনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আগের বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের রাজস্ব কমে গেছে। তবে বিক্রি বাড়ানোর জন্য আমাদের দিক থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

লুব্রিক্যান্টস ব্লেন্ডিং ব্যবসায় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে সরকারি মালিকানাধীন ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস লিমিটেড। বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো ফিনিশড লুব্রিক্যান্টস পণ্য ও লুব বেইস অয়েল আমদানি এবং স্থানীয়ভাবে ব্লেন্ডিং করে বাজারজাত করছে। এতে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। বর্তমানে কোম্পানিটি এর মোট উৎপাদন সক্ষমতার এক-অষ্টমাংশও ব্যবহার করতে পারছে না। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ২০১৫-১৬ হিসাব বছর থেকে লুব্রিক্যান্টস ব্লেন্ডিংয়ের পাশাপাশি ইএলবিএল বেইজ অয়েল আমদানি ও ইউয়াসা ব্র্যান্ডের ব্যাটারি বাজারজাত করছে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে এর আগের বছরের তুলনায় বেইস অয়েল আমদানি ২৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে বেসরকারি পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ব্যাটারির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ায় সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে ব্যাটারির বিক্রি কমেছে ৩৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির রাজস্ব আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৫ দশমিক ২৩ শতাংশ কমে মাত্র ৬ কোটি ৮২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ২ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টসের কোম্পানি সচিব আলী আবছার বলেন, আমাদের লুব্রিক্যান্টস সবচেয়ে বেশি নেয় পদ্মা অয়েল। তাছাড়া মেঘনা ও যমুনা অয়েলও আমাদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে থাকে। তবে চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে এ সরকারি তেল কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আমরা কোনো অর্ডার পাইনি। এ কারণে চলতি বছর আমাদের রাজস্ব কমে গেছে।

চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে বস্ত্র খাতের কোম্পানি জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের রাজস্ব আয় হয়েছে ২১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির রাজস্ব কমেছে ৬৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। রাজস্ব কমার কারণে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ১১ কোটি ২২ লাখ টাকা কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা হয়েছিল ৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এদিকে কোম্পানিটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে তিন বছর ধরে এর মুনাফা ধারাবাহিকভাবে কমছে। যেখানে ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে মুনাফা ছিল ৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা, সেটি সর্বশেষ সমাপ্ত ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে এসে ৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিদেশী ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত অর্ডার না পাওয়ার পাশাপাশি পণ্যের কম দাম নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে কোম্পানিটি। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের শর্ত অনুসারে বছর দুয়েক আগে কারখানায় সংস্কার ও যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন করেছে তারা। তবে এখন পর্যন্ত এর তেমন কোনো সুফল পায়নি জাহিনটেক্স।

বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের পাশাপাশি গ্যাসের স্বল্পতার কারণে গত বছরের মে মাস থেকেই মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কারখানার অর্ধেক রোটর মেশিন বন্ধ রয়েছে। আর এতে কোম্পানিটির উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। যার প্রভাব পড়েছে কোম্পানির বিক্রি ও মুনাফায়। চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির রাজস্ব আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ কমে ২৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।

মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলসের কোম্পানি সচিব হারিস আলম বলেন, আশা করছি, এ বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে নতুন ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হবে। এতে আগামী হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে কোম্পানির ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছি।

ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও নন-অক্সিডাইজিং ফারনেস (এনওএফ) প্রকল্পেগু বিনিয়োগ উদ্দেশ্যে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ২০১৩ সালে শেয়ারবাজার থেকে প্রিমিয়ামসহ ২২০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করে এ্যাপোলো ইস্পাত। আইপিওর অর্থ হাতে পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পটি চালু করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি কোম্পানিটি। পাঁচ বছর পর এনওএফ প্রকল্প বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পরই মূলধন সংকটে বন্ধ হয়ে যায় কার্যক্রম। নগদ অর্থ সংকটের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামাল এইচআর কয়েল ও জিংকের দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরনো দুটি ইউনিটেও ঠিকমতো উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির রাজস্ব আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ শতাংশ কমে ১৫৮ কোটি ৮১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী লোকসান হয়েছে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেডের রাজস্ব আয় চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ২০৯ কোটি ২২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে রাজস্ব ছিল ৩১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির রাজস্ব কমেছে ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৮ দশমিক ৯০ শতাংশ কমে ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা হয়েছে।

আফতাব অটোমোবাইলসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা কাজী এহসানুল হক বলেন, চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানির সব খাতেই ব্যবসা ভালো হয়নি। এ কারণে উল্লেখযোগ্য হারে বিক্রি কমে গেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে মুনাফাও কমেছে।

পোলট্রি, মত্স্য ও গবাদিপশুর খাদ্য উৎপাদনকারী বিবিধ খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল ফিড মিলস লিমিটেডের রাজস্ব চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ কমে ৬৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৫৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মূলত চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) মূল খাদ্য উপাদানের দাম অস্থিতিশীল ছিল। এ সময় ব্রয়লার মুরগির দামও ছিল পড়তির দিকে। এতে কোম্পানির বিক্রি কমে গেছে। সর্বশেষ গতকাল স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে, যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোম্পানির তিনটি প্লান্টের মধ্যে একটি প্লান্ট চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে ৬০ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে। এতে কোম্পানির মুনাফায় প্রভাব পড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: